স্কুটির প্রেসস্টিকার পার্লের আইডি দুইই ভুয়া, কারা এই কচি-সোনিয়া?
১ মার্চ ২০২০ ২২:৪৩
ঢাকা: রাজধানীর মহাখালীতে সেতু ভবনের সামনে গভীর রাতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত দুই নারীর স্কুটিতে প্রেস লেখা এবং পার্ল ইন্টারন্যাশনালের আইডি কার্ড দুটোই ভুয়া ছিল। এমনকি নিহত দুই নারী সৈয়দা কচি ও সোনিয়া আক্তার কী কাজ করতেন তাও জানত না তার পরিবার।
বনানী থানায় গিয়ে নিহত দুই নারীর বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আফজাল হোসেন সারাবাংলাকে এসব তথ্য জানান।
এসআই আফজাল হোসেন জানান, কচি ও সোনিয়া তাদের স্কুটিতে যে প্রেস স্টিকার ব্যবহার করেছিলেন, তা ছিল ভুয়া। ধারণা করা হচ্ছে, ট্রাফিক পুলিশের মামলার হাত থেকে বাঁচতে ও ক্ষমতা দেখাতেই স্টিকার ব্যবহার করেছিলেন। তবে প্রেস স্টিকার যে ভুয়া ছিল তা প্রতীয়মাণ হয়েছে। তারা কোনোদিনও সাংবাদিক ছিলেন না এমনকি কোনো সাংবাদিক বন্ধুও ছিল তা তাদের।
আরও পড়ুন: ‘প্রেস’ লেখা স্কুটি দুর্ঘটনায় নিহত কচি ও সোনিয়া সংবাদকর্মী নন
এসআই আফজাল বলেন, সেতু ভবনের ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা থেকে ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, দুর্ঘটনার সময় সেতু ভবনের গেটটি বন্ধ ছিল। ক্যামেরায় গেট পর্যন্ত দেখা যায়। সড়কে আর কোনো ক্যামেরাও নেই। কচি ও সোনিয়া ঠিক কোথা থেকে বের হয়েছিল গভীর রাতে তা জানতে এখন বনানীর অন্যান্য সড়কগুলোতে লাগানো সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহের কাজ চলছে। আসলেই তারা বনানী থেকে বের হয়ে মূল সড়কে উঠেছিল নাকি মূল সড়ক দিয়েই র্যাডিসন বা উত্তরার দিক থেকে এসেছিল, তা জানতে তদন্ত চলছে।
তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আফজাল আরো বলেন, কচির বাবা-মা কেউ নেই। এক ভাই আছে, তার সঙ্গেও যোগাযোগ ছিল না তার। তার এক মামা আছে, তিনি এসেছিলেন মর্গে। তার কাছে কচির মরদেহ বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
ওই মামাও বলেছেন, কচি ঢাকায় কী করতেন তা তারা জানতেন না। বাড়িতে খুব একটা যাতায়াত ছিল না কচির। কচি কিছুদিন পার্ল ইন্টারন্যাশনালে মার্কেটিংয়ে কাজ করতেন, সেই চাকরি ছাড়ারও প্রায় একবছর হয়ে গেছে। পার্ল ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃপক্ষ সেটিই জানিয়েছে।
সোনিয়ার ব্যাপারে এসআই বলেন, সোনিয়ার মা মর্গে এসেছিল। তার কাছে মরদেহ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, সোনিয়া কী করতেন তা জানতেন না। তবে প্রতিদিন সকালে বের হলেও রাত ১১টার মধ্যেই বাসায় ফিরতেন। তার উপার্জনেই পরিবার চলত।
জানতে চাইলে পার্ল ইন্টারন্যাশনালের ঢাকার বনানী অফিসের সহকারী ম্যানেজার আব্দুল আলিম চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘২০১৮ সালের শুরুর দিকে কচি মার্কেটিংয়ের কাজ নেন। কসমেটিক্স সেল করার জন্য কাজ নেন। এরপর কিছুদিন করার পর চাকরি ছেড়ে দেন। প্রায় বছরখানেক হয়ে গেল চাকরি ছাড়ার।’ এরপর আর কোনোদিন অফিসে আসেনি। চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সময় আইডি কার্ড জমা দিতে বললেও তিনি দেননি। আর পার্ল ইন্টারন্যাশনাল রাত ৮টার পর খোলা থাকে না।
এদিকে বনানী থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কচি ও সোনিয়া একইসঙ্গে থাকতেন এবং একইসঙ্গে ঘুরে বেড়াতেন। বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে মেলামেশা ছিল তাদের। তাদের মোবাইল ফোন কলের সূত্র ধরে কিছু নাম্বারে কল করলে এ তথ্য মেলে।
সোনিয়ার নম্বর থেকে একটি নম্বর নিয়ে কল করলে, ওপাশ থেকে আনিস নামে এক যুবক বলেন, ওইদিন সোনিয়া সকাল ১১টা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত তার সঙ্গে ছিলেন। তারা মোটরসাইকেলে ঘুরেছেন, খাওয়া দাওয়া করেছেন। একটি বাসায় অন্তরঙ্গ মুহূর্ত কাটিয়েছেন বলে জানান ওই যুবক।
কতদিনের পরিচয় জানতে চাইলে ওই যুবক জানিয়েছেন, এক বন্ধুর মাধ্যমে তিনি নম্বর পান, ওইদিনই তাকে ফোন করেছেন এবং একদিনই ঘুরেছেন। বিনিময়ে তিনি এক হাজার ২০০ টাকা দিয়েছেন। আর কচির বিষয়টি জানতেন না বলেও জানান ওই যুবক।
আরও পড়ুন: বনানীতে দুই নারীর মৃত্যু: ফুটেজ দেখে গাড়ি শনাক্তের চেষ্টা
কচির মামা নুরুল আমিন সারাবাংলাকে বলেন, কচি কী করতেন তা আমি জানতাম না। মাঝে মধ্যে ফোনে কথা হতো। টেলিভিশনে মরদেহের ছবি দেখে কচিকে চিনতে পারি, এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে গিয়ে মরদেহ শনাক্ত করি। শুনেছিলাম, মিরপুর শাহ আলী এলাকায় একটি রুম ভাড়া নিয়ে দুই বান্ধবী থাকত। তারা দুজন একইসঙ্গে চলাফেরা করত একইসঙ্গে থাকত।
সোনিয়ার বড়ভাই রুবেল বলেন, সোনিয়া ঢাকায় চাকরি করার কথা বলেছিল আমাকে। এরপর বিউটি পার্লারে কাজের কথাও একসময় জানিয়েছিল। বিয়ে হয়েছিল তিন মাসের মাথায় তালাক হয়ে যায়। এরপর আর বিয়ে করেননি সোনিয়া।
পুলিশ জানায়, সৈয়দা কচির (৩৮) বাড়ি কিশোরগঞ্জ কুলিয়ারচর পৌরসভার পাচুলিয়া বাজিতপুর এলাকার সৈয়দ ফজলুল হকের মেয়ে। নিহত আরেকজন সোনিয়া আক্তারের (৩২) বাড়ি ভোলা সদর উপজেলায়।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাত পৌনে ১টার দিকে মহাখালী সেতু ভবনের সামনের সড়কে দুই নারীকে পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয় পথচারীরা। পরে তাদের উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নিলে দুজনকেই মৃত ঘোষণা করে কর্তব্যরত চিকিৎসক।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরে আজম মিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘দিনরাত তারা স্কুটিতে ঘুরে বেড়াতেন। বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে যাওয়ারও প্রমাণ মিলেছে।’
তাদের মৃত্যুর বিষয়ে ওসি বলেন, ‘মামলা হয়েছে, তদন্ত চলছে। কীভাবে তাদের মৃত্যু হয়েছে তা জানার চেষ্টা চলছে।’