মুজিববর্ষে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে ১৪ দলের অঙ্গীকার
১ মার্চ ২০২০ ২১:৩৯
ঢাকা: মুজিববর্ষে নারী ও শিশু নির্যাতনকারীদের বাংলার মাটি থেকে নির্মূল করতে তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক বিপ্লব, সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার শপথ নিলেন কেন্দ্রীয় ১৪ দলের নেতারা। একইসঙ্গে নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে মুজিববর্ষে দেশব্যাপী এপ্রিল থেকে প্রচার-প্রচারণা শুরু করবে ক্ষমতাসীন কেন্দ্রীয় জোটের নেতারা।
রোববার (১ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৪ দলের উদ্যোগে মুজিববর্ষে শেখ হাসিনার নির্দেশ, নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ’ শীর্ষক এত সমাবেশে এই অঙ্গীকার করেন নেতারা।
সমাবেশে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম নারী ও শিশু নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে সামাজিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘মানুষরূপী পশুরা তাদের পাশবিক শক্তি দিয়ে শিশুর ওপর এবং নারীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। এদেরকে নির্মূল করার জন্য কেবলমাত্র আইনের কঠিন প্রয়োগে প্রতিরোধ সম্ভব না। এই অপরাধ থেকে সমাজকে মুক্ত করতে হলে সামাজিক বিপ্লব গড়ে তুলতে হবে। এদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সবাইকে একাট্টা হতে হবে সামাজিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য। এই শপথই আমরা মুজিববর্ষে নেব।’
কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম বলেন, ‘পত্রিকা খুললেই দেখা যায়-নারী ও শিশু নির্যাতনের কাহিনি। এর প্রতিকারের বিচার বাংলার মানুষ চায়। জননেত্রী শেখ হাসিনা তাই বলেছেন-এবারের মুজিববর্ষে আমাদের দায়িত্ব হলো বাংলাদেশ থেকে চিরতরে নারী ও শিশু নির্যাতন নির্বাসিত করতে হবে। এই পশুদেরকে ফাঁসির কাষ্টে ঝুঁলিয়ে তাদের রায় কার্যকর করতে হবে। আমাদের আজকে প্রতিজ্ঞা নিতে হবে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে।’
দেশবাসীসহ নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘যেখানে ঘটনা ঘটবে, সেখানেই প্রতিবাদ করতে হবে। সারাদেশে ১৪ দলের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আমরা জেলায় জেলায়, উপজেলায় নারী ও শিশু নির্যাতনের প্রতিবাদে সমাবেশ এবং জনসচেতনতা গড়ে তুলব।’
মুজিবর্ষে নারী ও শিশু নির্যাতনবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে সারাদেশে ১৪ দলের নেতৃত্বে প্রতিরোধ কর্মসূচি গড়ে তোলা হবে জানান জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেন, ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দ্ইু একটা বখাটের কাজ না। দুই একটা বখাটেকে ধ্বংস করলেই নারী নির্যাতন সমস্যাটার সমাধান হবে না। নারী ও শিশু নির্যাতনের এই ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে আছে রাজনৈতিক কারণ সামাজিক কারণ।’
ইনু আরও বলেন, ‘যারা একাত্তর সালে স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ধর্ম এবং ইসলামকে দাঁড় করিয়ে মানুষ হত্যা করেছিল এবং নারী-শিশু বৃদ্ধা হত্যা করেছিল সেই রাজাকার পাকিস্তানের দোসররা জঙ্গি এবং জামায়াতে ইসলামীরা এবং যারা বাংলাদেশে ধর্ম প্রচারের নামে বিভিন্ন ওয়াজে নারীর বিরুদ্ধে বিষেদাগার করে, নারীকে তেঁতুলের সঙ্গে তুলনা করে তেঁতুল তত্ত্ব দেয়, সেই রাজনৈতিক মোল্লারা। তারা যতদিন বাংলাদেশে স্বোচ্চার থাকবে, ততদিন নারী নির্যাতন, শিশু নির্যাতন চলবে।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘আজকে বঙ্গবন্ধু কন্যার নির্দেশ, বাংলাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতন মুক্ত করতে হবে। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করার পর জাতির পিতার কন্যা প্রধানমন্ত্রী তিনি প্রথম সিদ্ধান্ত নেন, তৃণমূল পর্যায়ের মেয়েরা যাতে সরাসরি ভোটে নির্বাচন করতে পারে। এটা ছিল নারী মুক্তির একটা মাইলফলক স্বাধীন বাংলাদেশে মেয়েদের জন্য এগিয়ে যাওয়ার।’
শেখ হাসিনা সরকারের মেয়াদে ফেনীর নুসরাত হত্যাকাণ্ডের বিচারের কথা তুলে ধরে মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘যে জঙ্গিরা মেয়েদের ব্যবহার করে। তাদের বিরুদ্ধে লড়াই কে করবে? শেখ হাসিনা করবে বাংলার মানুষকে নিয়ে। বাংলার নারীদেরকে নিয়ে। বাংলার জনগণকে নিয়ে।’
মতিয়া চৌধুরী নারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা গণিমতের মাল হব না। আমরা নুসরাত হবো না। আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তার হাতকে শক্তিশালি করে, আইনকে শক্তিশালি আমরা নুসরাতদেরকে বাঁচাব। একইসঙ্গে গণিমতের মালের নাম থেকে আমাদের নাম কাটাব।’
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, ‘আজকে আমাদের দুভার্গ্য এই বাংলাদেশে যখন নারী ক্ষমতায়নে দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বশ্রেষ্ঠ হয়েছে। সবচেয়ে দুভার্গ্যজনক হচ্ছে, আমাদের শিশুরা এই ধরনের অপকর্মের শিকার হয়ে গেছেন। তাই আজকে আমাদের দায়িত্ব নিয়ে এগুতে হবে। ১৪ দল আমরা আমরা বেশি লড়াই করেছি ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে। বিএনপি-জামায়াতের দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে। বাংলা ভাইদের জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে। আমরা তাদের সকল ষড়যন্ত্রকে মোকাবেলা করে আন্দোলনে বিজয়ী হয়ে ২০০৮ সালের পর থেকে উন্নয়নের নতুন অভিযাত্রা শুরু করেছি। কিন্তু সেই উন্নয়ন ব্যর্থ হয়ে যাবে, আমাদের নারী তার সেই সম্মান, তার সেই সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা না হয়।’
১৪ দলের মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘শেখ হাসিনার নির্দেশ নারী শিশু নির্যাতন রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ। তাই আপনারা হাত তুলে শপথ গ্রহণ করেন।’
‘স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে দেশবাসীকে বলতে চাই, অভিভাবকদের বলতে চাই, নারী সমাজকে বলতে চাই, ওই পৈশাচিক শক্তিকে রুখতে হবে। যারা নারীর উপর, শিশুর উপর অত্যাচার চালায়। জননেত্রী শেখ হাসিনা জঙ্গি দমন করেছেন। বিএনপির সৃষ্ট অন্ধকার থেকে আলোকিত বাংলাদেশ গড়েছেন। সেই বাংলাদেশে কোন নারী ও শিশু নির্যাতন হতে পারে না। তাই ১৪ দল আজকে শপথ নিয়েছে, আওয়ামী লীগ শপথ নিয়েছে, নারী-পুরুষ শপথ নিয়েছে’ বলেও দাবি করেন মোহাম্মদ নাসিম।
‘ইনশাল্লাহ, আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধ করতে পারব’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আইনমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে নাসিম আরও বলেন, ‘আপনারা দয়া করে দ্রুত বিচার আইন আছে, তা আরো সংক্ষিপ্ত করে কম সময়ের মধ্যে দ্রুত বিচার করেন। ওদের মৃতুদণ্ড দিতে হবে। ওদের চরম দণ্ড দিতে হবে। ওরা খুনি, ওই পাশবিক শক্তিকে মৃতুদণ্ড দিতে হবে।’
নাসিম বলেন, ‘মুজিববর্ষ পালন করার সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রীসহ নেতৃবৃন্দকে আহ্বান জানিয়েছে। সারা দুনিয়া থেকে নেতারা আসবেন। তখন একটি মহল, দিল্লির ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়। ভারত আমাদের বন্ধু। রক্তের মধ্য দিয়ে এই বন্ধুত্ব সৃষ্টি হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সময়। তাই আমরা মনে করি, এই মুজিববর্ষে অবশ্যই ভারতের প্রধানমন্ত্রী আসবে, ভারতের নেতৃবৃন্দ আসবে। এখানে কোন ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করা যাবে না। আমাদের মুজিববর্ষে তারা যোগদান করবেন। কোনো শক্তি নাই, এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারে। ইনশাল্লাহ কোন সাম্প্রদায়িক শক্তি রুখে দাঁড়াতে পারবে না।’
পাশাপাশি আগামী ১০ এপ্রিল থেকে সারাদেশে ১৪ দল ও আওয়ামী লীগ নেতারা নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টিতে সারাদেশে ঘুরে বেড়াবে বলেও জানান তিনি।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাপরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, ‘যে দেশের প্রধানমন্ত্রী মাতৃ মৃত্যু হার, শিশু মৃত্যু হার কমানোর জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থার পুরস্কার লাভ করে, যে দেশের প্রধানমন্ত্রী নারীর ক্ষমতায়নের জন্য আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করে। সেই দেশে এই অবক্ষয় চলতে দেওয়া যায় না। চলতে পারে না। এই শিশু ও নারী নির্যাতন কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এই দেশে মাদক প্রবেশ করিয়ে যেমনিভাবে তরুণ সমাজকে বিভ্রান্তির জাল ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে, আমাদের নতুন প্রজন্মকে নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে। এই দেশ আগামী দিনে যাতে দাঁড়াতে না পারে। কিন্তু সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে একটি মাত্রায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন।’
আমির হোসেন আমু আরও বলেন, ‘এই অবক্ষয় সামাজিক ব্যাধিতে রূপান্তরিত হচ্ছে। যেহেতু এটি সামাজিক অবক্ষয়, তাই সামাজিকভাবে এটাকে প্রতিরোধ করতে হবে। তার জন্য কর্মসূচি দরকার। জনসচেতনতা সৃষ্টি করে জনগণকে সাথে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্যই ১৪ দলের পক্ষ থেকে জাতিকে আহ্বান জানানো হচ্ছে শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে।’
১৪ দলের মুখমাত্র মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে মতবিনিয়ময় সভায় ১৪ দলের নেতারাসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার নেতারা বক্তব্য রাখেন। সভা পরিচালনা করেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির।