Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

১৮ বছরের আফগান যুদ্ধের অবসান, যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান চুক্তি সই


২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৯:২৭

জঙ্গিগোষ্ঠী তালেবানের সঙ্গে ঐতিহাসিক এক চুক্তি সই করেছে যুক্তরাষ্ট্র। শনিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) কাতারের রাজধানী দোহায় চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। এর মধ্য দিয়ে অবসান হলো  আফগানিস্কানে দেড় যুগ ধরে চলে আসা যুদ্ধ। আর আফগান ভূখণ্ড থেকে থেকে সকল বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের পথ সুগম হলে। খবর রয়টার্স।

আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি এই যুদ্ধের অবসানে চুক্তি সই অনুষ্ঠানে যোগ দেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। ওয়াশিংটন থেকে দোহায় নেমে কাতারের আমিরের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।

ঐতিহাসিক এ চুক্তিতে সই করেন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত জালমে খালিলজাদ  তালেবান রাজনৈতিক প্রধান মোল্লাহ আব্দুল গনি বারাদার।

চুক্তি স্বাক্ষরের পর কাবুলস্থ মার্কিন দূতাবাস এক টুইটে বলেছে, ‘আজ আফগানিস্তানের স্মরণীয় একটি দিন।’

এই চুক্তির ফলে আফগানিস্তানে মোতায়েনরত সৈন্যদের পরবর্তী ১৪ মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে প্রত্যাহার করে নেবে যুক্তরাষ্ট্র। তবে চুক্তিতে বিভিন্ন ধরনের জটিলতার শঙ্কায় এটি দীর্ঘস্থায়ী হবে কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকে।

চুক্তি স্বাক্ষরের কয়েক ঘণ্টা আগে জাতির কল্যাণের জন্য আফগানিস্তানে যেকোনো ধরনের হামলা চালানো থেকে বিরত থাকতে সব যোদ্ধাদের নির্দেশ দেয় তালেবান। গোষ্ঠীটির মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, আমরা প্রত্যাশা করছি, শান্তি চুক্তি এবং সমঝোতার সময় যুক্তরাষ্ট্র তাদের অঙ্গীকারের প্রতি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ থাকবে।

তিনি বলেন, তালেবানের ভূখণ্ডের আকাশে বিদেশি সামরিক যুদ্ধবিমান এখনো ধারাবাহিকভাবে উড়ছে; এটা অত্যন্ত বিরক্তিকর এবং উসকানিমূলক। কিন্তু যোদ্ধারা আমাদের নির্দেশের প্রতি অটল রয়েছে।

কাতারের ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও-এর বৈঠক

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক এবং ওয়াশিংটনে আফগানভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়েদার হামলার কয়েক সপ্তাহ পর দেশটিতে হামলা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। ১৮ বছর ধরে আফগানিস্তানে মার্কিন হামলায় লাখ লাখ মানুষের প্রাণহানি হয়েছে।

সে সময় ওয়াশিংটন অভিযোগ করে, জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়েদা এবং সংগঠনটির প্রধান ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে যোগসাজশ রয়েছে তালেবানের। দেশটির ক্ষমতা থেকে অপসারিত হলেও এখনো প্রায় ৪০ শতাংশ ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে তালেবানের হাতে।

এ চুক্তির মধ্য দিয়ে নিজের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে সক্ষম হবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আফগানিস্তান থেকে সৈন্যদের ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। তবে, নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের অনেকেই এই চুক্তিকে ‘রাজনৈতিক জুয়া’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, এতে করে আন্তর্জাতিক বৈধতা পাবে তালেবান।

এর আগে চুক্তি স্বাক্ষর উপলক্ষ্যে  তালেবানের রাজনৈতিক শাখার প্রধান মোল্লাহ বারাদারের নেতত্বে গোষ্ঠীটির ৩১ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল কাতারে পৌঁছায়। দোহার শেরাটল হোটেলে ঐতিহাসিক এই চুক্তি সই অনুষ্ঠানে অংশ নেয় পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, উজবেকিস্তান ও তাজিকিস্তানের সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।

শুক্রবার এক বিবৃতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, চুক্তি স্বাক্ষরের কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আফগানিস্তানে মোতায়েনকৃত ১৩ হাজার সৈন্যের মধ্যে থেকে প্রায় ৫ হাজার ৪০০ জনকে ফিরিয়ে আনা হবে।

পশ্চিমা বাহিনীর বাকি সেনাদের সংখ্যা কমিয়ে আনা নির্ভর করবে চুক্তিতে ‘সহিসংতা কমিয়ে আনার’ প্রতিশ্রুতি’র প্রতি তালেবান কতটা শ্রদ্ধাশীল থাকে তার ওপর।

চুক্তির অধীনে তালেবান  আফগান-কারাগারগুলোতে থাকা  ৫ হাজার যোদ্ধার মুক্তি চেয়েছে। তবে, আফগান সরকার তাতে সম্মত হবে কিনা তা স্পষ্ট নয়। তাছাড়া, অতি-কট্টরপন্থী স্প্লিন্টার গ্রুপগুলোর অনুগত তালেবান যোদ্ধারা সহিংসতা কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি মানতে কতটা রাজি হবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

এ মাসের শুরুতে তালেবানের একাধিক তালেবান সূত্র জানিয়েছিল, চুক্তি সই হওয়ার আগে ভেস্তে গেলে শীতের শেষে নতুন করে হামলা চালাতে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল তারা। আর এ জন্য তারা দলে রিক্রুট করেছিল ৬ হাজারেরও বেশি যোদ্ধা ও আত্মঘাতী হামলাকারী।


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর