উহানে করোনা রোগীদের পাশে দাঁড়াতে চান বাঙালি তরুণী
৩ মার্চ ২০২০ ২৩:৫৯
ঢাকা: কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাসের আক্রমণে রীতিমতো কাঁপছে চীন। বিশেষ করে এই ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল হুবেইয়ের রাজধানী উহান এখন পরিণত হয়েছে রীতিমতো নির্জন শহরে। শহরটি থেকে যেমন কেউ খুব দরকার ছাড়া বের হচ্ছেন না, শহরে প্রবেশও করতে দেওয়া হচ্ছে না কাউকেই। মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের ঝুঁকির মধ্যেও এক অনন্য নজির স্থাপন করলেন বাংলাদেশের মেয়ে সৈয়দা জেরিন ইমাম। চীনের উহানে গিয়ে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করার আগ্রহ দেখিয়েছেন তিনি।
জেরিন ইমাম একজন চিকিৎসক। চীনের শানডং ইউনিভার্সিটিতে চিকিৎসা বিজ্ঞানে পিএইচডি শিক্ষার্থী তিনি। পড়ালেখা সূত্রেই চীন তার কাছে দ্বিতীয় মাতৃভূমির মতো। আর সে কারণেই চীনের এই দুর্দশার সময়ে তিনি হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে রাজি নন, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের সেবা করতে চান খোদ উহানে গিয়ে। এ বিষয়ে ঢাকায় চীনা দূতাবাসে চিঠি দিয়েছেন জেরিন।
মঙ্গলবার (৩ মার্চ) বাংলাদেশে চীনা দূতাবাসের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে এক পোস্টে জেরিনের চিঠির বিষয়টি জানানো হয়।
ফেসবুকের ওই পোস্টে লেখা হয়েছে, ঢাকায় চীনা দূতাবাসে একজন বিশেষ অতিথি এসেছিলেন। তিনি সৈয়দা জেরিন ইমাম, অপরূপা এক বাংলাদেশি তরুণী। তিনি দূতাবাসে এসে এখানকার কর্মকর্তাদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন।
চীনা দূতাবাস বলছে, জেরিন ইমাম অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে তার আবেদনপত্রে লিখেছেন, ‘আমি চীনের শানডং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছি। এই আবেদনটি আমার। আমাকে উহানে যেতে সহায়তা করুন এবং সেখানে প্রতিকূল অবস্থায় থাকা মানুষদের সহায়তা করার সুযোগ করে দিন।’
জেরিন ইমামের লেখা চিঠির একটি কপিও দেওয়া হয়েছে পোস্টের সঙ্গে। তাতে দেখা যায়, চিঠিটি জেরিন লিখেছেন ২৪ ফেব্রুয়ারি। তবে ঠিক কবে তিনি চিঠিটি দূতাবাসে জমা দিয়েছেন, তা জানা যায়নি।
আবেগঘন চিঠিতে জেরিন লিখেছেন, আমি আমার অন্তরের অন্তঃস্তল থেকে জানাতে চাই, আমার নিজের দেশ বাংলাদেশকে যতটা ভালোবাসি, ঠিক ততটাই ভালোবাসি চীনকে। সে কারণেই এই চিঠিটি আমি লিখছি।
জেরিন লিখেছেন, চীনে যেদিন প্রথম গিয়েছি, সেই দিনটি রৌদ্রজ্জ্বল হলেও আমার কাছে ছিল নিকষ কালো রাতের মতো। আমি ভাষা জানতাম না, পথচলার মতো সক্ষমতা আমার ছিল না। বেঁচে থাকাটা ভীষণ সংগ্রামের মনে হচ্ছিল। ঠিক ওই সময় আমাকে যারা চীনা ভাষা শিখিয়েছেন, আমার কাছে তারা মায়ের মতো। আমিও তাদের কাছে নবজাতকের মতোই ছিলাম। তারা আমার মুখে ভাষা দিয়েছেন। আমার মুখে চীনা ভাষায় আধো বোল ফোটানোর জন্যও তারা আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন।
জেরিন চীনে যতদিন ছিলেন, সেই সময়গুলোতে বিভিন্ন সময় তার সংস্পর্শে আসা মমতাময় মানুষগুলোর কথা তুলে ধরেছেন। দেশ আর পরিবার থেকে হাজার মাইল দূরে থাকলেও ওই মানুষগুলোই তার পরিবারে পরিণত হয়েছিল বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
চীনের সেইসব মানুষদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে জেরির লিখেছেন, তোমরা আমাকে অনেক কিছুই দিয়েছ, যার প্রতিদান হয়তো কখনো দিতে পারব না, তবে সেই ঋণের কথা কখনো ভুলবও না। এখনকার এই কঠিন সময়ে (করোনাভাইরাস পরিস্থিতি) আমি তোমাদের বলতে চাই, তোমরা একাকী নও। যেকোনো প্রয়োজনে আমি তোমাদের পাশে আছি। হতে পারি আমি কেবলই এক ক্ষুদ্র মানুষ, হয়তো খুব শক্তিমত্তাও আমার নেই। তবে আমার হৃদয় আছে, সাহস আছে, যার পুরোটাই তোমাদের আর মৃত্যুর মাঝে দাঁড়িয়ে লড়াই করার জন্য প্রস্তুত।
ঢাকায় চীনা দূতাবাসের ফেসবুক পেজে জেরিনকে নিয়ে দেওয়া এই পোস্টে সবাই প্রশংসায় ভাসিয়েছেন তাকে। তারা বলছেন, এমন মহানুভবতার দেখা আজকের এই দিনে খুব কমই দেখা যায়।