করোনাভাইরাস: বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার শঙ্কা দেখছে ওইসিডি
৩ মার্চ ২০২০ ০৭:৫২
ক্রমেই বেড়ে চলা করোনাভাইরাস সংক্রমণ বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থা অর্গানাইজেশন ফর ইকোনোমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি)।
সংস্থাটি বলছে, বছরের চলতি প্রান্তিকে বৈশ্বিক অর্থনীতি উল্লেখযোগ্য হারে সঙ্কুচিত হতে পারে। এক দশক আগের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার পর প্রথমবারের মতো অর্থনীতিতে বড় আকারের নিম্নমুখী প্রবণতা।
সোমবার এক বিশেষ প্রতিবেদনে ওইসিডি এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছে। তবে ফ্রান্সভিত্তিক ওই ওয়াচডগ প্রতিষ্ঠান এ-ও বলছে, বছরের বাকি সময়টা অর্থনীতির চাকা ঊর্ধ্বমুখী থাকবে এবং আগামী বছর নাগাদ ফের চাঙ্গা হবে।
এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি। খবরে বলা হয়, ওইসিডি ২০২০ সালে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির অনুমিত পূর্বাভাস আধা শতাংশ কমিয়ে ২ দশমিক ৪ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। আর ভাইরাসের সংক্রমণ আরও বেশি দিন দীর্ঘায়িত হলে ও আক্রান্ত দেশ, অঞ্চলের সংখ্যা বাড়লে প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত নেমে আসতে পারে।
সংস্থাটি বলছে, বিশ্বজুড়ে ৩ হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়া এ ভাইরাসটি ‘মানুষের জন্য মারাত্মক দুর্দশা’র কারণ তো বটেই, সেইসঙ্গে ‘বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সম্ভাবনা দুর্বল এবং অত্যন্ত অনিশ্চিত’ করে তুলেছে।
এর আগে, ২০০৮ সালের শেষের দিকে অর্থবছরের প্রান্তিক বিবেচনায় বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি সঙ্কুচিত হয়েছিল। ওই সময় মন্দার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছিল বৈশ্বিক অর্থনীতি। এর পরপরই ২০০৯ সালে গোটা বছরের হিসাবে প্রবৃদ্ধির হার সর্বশেষ কমেছিল।
ওইসিডি বলেছে, চীনে পণ্যের উৎপাদন কমে যাওয়ায় বিশ্বজুড়ে নানা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিশেষ করে প্রভাব পড়ছে এশিয়ার দেশগুলোতে। এ পরিস্থিতিতে সংস্থাটি বিশ্বের সরকারগুলোর প্রতি সংক্রমণ প্রতিহত করতে এবং ভোক্তাদের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
নিয়মিত বিশ্বের উন্নত দেশগুলোকে অর্থনৈতিক নীতিমালা বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে আসা ওইসিডি বলেছে, অতীতের যেকোনো রোগের প্রাদুর্ভাবের চেয়ে এই ভাইরাসের প্রভাব অনেক বেশি। কেননা, বৈশ্বিক অর্থনীতি এখন উল্লেখযোগ্য মাত্রায় অধিকতর পরস্পর-সংযুক্ত। আর আগের তুলনায় বৈশ্বিক উৎপাদন (আউটপুট), বাণিজ্য, পর্যটন এবং পণ্য বাজারগুলোতে অনেক বড় ভূমিকা পালন করে চীন।
সাম্প্রতিক এই ভাইরাসের সূত্রপাত, সংক্রমণের ব্যাপ্তি ও প্রাণহানির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হয়েছে চীনে। ফলে, এরই মধ্যে এ সংক্রমণ বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইনে প্রভাব ফেলেছে এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফা কমিয়ে এনেছে। আর কোভিড-১৯ রোগ যতই ছড়াচ্ছে, অর্থনীতিবিদরা সম্ভাব্য আরেকটি পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ দেখাচ্ছেন। তারা মনে করছেন, কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা ও ভোক্তাদের মধ্যে আরও বেশি সাবধানতার জের ধরে মানুষজন তাদের ভ্রমণ পরিকল্পনা বাতিল করবে, রেস্তোরাঁয় খাওয়া দাওয়া করা কমিয়ে দেবে, দোকানপাটে যাওয়া এড়িয়ে চলবে বা বাড়ি থেকে কাজ করা বেছে নেবে। এর প্রভাব এরই মধ্যে দৃশ্যমান।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজার বিষয়ক কমিশনার থিয়েরি ব্রেটন সোমবার জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের আক্রমণের ফলে এ বছর শুধু পর্যটন খাতে ইউরোপের ক্ষতি হয়েছে ২২০ কোটি ইউরো। প্রধানত চীনা পর্যটকের সংখ্যা কমে যাওয়ায় পর্যটন রাজস্বে এমন অধোগতি দেখা গেছে। ইতালির উত্তরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া এবং ভেনিস কার্নিভালের মতো আয়োজন বাতিল হওয়ায় ইউরোপের জন্য পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করছে ওইসিডি।