নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম গড়ার তাগিদ
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২১:৫৫
ঢাকা: দেশে বছরে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার খাবার অপচয় হলেও প্রায় চার কোটি মানুষ প্রতিদিন প্রয়োজনীয় ক্যালরিসম্পন্ন খাবার পাচ্ছে না বলে জানিয়েছে বিসেফ ফাউন্ডেশন। এজন্য খাদ্য সংগ্রহ, পরিবহন ও সংরক্ষণ ব্যবস্থার ধাপগুলো আধুনিকায়ন করতে হবে বলে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, খাদ্য অপচয় রোধে সরকারের সুস্পষ্ট রাজনৈতিক অঙ্গীকার থাকাও প্রয়োজন। একইসঙ্গে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে সম্মিলিত একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ার তাগিদও দিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলে (বিএআরসি) ‘নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য ভ্যালু চেইন উন্নয়নে সম্মিলিত প্রয়াস’ শীর্ষক জাতীয় সম্মেলনে বক্তাদের আলোচনায় এসব কথা উঠে আসে। বিসেফ ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল যৌথভাবে এই সম্মেলনের আয়োজন করে।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার প্রধান উৎস কৃষিতে সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপ ও যুগোপযোগী নীতিমালা প্রণয়নের ফলে উৎপাদনশীলতা বেড়েছে। বাংলাদেশের কৃষি এখন বাণিজ্যিক কৃষি, খোরপোষের কৃষি নয়। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা সরকারের জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জ। সরকারের একার প্রচেষ্টায় সবার জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা অনেক সময়ের ব্যাপার। ব্যক্তিগত সচেতনতা ও সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য। মুজিববর্ষের অঙ্গীকার হিসেবে সবার জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করতে সবাই একসঙ্গে কাজ করবেন— এটাই প্রত্যাশা।
মন্ত্রী আরও বলেন, সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপশি কাজ করতে হবে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ও বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ে। উৎপাদন থেকে শুরু করে প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ ও বিপণন এবং খাবার টেবিলে পরিবেশন পর্যন্ত সব ক্ষেত্রে নিরাপদ খাবার নিশ্চিত করতে বিধি-বিধানগুলো পুরোপুরিভাবে অনুসরণ করা দরকার। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে সরকারের উদ্যোগ বাস্তবায়নে স্বাস্থ্যবান ও কর্মক্ষম জনশক্তি গড়ে তুলতে পুষ্টিসমৃদ্ধ নিরাপদ খাবারের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সম্মেলনে বিসেফের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বছরে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার খাবার অপচয় হয়। অথচ প্রায় চার কোটি মানুষ প্রতিদিন প্রয়োজনীয় ক্যালরিসম্পন্ন খাবার পায় না। রাষ্ট্রের সব নাগরিকের অধিকার সমান। কেউ খেতে পাবে, আর কেউ খাবার নষ্ট করবে— এটা মানবতার দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য নয়।
খাদ্য অপচয় রোধে করণীয় সম্পর্কে সংগঠনটি জানায়, খাদ্য ও পুষ্টি শিক্ষার গুরুত্ব বাড়াতে হবে ও ব্যাপক সচেতনতা তৈরি করতে হবে। খাদ্য অপচয় রোধে ব্যক্তিগত দায়িত্বশীলতা অনুশীলনে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। খাদ্য সংগ্রহ, পরিবহন ও সংরক্ষণ ব্যবস্থার ধাপগুলো আধুনিকায়ন করতে হবে। খাদ্য অপচয় রোধে সরকারের সুস্পষ্ট রাজনৈতিক অঙ্গীকার থাকা প্রয়োজন। খাদ্য ব্যবস্থাপনা (হ্যান্ডলিং) আধুনিকায়নে উদ্যোক্তাদের রেয়াতি হারে ঋণ দিতে হবে।
বিসেফেরে পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়— সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, পরিবহন, বিপণন ও খাদ্য গ্রহণসহ প্রতিটি ধাপে খাদ্য অপচয় কমাতে উদ্যোগ নিতে হবে। কৃষির আধুনিকীরণ, যান্ত্রিকীকরণ, ঘাতসহিষ্ণু জাতের ব্যবহার বাড়ানো এবং বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি দ্রুত সম্প্রসারণ ও সহজলভ্য করতে হবে। খাদ্য বর্জ্য ও ক্ষয়ক্ষতি প্রতিরোধ ও পরিবেশ সংরক্ষণে ব্যবহারিক জ্ঞান, শিক্ষা, সচেতনতা ও প্রচার বাড়াতে হবে। খাদ্য উৎপাদনে কার্বন নিঃসরণ তথা পরিবেশের ওপর প্রভাব সম্পর্কে সব স্তরে সচেতনতা বাড়াতে হবে। খাদ্য অপচয়ের ধরণ, কারণ ও প্রতিকারের উপায় সম্পর্কে জাতীয়ভিত্তিক গবেষণা কার্যক্রম গ্রহণ ও গণমাধ্যমের সহায়তায় জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে। অবিলম্বে সরকারি উদ্যোগে খাদ্য অধিকার আইন প্রণয়ন করতে হবে, যেখানে খাদ্যকে অধিকার হিসেবে স্বীকৃতির পাশাপাশি ক্ষতিগুলোকে কমিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ থাকতে হবে।
সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএআরসি’র নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার। বিশেষ অতিথি ছিলেন ব্র্যাকের চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) মাহবুব কবীর, এসিআই এগ্রো বিজনেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এফ এইচ আনসারী।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিসেফ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন। দিনের শেষে অনুষ্ঠানের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ও বিসেফ ফাউন্ডেশনের সভাপতি আনোয়ার ফারুক।
দুই দিনব্যাপী সম্মেলনে বিভিন্ন কারিগরি অধিবেশনে শস্য, ফল, সবজি, মৎস্য, গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগির নিরাপদ, পুষ্টিকর খাদ্য ভ্যালু চেইন বিষয়ক বিস্তারিত আলোচনা হয়।
কৃষি কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক খাদ্য অপচয় নিরাপদ খাদ্য বিসেফ