ফুরালো প্রাণের মেলা, আবারও বছর ঘোরার অপেক্ষা
২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২২:২৯
মাসজুড়ে কেবলই জন্ম হয়েছিল দৃশ্যের। নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে প্রায় ৫ হাজার। বিক্রি হয়েছে প্রায় ৮২ কোটি টাকার বই। বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করা অমর একুশে বইমেলা ২০২০ হয়ে থাকলো স্মরণকালের সফল। এবার সামনের পানে তাকানো। মানসম্পন্ন বই, মৌসুমি প্রকাশক কমিয়ে আনা, সর্বোপরি বাংলা সাহিত্যের বইয়ের আন্তর্জাতিকতা-শেষ দিনের বইমেলায় এই প্রত্যয়ই শোনা গেল লেখক, প্রকাশক, পাঠকের কাছে।
বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ বইমেলা। প্রতিদিন হাজারও পাঠকের ভিড়। পুরো মাসে কত পাঠক দর্শনার্থী আসেন? সেই হিসেব কে রাখেন?
তবে সন্ধ্যায় মূল মঞ্চে সমাপনী আয়োজনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ সেই হিসেব রাখার তাগিদ দিলেন। বললেন, ‘এই পাঠক সমাবেশ আমলে নিয়ে আমাদের দর্শনার্থী সংখ্যা নিরুপণ প্রয়োজন। আমরা চাই, গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে ঠাঁই করে নিতে পাঠক সংখ্যা দিয়ে।’ সেইসঙ্গে মন্ত্রী আগামীতে মানসম্পন্ন বই প্রকাশে গুরত্ব দিতে বাংলা একাডেমিকে তাগিদ দেন।
মেলা প্রতিবেদন উপস্থাপন করে বইমেলার সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ এবারের মেলায় ৮২ কোটি টাকার বই বিক্রির কথা জানান। আর মাসজুড়ে বাংলা একাডেমির বই বিক্রি হয়েছে ২ কোটি ৪০ লাখ টাকার।
এতসব খেরোখাতা পেরিয়ে শেষদিনের মেলায় সবাইই বিদায়ী আবেগে ভেসেছেন। লেখক, পাঠক, প্রকাশক-সবাই পুরো মাসের ব্যস্ততাকে এক লহমায় একসঙ্গে করে হয়েছেন নস্টালজিক।
তথ্যকেন্দ্র থেকে শেষবারের মতো ঘোষিত হচ্ছিল নতুন বইয়ের খবর। শুধু নতুন বইই নয়, মাসজুড়ে এই কেন্দ্র থেকে কত কত তথ্যই না পেয়েছে পাঠক, গণমাধ্যম কর্মী থেকে শুরু করে সবাই। রক্তের প্রয়োজন, হারানো খবরসহ তথ্যকেন্দ্রের ব্যস্ত সময়ের ইতি হয়েছে এক বছরের জন্য।
শেষ দিনের মেলাটা শুরু হয়েছে শিশু প্রহরে। তবে শিশুদের ভিড় খুব একটা ছিল না। যদিও শিশু চত্বর মাতিয়ে রেখেছিল সিসিমপুরের হালুম, ইকড়ি, শিখুরা।
বিকেলেও মেলা প্রাঙ্গণে পাঠক স্রোত ছিল না। তবে ক্রেতা পাঠক ছিল বেশ। প্রথমায় অটোগ্রাফ শিকারী পাঠক ঘিরে ছিলেন কথাসাহিত্যিক আনিসুল হককে। অনন্যায় ছিলেন কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন। নালন্দায় গীতিকবি ও ফিকশন রাইটার লতিফুল ইসলাম শিবলীর ‘রাখাল’ বইয়ে অটোগ্রাফসহ সেলফি তুলতে ব্যস্ত হয়েছেন পাঠক। অন্যপ্রকাশে পাঠক চাহিদার শীর্ষে এখন ও হুমায়ূন আহমেদ। পাঞ্জেরি পাবলিকেশন্সে কিশোর সাহিত্য আর কমিকসের বই বিক্রিতে হিমশিম খেয়েছে বিক্রয়কর্মীরা। অ্যাডর্নে গীতিকবি শহীদুল্লাহ ফরায়জীর নতুন কবিতার বই, বাতিঘরে জি এইচ হাবীবের অনুবাদের বই ‘গোলাপের নাম’, জার্নিম্যানে জাদু শিল্পী জুয়েল আইচের বই এদিনও পাঠক খুঁজে নিয়ে কিনে নিয়েছে। শেষ দিনের ১৮৪টি নতুন বইসহ ২৮ দিনে নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে ৪ হাজার ৯১৯টি। গেল বারের চেয়ে ৮৫ টি বেশি।
শেষ দিনে আগামী প্রকাশনী এনেছে শিবু কুমার শীল সম্পাদিত ‘উত্তর খোঁয়ারি’, আকাশ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে নলিনীকিশোর গুহ’র ‘ভারতবর্ষে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন: বাংলায় বিপ্লববাদ’।
সফল বইমেলার তৃপ্তি নিয়ে রাতে সোহরাওয়ার্দী প্রাঙ্গণে হয়েছে আলোর উৎসব, লেজার শো। সেই আলোর উৎসবের দিকে তাকিয়ে তরুণ কবি মুখ ফুটে বলছিলেন, ‘বিদায় নয়, শুধু সমাপণ। দেখা হবে আসছে ফাগুণে।’
যদিও ফাগুণ নয়, মাঘেই আসে বইমেলা।