রুশদির মৃত্যুর খবরে নিজের বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন বাবা রনি
২ মার্চ ২০২০ ১৫:১৪
ঢাকা: ছেলে রুশদির মৃত্যুর খবর শুনে নিজেও বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন বাবা রনি। এরপরই পরিবারকে জানিয়ে দেন পারিবারিক কবরস্থানে একসঙ্গে সবাইকে কবর দিতে।
সোমবার (২ মার্চ) দুপুরের দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে কথাগুলো বলছিলেন রনির ফুফাতো ভাই নাকিব হাসান।
নাকিব বলেন, বাবা রনি ও মা জান্নাতকে যখন ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে নিয়ে আসা হয় তখনই রনি পরিবারের কাছ থেকে জানতে পারেন ছেলে রুশদি বেঁচে নাই। এই কথা শোনার পর নিজের বাঁচার আশাও ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন, পারিবারিক কবরস্থানে সবাইকে পাশাপাশি দাফন করতে। এরপর আর কথা বলতে পারে নি রনি।
নাকিব আরো বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার দিন বিকেল থেকেই লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয় রুশদির বাবা রনি ও জান্নাতকে। তাদের আদরের ধন ছিল রুশদি। যতক্ষণ তাদের জ্ঞান ছিল ততক্ষণই তারা রুশদীকে নিয়ে কথা বলেছেন। খুবই আদর করতেন ছেলেকে। এটা জান্নাতের ফেসবুক খুললেই দেখা যায়। তাদের তিনজনের মধ্যে আল্লাহ এতই মিল দিয়েছিলেন যে একসঙ্গেই নিয়ে গেলেন। আশা করি আল্লাহ তিনজনকে একসঙ্গেই রাখবেন।
রনির গ্রামের বাড়ি নরসিংদি জেলার শিবপুর উপজেলার ইটনা গ্রামে। আগুনের ঘটনায় প্রথমে মারা যায় শিশু রুশদি। এরপর মা অগ্নিদগ্ধ মা জান্নাতের কথামতই ছেলে রুশদির পাশে তাকে দাফন করা হয়। বাবা শহীদুল কিরমানী রনিরও দাফনও হবে স্ত্রী সন্তানের পাশেই।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ভোরে রাজধানীর দিলু রোডে নিজেদের বাসার নিচতলায় লাগা আগুনে শিশু রুশদী ঘটনাস্থলেই মারা যান। এরপর রোববার (১ মার্চ) সকালে মারা যার রুশদির মা জান্নাতুল ফেরদৌস জান্নাত। প্রায় ৫ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে সোমবার (২ মার্চ) ভোরে মারা যান বাবা শহীদুল কিরমানী রনি।
সোমবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান শহীদুল কিরমানীর (৪০)।
শিশু রুশদি আর মায়ের পর বাবা রনিও না ফেরার দেশে
ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, শহীদুল কিরমানী রনির শরীরের ৪৩ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। সোমবার ভোরে সেখানেই মারা যান তিনি।
আর রনির মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শিশু রুশদির ছোট পরিবারটির আর কেউ বেঁচে রইলেন না।
রনির গ্রামের বাড়ি নরসিংদি জেলার শিবপুর উপজেলার ইটনা গ্রামে। তার বাবার নাম একেএম শহীদুল্লাহ। বিআইভিপি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার ছিলেন তিনি। পাশাপাশি আইসিএমএ নামের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রভাষক হিসেবেও কাজ করতেন।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ভোর সাড়ে ৪টার দিকে দিলু রোডের ওই বাড়িটির নিচতলার গ্যারেজে আগুন লাগে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রনে আসে।
আগুনে ঘটনাস্থলেই মারা যায় জান্নাত-রনির একমাত্র সন্তান একেএম রুশদি (৪)। এছাড়া মারা যান ভবনের পাঁচতলার বাসিন্দা এইচএসসি পরীক্ষার্থী আফরিন জাহান যুথী (১৭) ও ভবনের নিচতলায় বসবাসরত বায়িংহাউজের অফিস সহকারী আব্দুল কাদের লিটন (৪০)। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রুশদির মা জান্নাত ও বাবা রনি। সব মিলিয়ে এই আগুনে নিহতের সংখ্যা দাঁড়াল পাঁচজন।
এ ঘটনায় হাসপাতালের জরুরী বিভাগে এবং বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নিয়েছেন চারজন। এরা হলেন সুমাইয়া আক্তার (৩২), স্বামী মনির হোসেন (৪০), তার ছেলে মাহাদী হাসান রিফাত (৯), মাহমুদুল হাসান (৯ মাস)।