Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি বোমা বিস্ফোরণ, কীভাবে; জানে না পুলিশ!


২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৮:১৭

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে ট্রাফিক পুলিশ বক্সে বিস্ফোরণের ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে নগর পুলিশ। বক্স থেকে উদ্ধার করা আলামত পর্যালোচনা করে সেখানে স্থানীয়ভাবে তৈরি ‘বোমার’ বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে বলে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। তবে কি পদ্ধতিতে এবং কারা এই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে সে বিষয়ে এখনো অন্ধকারে আছে পুলিশ। কর্মকর্তারা বলছেন, চট্টগ্রামের এই বিস্ফোরণের সঙ্গে গত বছর ঢাকায় পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলার ‘কিছুটা’ মিল আছে।

নগরীর ষোলশহর দুই নম্বর গেইট এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ বক্সে বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্ত করছে ঢাকা থেকে আসা অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের ১১ সদস্যের দল। স্থানীয়ভাবে সিএমপি, নগর গোয়েন্দা পুলিশ, কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন, সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটও তদন্ত করছে।

চট্টগ্রামে পুলিশ বক্সে বিস্ফোরণ, সন্দেহ নাশকতার

প্রাথমিক তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঘটনাস্থলে সার্কিট বা ডিভাইস কিছুই তেমন পাওয়া যায়নি। সেজন্য নাশকতার উদ্দেশ্যে এই বিস্ফোরণের বিষয়ে আমরা মোটামুটি নিশ্চিত হলেও কি পদ্ধতিতে এই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে সেটা নিশ্চিত হতে পারিনি। পুরো বিষয় ক্লিয়ার হতে আরও দুএকদিন লাগবে। তখন বলতে পারব, কোন ম্যাকানিজমটা ব্যবহার হয়েছে।’

নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আমেনা বেগম জানান, জব্দ আলামত পর্যালোচনায় দেখা গেছে- নাশকতার জন্য ইম্প্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস বা নিজস্ব উদ্ভাবনী কৌশল ও প্রযুক্তি প্রয়োগ করে তৈরি বোমা ব্যবহার করা হয়েছে। এটি স্থানীয়ভাবে তৈরি করা। ঘটনাস্থলে জিআই পাইপ ও মার্বেল জাতীয় পদার্থের টুকরা পাওয়া গেছে।

দূর নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতি ব্যবহার করে, নাকি বক্সের ভেতরে আগে থেকে রাখা বোমাটি অন্য কোনো সার্কিটের সঙ্গে সংযুক্ত করে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে সে বিষয়ে নগর পুলিশের কোনো কর্মকর্তাই নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি।

নাশকতার বিষয়টি নিশ্চিত হলেও এর সঙ্গে কোনো জঙ্গিগোষ্ঠী বা অন্য কোনো মহল জড়িত কি না তা-ও নিশ্চিত করে বলতে পারছে না পুলিশ। আমেনা বেগম বলেন, তদন্ত ছাড়া জঙ্গিগোষ্ঠীর বিষয়টি বলা যাবে না। কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে সেটা আমরা তদন্ত করে দেখছি।

তবে তদন্ত সংশ্লিষ্ট নগর পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ঘটনাস্থল থেকে আলামত হিসেবে পাইপ সদৃশ যে বিস্ফোরকের আলামত উদ্ধার করা হয়েছে, একই ধরনের আলামত এর আগেও বিভিন্ন জঙ্গি আস্তানা থেকে উদ্ধার হয়েছে। ঢাকায় পুলিশের যেসব স্থাপনায় হামলা হয়েছিল, সেখানেও একই ধরনের বিস্ফোরক ব্যবহার হয়েছিল কি না সেটা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

গত বছরের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্নস্থানে পুলিশ বক্স ও পুলিশের গাড়িতে অন্তত পাঁচদফা বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। সব বোমাই দূর নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল বলে জানিয়েছিল পুলিশ।

সিএমপি কমিশনার মাহাবুবর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকায় হামলার সঙ্গে কিছুটা মিল পেয়েছি। পুরোপুরি মিল পাইনি।’

ঢাকায় হামরার ঘটনায় প্রথমে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস দায় স্বীকার করেছে বলে খবর প্রকাশ হলেও পরে পুলিশ জানিয়েছিল, ওই হামলা নব্য জেএমবির।

এদিকে জনবহুল এলাকায় পুলিশ বক্সে বিস্ফোরক রেখে যাবার ঘটনায় পুলিশের স্থাপনার সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ঘটনাস্থলে যাওয়া নগর পুলিশের এক উপ-কমিশনার সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাধারণত দায়িত্বরত ট্রাফিক সদস্যদের বিশ্রামের জন্য বক্সগুলো তৈরি করা হয়েছে। সেখানে সার্বক্ষণিক তালা লাগানো থাকে না। কোনো এক ফাঁকে দুর্বৃত্তরা হয়ত বিস্ফোরক রেখে গেছে।’

শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাত পৌনে নয়টার দিকে নগরীর পাঁচলাইশ থানার ষোলশহর দুই নম্বর গেইট এলাকায় ট্রাফিক বক্সে বিস্ফোরণে কমপক্ষে পাঁচজন আহত হন। আহতরা হলেন- ট্রাফিক সার্জেন্ট আরাফাত, পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আতাউদ্দিন, স্থানীয় দুই যুবক জাহিদ বিন জাহাঙ্গীর ও মো. সুমন এবং আনুমানিক ১০ বছর বয়সী এক শিশু।

শনিবার সকালে ঢাকা থেকে সহকারি পুলিশ সুপার শাওন কুমার সরকারের নেতৃত্বে আসা এন্টি টেরোরিজম ইউনিটের ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থলে যান। তারা বিস্ফোরণের পর আলামত সংগ্রহকারী কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। তবে কেউই সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।

বিস্ফোরণের ঘটনায় শনিবার বিকেল পর্যন্ত কোনো মামলা দায়ের হয়নি।

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আমেনা বেগম জানিয়েছেন, ফের জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় পুলিশকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকতে বলা হয়েছে। নগরীর থানা-ফাঁড়িসহ পুলিশের সকল স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

 

টপ নিউজ পুলিশ বক্স বিস্ফোরণ বোমা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর