Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্থলবন্দরে দুর্নীতির ১৪টি উৎস চিহ্নিত করেছে দুদক


২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২২:০২

ঢাকা: নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন স্থলবন্দরের ১৪টি দুর্নীতির উৎস চিহ্নিত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একইসঙ্গে দুর্নীতি প্রতিরোধে ২৮টি সুপারিশও করেছে কমিশন।

বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সচিবালয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর কাছে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার ড. মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক।

প্রতিবেদন দাখিলের পর সাংবাদিকদের দুদক কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খান বলেন, ‘দুর্নীতিবাজ ধরার চেয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধ করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। আমরা ইতোমধ্যে ১৬টি মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছি। প্রতিটি মন্ত্রণালয় এই প্রতিবেদনগুলো সাদরে গ্রহণ করেছে। এটি শুধু অনুসন্ধানী প্রতিবেদন নয়, এটি একটি দলিল। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীও আমাদের প্রতিবেদনটি সাদরে গ্রহণ করেছেন। আমাদের বিশ্বাস এই প্রতিবেদনটি আমলে নিয়ে তারা যদি আমাদের সুপারিশগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করেন, তাহলে বাংলাদেশ থেকে দুর্নীতি দমন করা সম্ভব।‘

জবাবে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা দুদকের এই প্রতিবেদনটি সাদরে গ্রহণ করেছি। প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে কাজ করছি। দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়া আমাদের একটি লক্ষ্য। তবে এটি একটি চ্যালেঞ্জও বটে। দুদকের প্রতিবেদনের সঙ্গে দ্বিমত করবো না। কিছু কিছু ত্রুটি আছে তা স্বীকার করছি। স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ এককভাবে কাজ করে না। সেখানে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ, এনবিআর কর্তৃপক্ষ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজিবি কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এবং সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সমন্বয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ কাজ করে। দুর্নীতি বন্ধে আমরা তৎপর। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রতিটি বন্দরকে অটোমেশনের আওতায় আনা হবে ‘

বিজ্ঞাপন

দুদকের সুপারিশ করা স্থল বন্দরে দুর্নীতির ১৪টি উৎসগুলোর মধ্যে আছে-

অধিকাংশ স্থলবন্দরের বিদ্যমান নিরাপত্তা ব্যবস্থা অপ্রতুল। অপ্রতুল নিরাপত্তা ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে বন্দর ও কাস্টমসের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহযোগিতায় প্রায় বিনা শুল্কে আমদানি করা মালামাল বের করে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়।

স্থলবন্দরগুলোর কেনাকাটায় সর্বদা সরকারি ক্রয় আইন ও বিধির যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ায় স্থানীয় ব্যক্তিরা নানাভাবে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে থাকেন। ক্ষেত্র বিশেষে জালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে দরপত্র প্রক্রিয়া অংশগ্রহণ করে থাকেন, যার ফলে দুর্নীতি ও আত্মসাতের নানা অপরাধ সংঘটিত হয়।

আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে লোকবল নিয়োগ ও বেতনাদি প্রদানের ক্ষেত্রে যথাযথ তদারকি ও স্বচ্ছতা না থাকায় কর্মী উপস্থিত বা অনুপস্থিত সকল শ্রমিকের নামে বিল উত্তোলন করার অভিযোগ রয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে একই স্টেশনে কর্মরত থাকায় বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে বন্দর কেন্দ্রিক সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের এক ধরনের সখ্যতা গড়ে ওঠার অভিযোগ পাওয়া যায়। এর ফলে কর্তৃপক্ষের পক্ষে বন্দর কেন্দ্রিক দুর্নীতিমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ করা অনেকটা কঠিন হয়ে পড়ে।

মালামাল হ্যান্ডলিংয়ের জন্য ঠিকাদার নিয়োগের ক্ষেত্রে সবক্ষেত্রে সরকারি ক্রয় আইন ও বিধিমালার যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ায় কাজ পাওয়ার অযোগ্য ঠিকাদাররা দুর্নীতিমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে কাজ সম্পাদনের চেষ্টা করে থাকে।

কাস্টমস কর্মকর্তাদের দ্রুত পণ্য ছাড়করণের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় করা মুখ্য উদ্দেশ্য। কিন্তু পণ্য ছাড়করণের ক্ষেত্রে দেশের ট্রেড পলিসিতে বর্ণিত উচ্চ ট্যারিফ-নিম্ন ট্যারিফ, কোটা সিস্টেম, বিভিন্ন প্রণোদনা, ফ্রি-ইমপোর্ট, আমদানি নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকাসহ পণ্য আমদানি-রফতানির অন্যান্য ডকুমেন্টস সঠিকভাবে এবং নির্ধারিত সময়ে যথাযথ যাচাই না করে পণ্য ছাড়করণের মাধ্যমে দুর্নীতির পথ প্রশস্ত করা হয়।

বিজ্ঞাপন

বন্দরের কাস্টমস বিভাগকে বলা হয় গেটকিপার অব দ্য ন্যাশন। কাস্টমস বিভাগকেই দেশের বাণিজ্য নীতি বাস্তবায়ন, রফতানি উন্নয়ন, নিষিদ্ধ এবং ক্ষতিকর পণ্যের ছাড় করতে না দেওয়াসহ পণ্য ছাড়করণে মূখ্য দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের মধ্যে পারস্পারিক সমন্বয়ের অভাবেও কোনো কোনো সময় দুর্নীতি হয়।

আমদানিকারক ও কাস্টমস বিভাগসূত্রে প্রায়শই বন্দরের শেড বা গুদাম থেকে মালামাল চুরির অভিযোগ পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে বন্দরের একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী যোগসাজশে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক এ সকল চুরির ঘটনা ঘটিয়ে থাকে মর্মে জনশ্রুতি রয়েছে।

স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রাধীন বিভিন্ন বড় কাজকে ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত কোটেশনের মাধ্যমে কাজ সম্পাদনের অভিযোগ রয়েছে। এতে প্রতিযোগিতামূলক দরের পরিবর্তে আর্থিক সুবিধা গ্রহণের মাধ্যমে কার্যাদেশ প্রদানের প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়েছে।

১০. স্থলবন্দরগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগ বদলি ও পদায়ন এবং বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য কর্মকর্তা নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রায় আঞ্চলিকতা, এলাকাপ্রীতি ও স্বজনপ্রীতির আশ্রয় গ্রহণ করে পছন্দ অনুযায়ী ব্যক্তিকে অনৈতিক সুবিধা প্রদানের অভিযোগ রয়েছে।

এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন বা সিবিএর পদাধিকারী কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অর্পিত দায়িত্ব পালন না করে কমিশন বাণিজ্য পরিচালনা ও চোরাই সিন্ডিকেটের সঙ্গে আঁতাত করে অযোগ্য ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দিয়ে মোটা অঙ্কের উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে।

স্থলবন্দরগুলোর বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে ঘুষ দাবি, হয়রানি, পেশাদারিত্বের অভাব এবং বন্দরের ভেতরে নানা অসামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে।

বিভিন্ন স্থলবন্দরের অফিস ভবন, সেড ইয়ার্ড ও ওয়েব্রিজ স্কেলে বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা স্থানীয়ভাবে টেন্ডুল নামীয় ভাড়া করা বহিরাগতদের দিয়ে দাফতরিক কাজ করিয়ে থাকেন। যা সম্পূর্ণ অবৈধ এবং এসকল টেন্ডুলদের মাধ্যমে অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও আমদানিকারকদের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণ করে থাকেন।

একই ব্যক্তিকে বারবার বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালনা বোর্ডের খণ্ডকালীন সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এতে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির নানাবিধ অনিয়ম সংগঠিত হওয়ার ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়।

দুদক স্থল বন্দর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর