দাম কমছে পেঁয়াজ-রসুনের, বাড়ছে সয়াবিন তেলের
২ মার্চ ২০২০ ০৭:১৯
ঢাকা: বাজারে পেঁয়াজ, রসুন ও আদার দাম কমলেও বেড়েছে ভোজ্যতেল সয়াবিনের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানেই খোলা সয়াবিনের দাম লিটারে বেড়েছে ৮ থেকে ১০ টাকা। বিক্রেতাদের দাবি, গত কয়েক মাস ধরেই সয়াবিন তেলের খোলাবাজার অস্থির। এদিকে সামনের দিনে পেঁয়াজ, রসুন ও আদার দাম আরও কমতে পারে বলে আভাস মিলছে।
গত তিন মাসের বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, লাফিয়ে লাফিয়ে ২৫০ টাকার রেকর্ড স্পর্শ করা পেঁয়াজ এখন ৫০ টাকার ঘরে নেমে আসছে। ডিসেম্বর-জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি এই সময়ে পেঁয়াজের দর কখনও স্থির ছিল না। বাজারে সোনার দাম যেমন ওঠা-নামা করে তেমনি প্রায় প্রতিদিনই ওঠানামা করেছে পেঁয়াজের মূল্য। তবে মার্চের প্রথম দিনে সুখবর মিলছে, সামনে আরও কমবে পেঁয়াজের ঝাঁজ।
যখন পেঁয়াজের বাজার ঊর্ধ্বমুখী ছিলো তখন রসুনের দাম অপরিবর্তিত থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা স্থির থাকতে পারেনি। চীন থেকে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের আতঙ্কে প্রভাব পড়েছিল রসুনের বাজারেও, দাম উঠেছিল ২২০ টাকা কেজিতে। তবে বাজারে দেশি রসুন আসায় এর দাম নেমে এসেছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। তবে চীনা রসুনের বাজার এখনও ১৪০ টাকার ঘরে।
পেঁয়াজ-রসুনের ওঠা-নামার এই সময়ে আদার দাম ছিল প্রায় স্থির। গত কয়েক মাস ধরে ১০০ থেকে ১৮০ টাকার ঘরে ছিল আদার দাম। বর্তমানে তা ১১০ থেকে ১৬০ টাকার ঘরে রয়েছে। একই সময়ে অপরিবর্তিত রয়েছে চিনি ও লবণের বাজারও।
রোববার (১ মার্চ) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে দেশি পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৬৪ টাকা, পাকিস্তানি ৬০ টাকা, হলেন ৬০ টাকা ও বার্মার পেঁয়াজ ৭৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বাজারে এখনও মুড়িকাটা দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। মূল পদ্ধতিতে চাষ করা অর্থাৎ হালি দেশি পেঁয়াজ আসতে আরও ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লাগতে পারে। রফতানির নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেওয়ায় ভারত থেকে শুরু হতে পারে শিগগিরই পেঁয়াজ আমদানি। সব মিলিয়ে সামনের দিনে বাজারে পেঁয়াজের দাম আরও কমবে বলে আভাস মিলছে।
আব্দুল খালেক নামের পাইকারি এক বিক্রেতা সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখন আর পেঁয়াজের দাম বাড়বে না। ধীরে ধীরে আরও কমতে পারে। কারণ কিছুদিনের মধ্যেই বাজারে হালি পেঁয়াজ উঠবে। আর ভারত থেকেও শুরু হতে পারে পেঁয়াজ আমদানি। ফলে রোজার মধ্যেও পেঁয়াজের দাম কম থাকবে।’
পাইকারি বাজারে এখন চীনা রসুন ১৪০ টাকা ও নতুন তোলা দেশি রসুন ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ বাজারে রসুনের দামও কমেছে। কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতারা জানিয়েছেন, আগের চেয়ে রসুনের দাম এখন অনেক কম। চীনা রসুন ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, জানুয়ারিতে আরও কমে তা ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
বিক্রেতারা জানিয়েছেন, সপ্তাহ দুই আগে বাজারে নতুন দেশি রসুন উঠতে থাকায় এর দাম কমছে। টিসিবির তথ্য থেকে জানা গেছে, গত বছরের মধ্য ডিসেম্বরে জাত ও মানভেদে রসুনের দাম ১৬০ থেকে ১৮০ (দেশি) ও ১৪০ থেকে ১৫০ (আমদানি) টাকার ঘরে ছিল। মধ্য জানুয়ারিতে তা ১৪০ থেকে ১৮০ (দেশি) ও ১৩০ থেকে ১৪০ (আমদানি) টাকায় নেমে আসে। তবে মধ্য ফেব্রুয়ারিতে রসুনের দামও ২২০ টাকা স্পর্শ করে। ১২০ থেকে ২২০ (দেশি) টাকা ও ১৮০ থেকে ২২০ (আমদানি) টাকায় তখন রসুন বিক্রি হয়েছে। পরে নতুন রসুন ওঠায় বাজারে দাম কমেছে।
পাইকারি বাজারে এখন দেশি আদা ১৬০ টাকা, চীনা আদা ১১০ টাকা ও ভারতীয় ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন, ফেব্রুয়ারিতে চীনা আদা ১৩০ টাকা, দেশি ২২০ টাকা ও ভারতীয় আদা ১৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, ‘সামনের দিনগুলো নতুন করে আদার দাম বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। ’
টিসিবির জানায়, গত বছরের মধ্য ডিসেম্বরে ১০০ থেকে ১৭০ টাকায় আদা বিক্রি হয়েছে। আর মধ্য জানুয়ারিতে আদার দাম ছিল ১০০ থেকে ১৬০ টাকা। মধ্য ফেব্রুয়ারিতেও মানভেদে ১০০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে আদা। বিক্রেতারা দাবি করলেও টিসিবির তথ্যে বাজারে আদার দাম খুব একটা কমেনি।
এদিকে বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ৮ থেকে ১০ টাকা। কারওয়ান বাজারের পাইকারি দোকানগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে খোলা সয়াবিন ৯০ থেকে ৯৫ টাকা লিটারে বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগেও খোলা সওয়াবিন বিক্রি হয়েছে ৮২ টাকা লিটারে।
কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের সোনালী ট্রেডার্সের বিক্রয়কর্মী শরিফুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘বর্তমানে খোলা সয়াবিন ৯৫ টাকা লিটারে বিক্রি হচ্ছে। একদিনের ব্যবধানে ব্যারেলে সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ২ হাজার টাকা। গত কয়েক মাস ধরেই সয়াবিন তেলের খোলা বাজার অস্থির। প্রায় প্রতিদিনই দাম ওঠানামা করছে।
একই মার্কেটের মায়ের দোয়া স্টোরের কর্মচারী বাবলু সারবাংলাকে বলেন, ‘বাজারে এখন খোলা সয়াবিন তেল নেই। অধিকাংশ দোকানেই খোলা সয়াবিন তেলের সংকট রয়েছে।’
তবে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বাড়লেও কমছে পামওয়েলের দাম। এখন প্রতি কেজি পামওয়েল বিক্রি হচ্ছে ৭৬ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগেও ৮২ থেকে ৮৩ টাকা লিটারে বিক্রি হয়েছে। আর বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত। বিভিন্ন ব্রান্ডের ৫ লিটারের বোতলজাত সওয়াবিন ৯৪ থেকে ৯৮ টাকা লিটারে বিক্রি হচ্ছে। ৫ লিটারের রূপচাঁদা ৪৯০ টাকা, তীর ৪৭০ টাকা, পুষ্টি ৪৭০ টাকা ও সেনা ৪৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এছাড়া বাজারে চিনি ও লবণের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। গত কয়েক মাস ধরেই মানভেদে চিনি ৬৩ থেকে ৬৪ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আর প্যাকেটজাত লবণ বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা কেজিতে।