জামিনের অপেক্ষা দীর্ঘ হচ্ছে
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ২০:২২
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন শুনানি শেষ হয়েছে। তবে জামিন হবে কি না সে সিদ্ধান্ত জানতে বিচারিক আদালতে নথি আসা পর্যন্ত তাকে অপেক্ষা করতে হবে।
রোববার দুপুরে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি শেষে মামলার নথি আসার পরে আদেশ দেবেন মর্মে রেখে দেন।
আদালতে খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী জামিন প্রার্থনা করেন বলেন, ‘মামলায় পাঁচ বছরের যে সাজা দেওয়া হয়েছে, তা অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত সাজা। আদালতের রীতি এবং ক্ষমতা আছে সংক্ষিপ্ত সাজায় জামিন দেওয়ার। তাছাড়া তিনি একজন বয়স্ক নারী। তাই আমরা তার জামিন চাচ্ছি।’
এ সময় দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, ‘সংক্ষিপ্ত সাজায় জামিন পেতে পারে এটা কোনো যুক্তি হতে পারে না। খালেদা জিয়া একজন বয়স্ক নারী এ বিষয়টির সঙ্গে আমাদের কোনো দ্বিমত নেই। তবে জামিন আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি অসুস্থ এবং শারীরিক বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন। কিন্তু কোনো মেডিকেল সার্টিফিকেট বা কাগজপত্র আবেদনের সঙ্গে দাখিল করেননি। ফলে তিনি জামিন পেতে পারেন না। বরং উচ্চ আদালত এ মামলার বিচারিক আদালতের যে নথি তলব করেছে তা আসার পর আদেশ দেওয়া যেতে পারে।’
রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও খালেদা জিয়ার জামিনের বিরোধিতা করেন।
‘মামলাটি রকেটের গতিতে চলছে’ আত্মপক্ষ সমর্থনে খালেদা জিয়ার এমন বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতে বলেন, ‘এ মামলাটি ২০০৮ সালের মামলা। বিচারিক আদালতের ২৩৭ কার্যদিবসে তিনি ১০৯ বার নানা অজুহাতে সময় নিয়েছেন। তাছাড়া এ মামলাটি বাতিল চেয়ে, অভিযোগ থেকে অব্যাহতি ও পরে আদালত পরিবর্তন চেয়ে বা বিচারকের প্রতি অনাস্থা জানানোসহ নানা কারণে ২৬ বার উচ্চ আদালতে এসেছেন। মোট কথা নয় বছরের মতো সময় লেগেছে মামলাটি শেষ হতে। ফলে আজকে যদি জামিন দিয়ে দেন, তাহলে বলা যাচ্ছে না আদৌ এর আপিল শুনানি হবে কি না।’
দ্রুততম সময়ে আপিল শুনানি শুরু করার তাগিদ দিয়ে শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘অত্যাধুনিক প্রযুক্তি রয়েছে। আপিল শুনানির জন্য এক মাসের মধ্যে পেপারবুক প্রস্তুত হতে পারে। যেমন বিডিআর বিদ্রোহ মামলার আপিলের ক্ষেত্রে প্রস্তুত করা হয়েছিল। তাই আমার আবেদন হচ্ছে, তাকে জামিন না দিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আপিল শুনানি শুরু করা।’
অ্যাটর্নি জেনারেল সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ও ভারতের লালু প্রসাদের উদাহরণ টানলে আদালত এ সময় বলেন, এসব উদাহরণ এখানে দেবেন না। এগুলো টকশোর বিষয় হতে পারে। কে গাছ লাগাবে, কে খাবে বা কে কি করবে- এখানে আইনি পয়েন্টে বলুন।
পরে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ওনি (খালেদা জিয়া) জেলে আছেন, উনাকে সেবিকা দেওয়া হয়েছে। আদালত চাইলে আমরা এক মাসের মধ্যে শেষ করে ফেলতে পারব।
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত এ বিষয়ে আদেশ দিতে প্রায় ১০ মিনিট সময় নেন। এ সময় পুরো আদালত কক্ষ জুড়ে পিনপতন নিরবতা ছিল। ১০ মিনিট পরে আদালত নথি পাওয়ার পরে আদেশ দেবেন বলে এ মামলার সমাপ্তি টানেন বিচারক।
জামিন শুনানিতে খালেদা জিয়ার পক্ষে প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক উল হক, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এএফএম হাসান আরিফ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, নিতায় রায় চৌধুরী, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন আর বিএনপি নেতাদের মধ্যে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. মঈন খান ও মির্জা আব্বাসসহ শীর্ষ স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
তবে আদালতে স্থান সংকুলান না হওয়ায় অনেক আইনজীবীকে আদালত কক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে হয়।
সারাবাংলা/এজেডকে/জেডএফ
‘জামিন দরকার নেই, একমাসেই আপিল নিষ্পত্তি সম্ভব’
শুনানি শেষ, নথি পেলে জামিন প্রশ্নে আদেশ