উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি প্রক্রিয়া সহজ করছে সরকার
২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২১:২৮
ঢাকা: চলতি বছর থেকে উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি প্রক্রিয়া আরও সহজ করতে যাচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে ভর্তির ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন এনে আন্তঃশিক্ষা সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ড একটি খসড়া নীতিমালাও প্রণয়ন করেছে।
একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে নতুন চারটি পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণটি হলো মুক্তিযোদ্ধা, প্রবাসী ও বিকেএসপি কোটা বহাল রেখে সব ধরনের কোটা সুবিধা বাতিল। এছাড়া ভর্তিতে শিক্ষার্থীদের ব্যয় ও ভোগান্তি কমাতে মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে আবেদন প্রক্রিয়া বাতিল করে শুধু অনলাইনে আবেদন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের ১২০ টাকা খরচ কমবে।
গেলো বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সভায় একাদশ শ্রেণির খসড়া নীতিমালা-২০২০ তুলে ধরা হয়। সচিবালয় হওয়া ওই সভায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও সচিব মো. মাহবুব হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
গত বছর পর্যন্ত উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তির জন্য একজন শিক্ষার্থীকে ১৩৫ টাকা নিশ্চয়ন ফি দিতে হতো। নতুন প্রস্তাবে সেটি ১৩০ টাকা করা হয়েছে। ভর্তির জন্য এবারও অনলাইনে ১০টি কলেজ বা মাদরাসা পছন্দ করতে পারবে শিক্ষার্থীরা। এজন্য তাদেরকে ১৫০ টাকা প্রদান করতে হবে। অর্থাৎ পুরো ভর্তি প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে একজন শিক্ষার্থীর খরচ পড়বে ২৮০ টাকা।
ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি ফি ৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দিতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এছাড়া ঢাকার মধ্যে আংশিক এমপিওভুক্ত ও এমপিওবিহীন প্রতিষ্ঠানের বাংলা মাধ্যম ভর্তির জন্য ৯ হাজার ও ইংরেজি মাধ্যমের ভর্তি ফি ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হবে। সব প্রতিষ্ঠানের জন্য উন্নয়ন ফি ৩ হাজার টাকার বেশি করা যাবে না।
এছাড়া মফস্বল ও পৌর এলাকার জন্য ভর্তি ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার টাকা, পৌর জেলা সদরে ২ হাজার টাকা, ঢাকা ব্যতীত অন্যান্য মেট্রোপলিটন এলাকায় ৩ হাজার টাকার বেশি নেয়া যাবে না বলে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে।
কোটা পদ্ধতি বাতিল করা প্রসঙ্গে খসড়ায় বলা হয়েছে, শতভাগ মেধা কোটা ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিশেষ কোটা হিসেবে ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, বিকেএসপি ০.৫ এবং প্রবাসী ০.৫ শতাংশ কোটা বহাল রাখা হবে। এছাড়া বিভাগীয়, জেলা সদর ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধস্তন দফতরসমূহের কোটা বাতিল করা হয়েছে।
অনলাইনে একাদশ শ্রেণির প্রথম ধাপের ভর্তি আবেদন আগামী ১০ থেকে ২০ মে পর্যন্ত গ্রহণ করা হবে। ২৭ থেকে ৩১ জুন আবেদন যাচাই-বাছাই, আপত্তি ও নিষ্পত্তি কার্যক্রম চলবে। ৮ জুন প্রথম ধাপের ফল প্রকাশ করা হবে। তবে পুনঃনিরীক্ষায় এসএসসি পরীক্ষার ফল পরিবর্তনকারীরা ১ থেকে ৩ জুন পর্যন্ত ভর্তির জন্য আবেদন করার সুযোগ পাবেন।
দ্বিতীয় ধাপে আবেদন শুরু হবে ১৭ জুন, ২০ জুন শেষ হবে। একই দিন রাত ৮টার পর এ ধাপের ফল প্রকাশ করা হবে। তৃতীয় ধাপে ২৩ জুন আবেদন শুরু হয়ে ২৫ জুন পর্যন্ত চলবে। ২৫ জুন রাত ৮টার পর এ ধাপের ফল প্রকাশ করা হবে।
চলতি সপ্তাহের মধ্যে খসড়া নীতিমালা চূড়ান্ত করা হবে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক সারাবাংলাকে বলেন, উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি প্রক্রিয়াটি নিয়ে গত বছরে অনেক শিক্ষার্থীরাই আমাদের কাছে অভিযোগ করেছেন। আমি তাদের অভিযোগগুলো বিবেচনা করে নতুন এই খসড়া প্রস্তাব তৈরি করেছি। যে বিষয়গুলো শিক্ষার্থীদের ভর্তি প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করবে সেগুলোকে আমরা অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করেছি। এ পদ্ধতিটি সব পক্ষের জন্যই উপকারে আসবে।
এ ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি প্রক্রিয়াটি আরও সহজ করা হবে। শিক্ষার্থীরা যেন ভর্তি হতে গিয়ে কোনরকম হয়রানির শিকার না হয় আমরা সে দিকটিতে নজর রাখছি। নতুন খসড়াটি নিয়ে আমাদের কিছু অবজারভেশন রয়েছে। সবকিছু বিবেচনার পর আশা করা যাচ্ছে চলতি সপ্তাহে নীতিমালাটি চূড়ান্ত করা হবে।