পুলিশ বক্সে বিস্ফোরণ: আইএসে’র দাবিকে পাত্তা দিচ্ছে না পুলিশ
১ মার্চ ২০২০ ২১:০২
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে ট্রাফিক পুলিশের বক্সে বোমা বিস্ফোরণের মামলার তদন্তভার নিয়েছে নগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) হামলার দায় স্বীকারকে পুলিশ গুরুত্বই দিচ্ছে না। বরং নির্মোহ তদন্ত করে এই ঘটনায় আসলেই কারা জড়িত, তা দ্রুততম সময়ের মধ্যে বের করাই এখন কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের মূল লক্ষ্য।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপ-কমিশনার হাসান মো. শওকত আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা প্রাথমিক তদন্ত তো ঘটনার পরই শুরু করেছি। কমিশনার স্যারের নির্দেশে আজ (রোববার) থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত শুরু করেছি। আমরা মূলত ঢাকায় পুলিশের ওপর হামলার সঙ্গে এই হামলার মিল কতটুকু, হামলায় কি ধরনের বিস্ফোরক ব্যবহৃত হয়েছে, উপাদান কি কি ছিল- এসব বিষয় খতিয়ে দেখব। এর সঙ্গে কারা জড়িত সেটা বের করা এবং তাদের গ্রেফতারের বিষয় তো অবশ্যই আছে।’
শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ থানার ষোলশহর দুই নম্বর গেইট এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ বক্সে বিস্ফোরণে কমপক্ষে পাঁচজন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দু’জন সেখানে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্য। এরা হলেন- সার্জেন্ট আরাফাত হোসেন ও এএসআই মো. আতাউদ্দিন।
এছাড়া ১০ বছরের এক শিশু এবং আরও দুজন যুবক আহত হন। পুলিশ প্রথমে বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে বিস্ফোরণ মনে করলেও প্রাথমিক তদন্তের পর জানিয়েছে, পরিকল্পিতভাবে নাশকতার উদ্দেশে নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে।
শনিবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জঙ্গি কার্যক্রম নজরদারি সংস্থা ‘সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ’ জানিয়েছে- জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। তদন্ত সংস্থার প্রধান হাসান মো. শওকত আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আইএস দায় নিল কি না কিংবা সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ কি বলল, এগুলোকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি না। অনেক সময় প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের প্রচার বাড়ানোর জন্যও এই ধরনের চটকদার তথ্য পরিবেশন করে। আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি তদন্তে। আমরা তদন্ত করে কারা জড়িত সেটা বের করব এবং তাদের গ্রেফতার করে শাস্তির আওতায় আনব।’
চট্টগ্রামে পুলিশ বক্সে হামলার দায় নিল আইএস
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা আরও জানিয়েছেন, সংগ্রহ করা আলামত পর্যালোচনায় পুলিশ বক্সে একটি বোমা বিস্ফোরণের বিষয়টি তারা নিশ্চিত হয়েছেন। বোমাটি পাইপ আকৃতির। একটি বোমার মধ্যে দুটি পাইটের অংশ পাওয়া গেছে। প্রতিটি অংশ প্রায় পৌনে এক সেন্টিমিটারের মতো চওড়া। এটি স্থানীয়ভাবে নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি, যাতে লোহার বল, পাঁচটি গ্যাস ক্যান ও বিষ্ফোরক ছিল।
সংশ্লিষ্টদের মতে, ট্রাফিক বক্সটির আশপাশের বিভিন্ন অংশ ফাঁকা থাকায় বিস্ফোরণে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। যদি বদ্ধ কক্ষ হতো, তাহলে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটত।
এর আগে ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্নস্থানে পুলিশ বক্স ও পুলিশের গাড়িতে অন্তঃত পাঁচদফা বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। সব বোমাই দূর নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল বলে জানিয়েছিল পুলিশ। ঢাকায় হামলার ঘটনায় প্রথমে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস দায় স্বীকার করেছে বলে খবর প্রকাশ হলেও পরে পুলিশ জানিয়েছিল, ওই হামলা নব্য জেএমবির।
সিএমপি কমিশনার মাহাবুবর রহমান জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তে ঢাকায় হামলার সঙ্গে কিছুটা মিল পাওয়া গেছে।