পানি নিয়ে সমাধান এ বছরেই: হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা
২ মার্চ ২০২০ ১৬:১২
ঢাকা: ‘পানি বণ্টন ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে যে সমঝোতা হয়েছে তা চলতি বছরেই বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করা হবে। এরইমধ্যে পানি সংক্রান্ত দুই দেশের যৌথ কমিটি কাজ শুরু করেছে, যা অগ্রগতির একটি অংশ। ভারতের পানি সচিব গত আগস্টের ঢাকা সফরে দুই পক্ষ এই সংক্রান্ত হালনাগাদ তথ্য বিনিময় করেছে।’
ঢাকা সফররত ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রীংলা সোমবার (২ মার্চ) গণমাধ্যমকর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করেন। দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে বিস (বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল এন্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ) আয়োজিত সেমিনারের প্রশ্ন-উত্তর পর্বে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব এসব কথা বলেন।
এর আগে, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা সেমিনারে দেয়া বক্তৃতায় বলেন, ‘আমাদের অভিন্ন নদীর পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে আরও অনেক কিছু করার রয়েছে। আমি জানি, আমাদের মত ঘনবসতির ও জীবিকার জন্য নদীর উপর নির্ভরশীল দেশে এই বিষয়টি কতটা নাজুক। এটা প্রমাণিত যে, ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানির পরিবেশবান্ধব, টেকসই এবং ন্যায্য বণ্টন করার মধ্যেই আমাদের বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থ নিহিত।’
তিনি বলেন, আমি বলতে পেরে খুশি হচ্ছি, দুই পক্ষই স্বীকার করে, অভিন্ন নদী বিষয়ে আমাদের আরও উন্নতির সুযোগ আছে এবং এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গত আগস্ট থেকেই দু’পক্ষের মধ্যে সংলাপ শুরু হয়েছে। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি, শুষ্ক মৌসুমে পানিসংকটের সর্বোত্তম সমাধান খুঁজতে এবং পানি ব্যবস্থাপনার মান উন্নয়ন করতে আমরা বদ্ধপরিকর, যেন এসব নদীগুলো আগামী প্রজন্মেও জীবিকার উৎস হয়ে থাকতে পারে।’
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা আরও বলেন, ‘এজন্য বিভক্তি সৃষ্টি নয় বরং যা আমাদের বন্ধনকে দৃঢ় করবে সেসব বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে আমরা বাংলাদেশের উত্তর–দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় ভূমিকা রাখা নৌপথগুলোর নাব্যতা বৃদ্ধিতে একমত হয়েছি। আমরা আশুগঞ্জ ও জকিগঞ্জের মধ্যবর্তী কুশিয়ারা এবং সিরাজগঞ্জ ও দাইখোয়ার মধ্যবর্তী যমুনা নদীর খনন কাজে একমত হয়েছি যার এক তৃতীয়াংশ ব্যয় ভারত বহন করবে। সেই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ নৌ প্রটোকল সম্প্রসারণের পাশাপাশি আশুগঞ্জের মতো গুরুত্বপূর্ণ নদীবন্দরগুলোর উন্নয়নে যৌথভাবে কাজ করছি আমরা।’
এসব প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ ও ভারত উভয়ই সমান লাভবান হবে উল্লেখ করে ভারতের সচিব বলেন, ‘বিদেশ থেকে আসা এলপিজি চট্টগ্রাম থেকে কিনে বাংলাদেশি বিশেষ ট্রাকে করে ত্রিপুরায় সরবরাহ করার মাধ্যমে ভারতের শুধু সাশ্রয়ই হবে না, এর ফলে এখানে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং ভারতের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ সড়ক পথে পণ্য পরিবহণের সৃষ্ট পরিবেশ দূষণ কমাবে।’
দুই দেশ একমুখী নির্ভরশীলতার পরিবর্তে দ্বিমুখী আস্থার সম্পর্ক তৈরি করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি বলেন, সর্বোপরি, বাংলাদেশ যদি ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেনে তাতে আপনাদের বাজারের উপর আমাদেরও নির্ভরশীলতা বাড়বে। একইভাবে, আপনারা যদি দ্বিপাক্ষিক এবং আন্ত:সীমান্ত যোগাযোগ সুবিধা প্রদান করেন তাহলে শুধু বাংলাদেশে কর্মসংস্থানেরই সৃষ্টি হবে না, এর মাধ্যমে বাংলাদেশের উপর ভারতের কৌশলগত এবং অর্থনৈতিক নির্ভরতা বৃদ্ধি পাবে। যার ফলে দীর্ঘমেয়াদী একটা পর্যায়ে দু’পক্ষের স্বার্থ অভিন্ন হয়ে যাবে।’