Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পাপিয়ার ‘প্রতারণা’, মুখ খুললেন ‘নির্যাতিত’ ব্যবসায়ী


২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৩:০৮

ঢাকা: পাপিয়া-মফিজুর দম্পতির প্রতারণার শিকার ব্যবসায়ী, সাধারণ মানুষ ও অনৈতিক কাজে বাধ্য হওয়া মেয়েরা ‘মুখ খুলতে’ শুরু করেছে। র‌্যাবের হাতে গ্রেফতারের পর পাপিয়া দম্পতির প্রতারণার শিকার মেয়েরা পাপিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন।  এরইমধ্যে বিমানবন্দর থানায় পাপিয়া দম্পতির বিরুদ্ধে মামলা করতে গিয়েছিলেন এক ব্যবসায়ী।  সেখানে পাপিয়ার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন। তবে মামলাটি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে হস্তান্তরের কারণে বিমানবন্দর থানা পুলিশ এ অভিযোগের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেননি!

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিএম ফরমান আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘টুকু নামে এক ব্যক্তি পাপিয়া ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে থানায় মামলা করতে এসেছিলেন। ঘটনা শোনার পর পাপিয়া ও তার স্বামীকে মুখোমুখি করা হয়েছিল। তারা প্রতারণার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। মামলা করলে ঘটনা যেখানে ঘটেছে সেই নরসিংদী এলাকায় মামলা করতে হবে, এ কথা বলে ওই ব্যক্তিকে বিদায় দিয়েছি। এখন মামলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর হয়েছে। পুরো বিষয়টি ডিবি দেখভাল করবে।’

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘পাপিয়ার বিরুদ্ধে যেকেনো ভুক্তভোগী অভিযোগ করতে পারেন।  অভিযোগ পেলে সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখে জড়িত প্রমাণ পেলে পাপিয়া দম্পতির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পাপিয়া দম্পতির প্রতারণার শিকার ওই ব্যবসায়ী তপন তালুকদার টুকু। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘পাঁচ মাস আগে আমি ঢাকা থেকে নরসিংদীতে এক অনুষ্ঠানে বন্ধুর বাড়িতে যাই। সেখানে পাপিয়ার সঙ্গে দেখা হয়। অনুষ্ঠান শেষে পাপিয়া আমাকে তার বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে কম বয়সী ৪ জন সুন্দরী তরুণীকে তারা আমার সামনে নিয়ে আসে।  এরপর জোর করে তাদের সঙ্গে আমার অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে।’


তিনি আরও বলেন, ‘এরপর আমি চলে আসতে চাইলে পাপিয়ার স্বামী মফিজুর বলেন, এখন তো যাওয়া যাবে না। আপনি তো আমার মেয়েদের সঙ্গে খারাপ কাজ করেছেন। এখন তারা আপনার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করবে। এ কথা বলে তারা কোন পুলিশকে যেন ফোন দিলেন। আসলে তারা পুলিশ ছিলো না, তাদেরই সাজানো কোনো ব্যক্তি ছিলো।  ফোনের ওপাশ থেকে বলা হলো, আমি আসতেছি। তবে পুলিশের কেউ আসেননি।’

টুকু বলেন, ‘পাপিয়া ও তার স্বামী আমাকে হুমকি দিয়ে বলেন, এখান থেকে পার পেতে হলে, আপনাকে ১০ লাখ টাকা দিতে হবে। নইলে এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল করে দেবো। ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেবো। আপনার নামে মানবপাচারের মামলা দেওয়া হবে।  পরে আমাকে মারধর করে তারা। মান-সম্মানের ভয়ে আমি তাৎক্ষণিকভাবে ২০ হাজার টাকা দেওয়ার পরও তাতে মন গলেনি। এরপর আমাকে বাড়ির ছাদে তিনদিন আটকে রাখে। একপর্যায়ে ব্যাংকের মাধ্যমে দুই লাখ ৬০ হাজার টাকা দেওয়ার পর তারা আামকে ছেড়ে দেয়।’

পাপিয়ার গ্রেফতারের খবর শুনে আমি বিমানবন্দর থানায় যাই, ওসিকে ঘটনা খুলে বলি জানিয়ে এই ব্যবসায়ী বলেন, “পরে ওসি পাপিয়াকে থানা হাজত থেকে তার রুমে ডেকে আনেন। এ সময় পাপিয়াকে সালাম দিয়ে আমার ওপর নির্যাতনের ঘটনা বলি। তখন সে হাত জোর করে আমার কাছে ক্ষমা চায়।  থানার ওসির সামনে বলেন, ‘তার ভুল হয়ে গেছে।  একজনের নির্দেশে তিনি ওটা করেছিলেন। আমার টাকাটা ফেরত দেবে।  আমাকে বলেন, তুমি আইনের আশ্রয় নিও না’।”

যেভাবে বাড়ি-গাড়ি-টাকার মালিক পাপিয়া-মফিজুর দম্পতি

‘এরপরও টাকা না পাওয়ায় বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে ফের থানায় গিয়ে ওসিকে বলি, আমার টাকা না দিলে আমি পাপিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করবো।  তখন ওসি বলেন, আপনি মামলা দিলে নরসিংদীতে দিতে হবে। কারণ আপনার সঙ্গে ঘটনাটি সেখানে ঘটেছে। পরে ওসির রুমে পাপিয়ার স্বামী সুমনকে ডাকা হলে সুমন হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আপনার টাকা দেবো না, যা করার করেন। আমাদের নামে আপনি কী মামলা দেবেন? বড়জোর প্রতারণার মামলা দেবেন। এ মামলায় দুই মাসের বেশি জেল হবে না। অস্ত্র মামলা খেয়েছি।  তাতেই ভয় পাচ্ছি না। আর প্রতারণার মামলায় কী হবে’?”, বলেন প্রতারিত এই ব্যবসায়ী।

টুকু আরও বলেন, ‘প্রয়োজনে আমি আদালতের আশ্রয় নেবো। পাপিয়া ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করবো। ওদের শাস্তি চাই। ওরা আমার মতো অনেক মানুষের সর্বনাশ করেছে। সবাই মুখ খোলার অপেক্ষায় আছে।’

উল্লেখ্য, গত ২২ ফেব্রুয়ারি অর্থপাচার, বিদেশি জাল মুদ্রা সংরক্ষণ ও মাদক ব্যবসার অভিযোগে র‌্যাব-১ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আটক করে পাপিয়া, তার স্বামী ও দুই সহযোগীকে। পরে তাদের নিয়ে ফার্মগেটের বাসায় অভিযান চালিয়ে নগদ ৫৮ লাখ টাকা, বিদেশি মুদ্রা ও পিস্তল, গুলি, মদ উদ্ধার করে র‌্যাব। এ ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় একটি এবং শেরেবাংলা নগর থানায় দুটি মামলা করে র‌্যাব। তিন মামলায় পাপিয়াসহ চারজন ১৫ দিনের রিমান্ডে রয়েছে। মামলাটি এখন ডিবিতে রয়েছে।  এছাড়া পাপিয়াসহ চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছে র‌্যাব।

পাপিয়া পাপিয়া-মফিজুর পাপিয়া-মফিজুর দম্পতি প্রতারণা

বিজ্ঞাপন

খেজুর আমদানিতে শুল্ক কমলো
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২১:০৮

আরো

সম্পর্কিত খবর