রাবিতে অনশন, অসুস্থ ৩০ শিক্ষার্থী
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২১:০১
বিভাগের নাম পরিবর্তনের দাবিতে ‘আমরণ অনশন’ চালিয়ে চাচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা তাদের বিভাগের নাম পরিবর্তন করে ‘ফলিত পরিসংখ্যান’ রাখার দাবিতে বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের সামনে অনশনে বসে। আজ বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা পর্যন্ত অনশনরত কমপক্ষে ৩০ জন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদের রাবির মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ৪১ ও ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।
অসুস্থ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আছেন তপশ্রী শারনাল, সোহাগ, নিশি খাতুন, মোবাশশির উল্লাহ, আবির হাসান, আয়নাল, সাগর নাঈম, ফারজানা ইয়াসমিন লিজা, অর্পিতা পূজা ও শুলেখা খাতুন। এদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
এদিকে, বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদ্বয়, প্রক্টর, বিভাগীয় সভাপতি এবং অন্য শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙানোর চেষ্টা করলেও শিক্ষার্থীরা তাতে সম্মত হননি।
অনশনকারীদের উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান বলেন, ‘কোনো বিভাগ নতুন শুরু করার একটা মাধ্যম রয়েছে। তোমাদের জন্য কোনটা মঙ্গলময় সেটিকে আমি বিবেচনায় নেবো। সেজন্য সকল বিভাগীয় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও প্রশাসনের এবং প্রশাসনের বাইরেও যারা শিক্ষক আছেন, তাদের নিয়ে আগামী ২ মার্চ সিনেট ভবনে একটা মিটিং করবো। তোমাদের বিষয়কোডের ব্যাপারে সিন্ডিকেট সভায় আলোচনা হয়েছে। সেটা খুব সম্ভবত কার্যকর হবে। কিন্তু বিভাগের নাম পরিবর্তনের ব্যাপারে আমি নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারছিনা। আমরা দুপক্ষের আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে আসতে পারি।’
ওই বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম মণ্ডল বলেন, ‘ভিসি স্যার ইতিমধ্যে দেখা করে গেছেন। শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙানোর চেষ্টা করেন। আগামী ২ মার্চ সিনেট ভবনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাথে তাদের দাবির সমাধান করার আহবান করেন। প্রশাসনের নির্দেশ ছাড়া আমরা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারবো না।’
শিক্ষার্থীরা জানান,ভিসি স্যার বলেছেন বিভাগের সকল শিক্ষার্থী, শিক্ষকের সাথে মার্চের ২ তারিখ বসবেন, তাহলে কি উনার সন্তানরা সপ্তাহ খানেক না খেয়ে থাকবো?
অনশনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, গতকাল থেকে আমরা না খেয়ে আছি। কয়েকজনকে মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে। রাতে প্রক্টর এবং সহকারী প্রক্টর ছিলেন ,কিন্তু বিভাগের কোনো শিক্ষক ছিলেন না। আমরা কি তাদের সন্তান সমতুল্য হতে পারিনি?শিক্ষকদের পরিবার আছে, আমাদের পরিবার নেই??
শিক্ষার্থীরা জানান, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন তাঁরা।
শিক্ষার্থীদের অনশনে এক শিক্ষকের একাত্মতা; অন্য শিক্ষকের হুমকি!
এদিকে, বিভাগের নাম পরিবর্তনের দাবিতে অনশনরত শিক্ষার্থীদের সাথে এক শিক্ষক সংহতি প্রকাশ করায় আরেক শিক্ষক হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় শিক্ষার্থীদের অনশন চলাকালে অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ফরিদ খান একাত্মতা প্রকাশ করেন। এসময় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তারেক নূর অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং পা ভেঙ্গে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন বলে জানায় প্রত্যক্ষদর্শীরা।
হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদ খান বলেন, শিক্ষার্থীদের অনশনের ব্যাপারটি জেনে আমি তাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করি। এমন সময় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তারেক নূর আমাকে ফোন দিয়ে উঠে যেতে বলে। আমি এরপরেও সেখানে অবস্থান করলে তিনি আমার দিকে মারার জন্য তেড়ে আসেন। এসময় তিনি আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।
হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক তারেক নূর বলেন, আমার এ বিষয়ে কোন মন্তব্য নেই। লাঞ্ছনার বিষয়ে জানতে চাইলেও তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের অনশন চলাকালীন আমরা পাশেই ছিলাম। হটাৎ করে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তারেক নূর তেড়ে যান অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফরিদ খানের দিকে। একজন শিক্ষক হিসেবে তাঁর এমন আচরণ করা উচিৎ হয়নি।
প্রসঙ্গত, পিএসসি’তে বিষয় কোড অন্তর্ভুক্তের দাবি জানিয়ে গত ১৯ জানুয়ারি থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তবে বর্তমানে বিভাগের নাম পরিবর্তন করে ফলিত পরিসংখ্যান করার দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেছে তারা।