বিজিবি সদস্যসহ ৫ জনের মৃত্যু, ময়নাতদন্ত শেষে মৃতদেহ হস্তান্তর
৪ মার্চ ২০২০ ১১:০৮
খাগড়াছড়ি: খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় বিজিবি ও গ্রামবাসীর সংঘর্ষে নিহতদের মৃতদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া বিজিবির জওয়ান শাওনের মৃতদেহ তার নিজ জেলা বরগুনার বেতাগীতে পাঠানো হয়েছে।
বুধবার (৪ মার্চ) সকাল ৮টার দিকে বিজিবির গুলিতে নিহত চারজনের মৃতদেহ স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পরে সকাল ১০টায় আলুটিলা বটতলী মাঠে ওই চারজনসহ হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া এক নারীর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে মঙ্গলবার (৩ মার্চ) রাতেই নিহতদের মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়।
মাটিরাঙা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শামছুদ্দিন ভুইয়া জানান, এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত বিজিবি বা গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি। এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি থাকলেও পর্যাপ্ত পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। কেউ মামলা করলে তা রেকর্ড করা হবে বলেও জানান ওসি।
জানা গেছে, মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে বিদ্যুৎ লাইনের জন্য কাটা পড়া কাঁঠাল গাছ ট্রলিতে করে চেরাই করার জন্য গাজিনগর বাজারের কাঠের মিলে নিয়ে যাচ্ছিলেন সাহাব মিয়া, তার ছেলে আলী আকবর ও আহমদ আলী। গাজীনগর এলাকায় বিজিবির পলাশপুর জোনের একটি দল তাদের ট্রলি আটকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এ নিয়ে বিজিবির সঙ্গে সাহাব মিয়ার পরিবারের সদস্যদের কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে তাদের ওপর গুলি চালানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই এক বিজিবি সদস্যসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়।
নিহতরা হলেন, মাটিরাঙা উপজেলার গাজীনগর এলাকার মো. সাহাব উদ্দিন মিয়া (৫৫), তার বড় ছেলে আলী আকবর (২৭) ও ছোট ছেলে আহমদ আলী (২৪), একই এলাকার সিরাজ মিস্ত্রির ছেলে মফিজ মিয়া (৫০) এবং বিজিবি সদস্য শাওন। পরে দুই ছেলে ও স্বামীর মৃত্যুর খবর শুনে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান সাহাব উদ্দিনের স্ত্রী রঞ্জু বিবি।
এ ঘটনার পরে এক বিজ্ঞপ্তিতে বিজিবি বলে, ‘মঙ্গলবার আনুমানিক ১১টা ৪৫ মিনিটে খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার গাজীনগর বাজার হতে ১০০ গজ দক্ষিণে বিজিবির একটি টহল দল অবৈধ কাঠ পাচাররোধে ব্যবস্থা নিলে বেসামরিক স্থানীয় লোকজন বিজিবি টহল দলকে ঘিরে ধরে। এতে বিজিবির টহল দল ও বেসামরিক জনগণের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। উত্তেজনাকর পরিস্থিতি, বিজিবির এক রাউন্ড ফাঁকা ফায়ার ও ধাক্কাধাক্কির রেশ ধরে এক পর্যায়ে বেসামরিক লোকজন বিজিবির অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে অনিয়ন্ত্রিতভাবে গুলি বর্ষণ করে। আলোচ্য ঘটনায় বিজিবির সিপাহী শাওন ও ৫ জন বেসামরিক জনগণের গায়ে গুলি লাগে। ফলশ্রুতিতে বিজিবি সদস্য শাওন ও বেসামরিক ৪ জন মৃত্যুবরণ করে।’
সামগ্রিক ঘটনার তদন্ত শেষে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানিয়েছে বিজিবি।
তবে বিজিবির এই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন স্থানীয়রা। তাদের দাবি, গাছ পাচার করার কোনো ঘটনা ঘটেনি।
খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস, পুলিশ সুপার আব্দুল আজিজ, গুইমারা রিজিয়নের কমান্ডার মোহাম্মদ শাহরিয়ার জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন। তারা সবাইকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানান।