আইসিডি কাস্টম বন্ধের আশংকা, স্থানান্তরেও নেই অগ্রগতি
৩ মার্চ ২০২০ ১০:৪০
ঢাকা: রাজধানীর কমলাপুরে আইসিডি কাস্টম হাউসের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশংকা করছে কর্তৃপক্ষ। কারণ, কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেলের বর্ধিত অংশের কাজ চলছে। এদিকে, পিপিপির (সরকারি-বেসরকারি যৌথ অংশীদারিত্ব) আওতায় প্রায় ১ দশক আগে গাজীপুরের ধীরাশ্রমে নতুন আইসিডি নির্মাণের পরিকল্পনা নেয় সরকার। যা স্থানান্তরের কথা ছিলো ২০১৭ সালে। কিন্তু সেই কাজেরও অগ্রগতি নেই।
আইসিডি কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. আনোয়ার হোসাইন সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যানকে একটি চিঠি দিয়েছেন। সেই চিঠিতে বলা হয়েছে, কমলাপুর আইসিডি রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে গুরুত্বপূর্ণ ঘন জনবসতি ও ব্যস্ততম এলাকায় অবস্থিত। প্রধানতম রেলস্টেশন এবং যোগাযোগের কেন্দ্র হওয়ায় এই অঞ্চল নিয়ে অদূর ভবিষ্যতে এখানে ‘মাল্টি মোডাল কম্যুনিকেশন হাব’ তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এরই মধ্যে দেশের মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতুর রেলসংযোগ নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে মেট্রোরেলের লাইন কমলাপুর পর্যন্ত বর্ধিত অংশের কার্যক্রম চলছে। ফলে অদূর ভবিষ্যতে এখানে আইসিডির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
এতে আরও বলা হয়েছে, রেলের মাধ্যমে কন্টেইনারবাহিত চালান পণ্য খালাসের পর ট্রাক বা কাভার্ডভ্যানে আনতে হয়। কিন্তু দিনের বেলা রাজধানীতে ভারী যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় রাতে চালান খালাস দিতে হয়, যা নিরাপত্তার জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া, এই বন্দরের জন্য নির্দিষ্ট কোনো ট্রাকস্ট্যান্ড না থাকায় বন্দরের ভেতরে প্রায়ই ট্রাকের জটলা তৈরি হয়। এটি নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে পরিবহন শ্রমিকরা ধর্মঘটসহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে,কমলাপুর কাস্টম হাউসের চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার ৩৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) রাজস্ব প্রবৃদ্ধি আগের বছরগুলোর তুলনায় নিরবচ্ছিন্নভাবে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। এরই মধ্যে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় ১৭ শতাংশ অতিরিক্ত রাজস্ব আহরণ হয়েছে। বছর শেষে মোট রাজস্ব ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ওপরে দাঁড়াবে। ফলে আইসিডি কাস্টম হাউস স্থানান্তরে পদক্ষেপ নিতে এনবিআরের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে চিঠিতে।
শুধু তাই নয়, চিঠিতে আইসিডি কাস্টম হাউসের গুরুত্ব তুলে ধরে বলা হয়েছে, ঢাকা মহানগর ও তার আশপাশ-কেন্দ্রিক ভোগ্যপণ্য, শিল্পের কাঁচামাল, সরকারি গুরুত্বপূর্ণ সেবা ও সরবরাহ-সংশ্লিষ্ট মালামালের আমদানি-রফতানি কার্যক্রমের প্রবৃদ্ধি বিবেচনায় একটি আধুনিক ও স্বয়ংসম্পূর্ণ আইসিডি আবশ্যক। এটি যেমন এই অঞ্চলের শিল্প, বিপণনসহ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে অবদান রাখবে, অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর চলমান অসহনীয় চাপ কমবে। সেই লক্ষ্যে আইসিডি স্থানান্তর প্রক্রিয়া অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দ্রুত শুরু করতে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে যোগাযোগ করা দরকার। এছাড়া, প্রস্তাবিত আইসিডির পরিকল্পনা ও প্রকল্প প্রণয়ন পর্যায়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বা এনবিআরের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ারও প্রয়োজন আছে।
এ বিষয়ে আইসিডি কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. আনোয়ার হোসাইন সারাবাংলাকে বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও পদ্মা রেল সংযোগের কাজ চলছে। এগুলো চলমান হওয়ায় আইসিডি কাস্টমের জায়গা অনেক কমে গেছে। এছাড়া, আইসিডি স্থানান্তরেরও তো কিছু সময় লাগবে। সবমিলিয়ে দ্রুততার সঙ্গে কাজটি হওয়া দরকার। নয়তো রাজস্বখাতে কিছুটা হলেও প্রভাব পড়বে। সেজন্য এনবিআরকে চিঠি দিয়ে অবহিত করা হয়েছে। আশা এনবিআর সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে।
এ বিষয়ে এনবিআর সদস্য (শুল্ক নীতি ও আইসিটি) সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া সারাবাংলাকে বলেন, আমরা আইসিডি কাস্টমস থেকে একটি চিঠি পেয়েছি। চিঠির বিষয়টি সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আশা করছি দ্রুত বিষয়টির সমাধানে যেতে পারব।
কম খরচে অধিক পণ্য পরিবহনের জন্য ১৯৮৭ সালে কমলাপুরে নির্মাণ করা হয় আইসিডি কাস্টম হাউস কমলাপুর। এরপর চট্টগ্রাম থেকে কন্টেইনারে করে পণ্য আসে কমলাপুর কাস্টমসে। আর সেই পণ্য দ্রুততার সঙ্গে খালাস হয়ে থাকে। ফলে ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি অনেকাংশে কমে যায়। এবং রাজধানীর ব্যবসায়ীরা দ্রুত পণ্যের যোগান দিতে পারে।