Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দুর্নীতি তাড়াতে বিমার ডিজিটালাইজেশনের দাবি জানালেন প্রধানমন্ত্রী


১ মার্চ ২০২০ ১৩:২২

ফাইল ছবি

ঢাকা: বিমা খাতকে মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি এই খাত থেকে দুর্নীতি দূর করতে বিমা ব্যবস্থাকে ডিজিটালাইজেশনের আওতায় নিয়ে আসতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশে পুরো বিমা ব্যবস্থাকে আপনারা একটি ডিজিটাল পদ্ধতির ওপর দাঁড় করাবেন। বিমার দাবি নিষ্পত্তি থেকে শুরু করে বিমা সেবা আরও সহজ করতে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার অপরিহার্য। এটা করলে পরে দুর্নীতিও দূর হবে, মানুষও উপকার পাবে।

রোববার (১ মার্চ) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় বিমা দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

বিমা খাতে যেন মানুষের উৎসাহ বাড়ে, সেদিকে দৃষ্টি দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন মেয়াদের পদক্ষেপ নেওয়ার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বিমার যেসব সুবিধা রয়েছে, সেগুলোর আরও ব্যাপক প্রচার বলেও মত দেন তিনি। সরকারও শিক্ষা বিমার একটি প্রস্তাব বিবেচনার মধ্যে রেখেছে বলে জানান। তিনি বলেন, শিক্ষা বিমার একটি প্রস্তাব আছে, এটি জাতির পিতা বঙ্গববন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে। ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বিমা’ নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। আমরা এটা বিবেচনায় রেখেছি।

বিমা সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেকের অনীহার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের অনেক ব্যবসায়ী আছেন যারা ভাবেন, বিমা প্রিমিয়াম দিয়ে কী হবে, খামোখা টাকা দেওয়া! কোনো দুর্ঘটনা হলে পয়সা পাবে না, সেজন্য টাকা দেবে না। আর বিশেষ করে গাড়ি যারা ব্যবহার করেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে গাড়ির ইনস্যুরেন্সটা সঠিকভাবে করা থাকে না। থার্ড পার্টি ইনস্যুরেন্সের মতো একটি ব্যবস্থা রয়েছে, যেটা দিলেই ইনস্যুরেন্স সার্টিফিকেট পাওয়া যায়। কিন্তু কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তখন কিছুই আর পাওয়া যায় না।

বিমা কোম্পানিগুলোকে তৃণমূল মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছাতে আরও ব্যাপক প্রচার প্রয়োজন বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ইনস্যুরেন্স করা থাকলে দুর্ঘটনায় পড়লে কিন্তু অর্থ ফেরত পাওয়া ও গাড়ি মেরামতের জন্য টাকা পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে অবশ্য দেখতে হবে, দুর্ঘটনা কার দোষে ঘটেছে। কেউ যদি গাড়িকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়, যিনি ধাক্কা দেবেন, তার ইনস্যুরেন্স থেকেই কিন্তু টাকা পাওয়ার কথা। কিন্তু আমাদের দেশে এই সিস্টেমগুলো এখনো খুব ভালোভাবে, শক্তিশালীভাবে গড়ে ওঠেনি। আমি মনে করি, এটা গড়ে ওঠা দরকার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমার ক্ষেত্রে এখন ডিজিটাল পদ্ধতি কার্যকর করা দরকার। সব দেশ এখন আধুনিক প্রযুক্তিতে চলছে। আমি মনে করি, আমাদের দেশের পুরো বিমা সিস্টেমকেও এখন ডিজিটাল পদ্ধতিতে আপনারা দাঁড় করাবেন। আমরা সেটাই আশা করি। যদিও আমরা আসার পর বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। যার ফলে আমরা মনে করি, যথেষ্ট আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।

বিমা খাতে শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ তৈরি করতে পারে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদিও এখন বেকারত্ব তেমন নেই। কারণ আমাদের অর্থনীতি একেবারে গ্রাম পর্যন্ত উন্নতি হচ্ছে। মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করেছি। আমরা ব্যাংক-বিমা থেকে শুরু করে মিডিয়া— সবকিছু বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দিয়েছি। বেসরকারি খাত উন্মুক্ত করে দেওয়াতে ব্যাপক কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। আর এটা আমরা গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত নিয়ে গেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছি। সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড দিয়ে দিয়েছি। মোবাইল ফোন সবার হাতে হাতে। ফোরজি আমরা চালু করেছি। সে ক্ষেত্রে এই বিমাকেও আপনাদের প্রযুক্তিনির্ভর করে ফেলতে হবে। অর্থাৎ বিমার দাবি নিষ্পত্তি থেকে বিমা সেবা আরও সহজীকরণ করার জন্য আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করা একান্তভাবে অপরিহার্য। এটা করলে পরে দুর্নীতি দূর হবে। এর থেকে মানুষ উপকার পাবে। অল্প সময়ের মধ্যে সুযোগ পাবে।

‘দেশের সব বিমা প্রতিষ্ঠানকে অটোমেশনের আওতায় আনলে বীমা খাতের অনেক উন্নতি হবে এবং অনেক সমস্যারও সমাধান হবে। কেউ আর ফাঁকি দিতে পারবে না। বিমা গ্রাহক যারা, তাদেরও আস্থা বাড়বে। তাই আপনারা বিমাকে আরও মানুষের কাছে নিয়ে যান। এখন আমাদের গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত মানুষ কিন্তু অনেক সচেতন। তাই আমরা মনে করি, মানুষের মাঝে বিমা আরও আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হবে,’— বলেন সরকারপ্রধান।

মুজিববর্ষ উদযাপনের অঙ্গীকার তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসুন সবাই মিলে প্রত্যয় ব্যক্ত করি, জাতির পিতা যে দেশ আমাদের দিয়ে গেছেন এই বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ, ক্ষুধামুক্ত-দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলব এবং জাতির পিতা স্বপ্ন বাস্তবায়ন করব।

প্রধানমন্ত্রী বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআর) নির্দেশনাবলী ও ‘বীমা ম্যানুয়াল’ নামক দুইটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিমা খাতে অবদানের জন্য মরহুম গোলাম মাওলা, মরহুম খোদা বক্স, মরহুম এস এ চৌধুরী, মরহুম এম এ সামাদ, এম শামসুল আলমকে পুরস্কৃত করা হয়। পরে আইডিআরের পক্ষ থেকে ক্রেস্ট দেওয়া হয় শেখ হাসিনা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১ মার্চ ১৯৬০ সালে তৎকালীন আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে যোগদান করেছিলেন। এ দিনটিকে স্মরণ করে মন্ত্রিপরিষদ সভায় সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ১ মার্চ জাতীয় বিমা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

ফাইল ছবি

ডিজিটালাইজেশন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমা খাত


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর