দিলু রোডের ভবনে ছিল না অগ্নিনির্বাপণ, লেলিহান শিখা বাড়ায় গোডাউন
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:৩৮
ঢাকা: রাজধানীর মগবাজারের দিলু রোডের একটি আবাসিক ভবনে আগুন লাগার ঘটনায় শিশুসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। অগ্নিদগ্ধ হয়ে হাসাপাতালে ভর্তি আছে আরও ছয়জন।
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) ভোর রাতে ভবনের নিচতলার বিদ্যুতের সার্কিট বোর্ড থেকে ওই আগুনের সূত্রপাত ঘটে। ধীরে ধীরে তা ছড়িয়ে পড়ে নিচতলার গ্যারেজে (কার পার্কিং) রাখা বাসিন্দাদের ব্যক্তিগত কয়েকটি গাড়িতে। একই ফ্লোরে থাকা বায়িং হাউজের গোডাউনেও ছড়িয়ে পড়ে আগুনের লেলিহান শিখা। ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে পুরো ভবন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ভবনটিতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা না থাকার কারণেই মারাত্মক এই দুর্ঘটনা ঘটে। এছাড়া সিঁড়িগুলো সরু হওয়ায় বাসিন্দাদের নেমে আসতে বেগ পোহাতে হয়েছে। আর আগুনের মাত্রা বাড়িয়ে ভবনের নিচ তলায় থাকা বায়িং হাউজের গোডাউনের মালপত্র।
মগবাজারের দিলু রোডের ইউনাইটেড ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের গলির ৪৫/এ নম্বর বাসাটিতে বৃহস্পতিবার ভোর রাতে আগুন লাগে।
ওই বাসার নিরাপত্তাকর্মী লুৎফর রহমান নিচতলার একটি কক্ষে ঘুমাচ্ছিলেন। শব্দ ও আগুনের লেলিহানে ঘুম ভাঙে তার। পাশের অপর একটি কক্ষে বায়িং হাউজের গোডাউনে ঘুমাচ্ছিলেন আব্দুল কাদের লিটন। নিরাপত্তাকর্মী লুৎফর তাকে ডেকেছিলেন। জোরে দরজায় কড়াও নেড়েছিলেন। কিন্তু ঘুম ভাঙেনি কাদেরের। অগ্নিদদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় তার।
আগুনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া নিরাপত্তা কর্মী লুৎফর সারাবাংলাকে বলেন, ‘রাত চারটার দিকে আগুন লাগে। পাশের রুমের কাদেরকে ডেকে তোলার চেষ্টা করি। পরে টিকতে না পেরে বাইরে এসে সবাইকে ডাকতে থাকি। বিদ্যুতের মেইন বোর্ড থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। ধীরে ধীরে তা নিচতলায় রাখা গাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। নিচতলায় থাকা বায়িং হাউজের গোডাউনেও আগুন লাগে। এতে সুতা, কাপড়সহ তাদের মালপত্র পুড়ে গেছে। পার্কিংয়ে থাকা পাঁচটি গাড়ি ও দুটি মোটরসাইকেল সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে।’
ভবনটির দুতলায় ক্লাসিক ফ্যাশন ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি বায়িং হাউজ ছিল। বৃহস্পতিবার ভবনের বাইরে থেকে দুতলার ওই ফ্লোরটিতে অক্ষত কিছু উৎপাদন সামগ্রী দেখা গেছে। আবাসিক ওই ভবনে বায়িং হাউজ থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন ওই হাউজের এক কর্মকর্তা সুমন। তবে নতুন কর্মী হওয়ায় বিস্তারিত কিছু জানাতে পারেননি তিনি।
ছয়তলার ওই বাসাটিতে সাতটি পরিবার থাকতো। বৃহস্পতিবার বিকেলে ওই ভবনে গিয়ে যায় উৎসুক জনতার ভিড়। গত রাতের মর্মান্তিক ঘটনায় হতবাক তারা। ভবনে ভাড়া থাকতেন এমন অনেককে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র নিয়ে বের হতে দেখা গেছে।
তবে তারা গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। আহত বা নিহতদের স্বজনকে ভবনের আশপাশে পাওয়া যায়নি। দেশের বাইরে থাকায় ভবনের মালিকের সঙ্গেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ভবনটি থেকে দুই শিশুসহ এক পিতা লাফ দিয়েছিলেন। তিনি মারাত্মক অসুস্থ হন। এছাড়াও ভবন থেকে আরও অনেকেই লাফিয়ে নামতে গিয়ে জখম হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ইব্রাহিম সবুজ সারাবাংলাকে বলেন, আগুন লাগার কিছুক্ষণ পরই আমি এখানে চলে আসি। দেখি অনেকেই লাফিয়ে নামছে। তাদের অনেকই আহত হয়েছে। ভবনটির নিচ তলায় পার্কিং। দোতলায় বায়িং হাউজ। তিন তলার উপরের ফ্ল্যাটগুলো আবাসিক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল।
তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিস আসার আগেই এসেছি। দেখি দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। কেউ কেউ লাফ দিচ্ছে। পুলিশকে বলি, মই দিয়ে আটকে পড়াদের উদ্ধার করতে। তারা ফায়ার সার্ভিসের জন্যই অপেক্ষা করতে থাকে। ভবনটি ফায়ার এক্সটিনগুইশার নেই, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই, সিঁড়িগুলো খুবই সরু। এক কথায় ভবনটি নির্মাণের সময় বিল্ডিং কোড মানা হয়নি।
আগুনে মারা যাওয়া শিশুসহ দুজনের লাশ শনাক্ত করা গেছে। শিশুটির নাম রুশদি। বাবা শহিদুল কিরমানি রনি (৪০) ও মা জান্নাতুল ফেরদৌস (৩৫) এর সঙ্গে ভবনটির তিনতলায় বাস করত সে।
আগুনের ঘটনায় দগ্ধ হয়ে রুশদির বাবা-মাও হাসপাতালে ভর্তি আছেন। নিহত আরেকজন হলেন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার পশ্চিম নন্দনপুর গ্রামের মোহাম্মদ উল্লাহর ছেলে আব্দুল কাদের লিটন। ভবনের নিচতলার একটি কক্ষে থাকতেন তিনি। তবে অপর একজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আহতরা ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে ভর্তি আছেন। এরা হলেন সুমাইয়া আক্তার (৩২), সুমাইয়ার স্বামী মনির হোসেন, তার ছেলে মাহাদী (৯) ও মাহমুদুল হাসান (৯ মাস)।