এলো রসুনের বিকল্প ‘বিডি নিরা’
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৪:২৪
শেকৃবি: দেশের বাজারে যখন কোনো একটি জিনিসের দাম বাড়তে থাকে, তখন স্বভাবতই আমরা বিকল্প কিছু খুঁজতে থাকি। সবশেষ এর উদাহরণ দেখা গেছে পেঁয়াজের বেলায়। যখন দেশের বাজারে পেঁয়াজের অস্বাভাবিক দাম ছিল তখন চাইভ নামে একটি পাতার কথা জানা যায়। যেটি ব্যবহার করা যায় পেঁয়াজের বিকল্প হিসেবে। যার স্বাদ প্রায় পেঁয়াজের মতোই।
এবার বাংলাদেশের কৃষি গবেষক অধ্যাপক আবুল ফায়েজ মো. জামাল উদ্দিন উদ্ভাবন করেছেন বিকল্প আরেকটি পাতা। যেটি অনায়াসে ব্যবহৃত হতে পারে রসুনের বিকল্প হিসেবে। যার স্বাদ রসুনের মতোই, আর সহজে চাষও করা যায়।
বাংলাদেশের পরিবেশে চাষযোগ্য নতুন এই ফসলের নাম দেওয়া হয়েছে SAU Garlic Chive 1 বা ‘বিডি নিরা’।
শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবুল ফায়েজ মো. জামাল উদ্দিন জানালেন, এটি মূলত জাপানি ফসল। এবারই প্রথম সেটির বাংলাদেশে চাসযোগ্য জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। যেটি রসুনের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।
নতুন উদ্ভাবন সম্পর্কে এই শিক্ষক সারাবাংলাকে বলেন, ‘জাপানে চাষ হওয়া নিরাকে আমরা এদেশের পরিবেশে চাষযোগ্য করে তুলতে পেরেছি। বিডি নিরার পাতা একটু মোটা। এর পাতার স্বাদ অনেকটাই রসুনের মত। একে আমরা রসুনের সরাসরি বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতে পারি।’
চাষাবাদ পদ্ধতি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিডি নিরা চাষে সাধারণ রসুন চেয়ে বেশি লাভ হবে। ফসলটি মূলত বাল্ব (কন্দ) থেকে বংশবৃদ্ধি করে। যদি বাল্বটিকে লাগিয়ে রাখা যায় তবে ফসলটি ৩০-৩৫ দিনের মাঝেই ফলন দেবে। পরবর্তিতে ১৫ দিন পরপর শাক বা পাতা সংগ্রহ করা যাবে। তাই একটি বাল্ব থেকেই বছরে ১২ থেকে ১৩ বার ফসল পাওয়া সম্ভব। প্রতি গাছ থেকে ১৫০-২০০ গ্রাম শাক পাওয়া যাবে। একবার হারভেস্ট (চাষ) করার পর পুনরায় ওখান থেকেই ফসল হবে এবং বাল্বের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে। এতে কৃষক একসঙ্গে বাল্বও পাচ্ছে আবার ফসলও পাচ্ছে।’
পুষ্টিমান সম্পর্কে আবুল ফায়েজ মো. জামাল উদ্দিন জানান, ‘বিডি নিরা’ হৃদরোগের আশংকা কমিয়ে দেবে। সেইসঙ্গে দেহের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, ডায়াবেটিসের জন্যও উপকারি। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন-সি, ক্যারোটিন ও ক্যালসিয়াম। এটি প্রোটিন ও ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার।
ফসলটিকে মাঠ পর্যায়ে পৌঁছানোর বিষয়ে পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘90 Minute Schooling” প্রোগ্রামের মাধ্যমে আমরা কৃষকের কাছে বিনামূল্যে এর প্রোডাকশন টেকনলজিটা ছড়িয়ে দিচ্ছি। আশা করছি আগামী ২-১ বছরের মধ্যেই এটি মাঠ পর্যায়ে পৌছে দিতে সক্ষম হব।’
দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে মানুষ পুষ্টিমান ঠিক রেখে বিকল্প ফসলের দিকে ঝুঁকতে চাইবে উল্লেখ করে এই গবেষক বলেন, ‘বিডি নিরার উৎপাদন খরচ কম, পুষ্টিমানও বেশি। তাই রসুনের পাশাপাশি বিডি নিরা বাজারে থাকলে মানুষ বিডি নিরাকেই বেছে নিবে বলে আমার বিশ্বাস।’
অধ্যাপক আবুল ফায়েজ মো. জামাল উদ্দিন বিডি নিরা রসুনের বিকল্প ফসল শেকৃবি