সাগর-রুনি হত্যা: কার্যতালিকা থেকে তানভীরের আবেদন বাদ
৪ মার্চ ২০২০ ১১:৪৩
ঢাকা: সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলার আসামি তানভীরের নাম বাতিল চেয়ে করা আবেদন কার্যতালিকা বাদ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বুধবার (৪ মার্চ) সাগর-রুনি হত্যা মামলার শুনানি নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ প্রশ্ন তোলায় বিচারপতি এম এনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ মামলাটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দেন।
এদিন শুনানির শুরুতেই এই মামলায় আদালতের শুনানির এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলে রাষ্ট্রপক্ষ। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার এ প্রশ্ন তোলেন।
হাইকোর্ট তার আদেশে বলেন, ‘এ মামলার সর্বশেষ অবস্থা এবং আসামি তানভীরের সঙ্গে সম্পৃক্ততা জানাতে নির্দেশ দিয়েছিলাম। তদন্তকারী কর্মকর্তা আদেশ প্রতিপালন করে হলফনামা আকারে প্রতিবেদন দাখিল করে। রাষ্ট্রপক্ষের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার শুনানির শুরুতে আদালতের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। আমরা আমাদের এখতিয়ার সম্পর্কে অবহিত। এই আদালতের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে যে, এই গঠনবিধির অব্যাহতির আগের গঠনবিধির কোনো আংশিক বা রায় প্রদানের জন্য থাকলে গ্রহণ করবে। যেহেতু রুলটি চলমান সেহেতু আমাদের বিবেচনায় মামলার শুনানি ও প্রয়োজনীয় আদেশ প্রদানে এখতিয়ারগত কোনো বাধা নেই। তারপরও যেহেতু রাষ্ট্রপক্ষ আদালতের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এ বিবেচনায় আমরা মামলার কোনো আদেশ না দিয়ে সেটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দিলাম।’
আরও পড়ুন- সাগর-রুনি হত্যায় ২ অপরিচিত পুরুষ জড়িত: অগ্রগতি প্রতিবেদনে র্যাব
তবে এই মামলার আসামিপক্ষের তানভীরের আইনজীবী ফাওজিয়া করিম জানান, তারা এই বেঞ্চেই শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করবেন।
এদিকে আদেশের পর মামলার বাদী রুনির ভাই নওশের আলম রোমান বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম নতুন কিছু একটা দেখব। কিন্তু আমরা হতাশ হলাম। আবার প্রমাণ হলো- মামলা পরিচালনায় রাষ্ট্রপক্ষ আন্তরিক না। মামলার বিচারকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।’
এর আগে সোমবার (৪ মার্চ) আলোচিত এই হত্যা মামলার অগ্রগতি প্রতিবেদন অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে জমা দেয় র্যাব। র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তবে ওদিন অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের কোনো কর্মকর্তা এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
আরও পড়ুন: সাগর-রুনি হত্যার ৮ বছর, ৭১ বারেও ফিরে গেল তদন্ত প্রতিবেদন
অগ্রগতি প্রতিবেদনে বলা হয়, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যায় দুই অপরিচিত পুরুষ জড়িত ছিল। সাগর ও রুনির পোশাকে তাদের ডিএনএ পাওয়া গেছে। তবে ডিএনএ প্রতিবেদন এখনও পাওয়া যায়নি।
একাধিক সূত্র জানায়, মামলার অন্যতম আসামি তানভীর রহমানের আচরণ রহস্যজনক বলে উল্লেখ করা হয়েছে অগ্রগতি প্রতিবেদনে। এই মামলায় তাকে বিচারিক আদালতে ব্যাক্তিগত হাজিরা থেকে রেহাই দেওয়া যুক্তিযুক্ত হয়নি।
এর আগে, গত ১৪ নভেম্বর এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে ৪ মার্চ বা তার আগে এ মামলার তদন্তের সর্বশেষ অবস্থা জানাতে এবং সাগর-রুনি হত্যা মামলায় আটক আসামি তানভীরের জড়িত থাকার বিষয়ে একটি প্রতিবেদন হলফনামাসহ দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। তারই পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপক্ষ আজ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে।
এ মামলায় সন্দেহভাজন আসামি মো. তানভীর রহমানের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত রুল জারি করেন এবং গত ৬ নভেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করেন। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র্যাবের অতিরিক্ত ডিআইজি খন্দকার শফিকুল আলম হাইকোর্টে হাজির হলে মামলার তদন্ত প্রতিবেদনের অগ্রগতি সম্পর্কে জানান।
আরও পড়ুন- ‘জাস্টিস ডিলেইড ইজ জাস্টিস ডিনাইড’
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারোয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি। পরের দিন ভোরে তাদের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় রুনির ভাই বাদী হয়ে আদালতে একটি মামলা করেন। প্রথমে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন শেরেবাংলা নগর থানার একজন উপপরিদর্শক (এসআই)। পরে চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার তদন্তের ভার দেওয়া হয় গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি)।
দুই মাসেরও বেশি সময় তদন্ত করে ডিবি রহস্য উদঘাটনে ব্যর্থ হয়। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল হত্যা মামলাটির তদন্তভার র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু হত্যার আট বছর পেরিয়ে গেলেও প্রতিবেদন জমা পড়েনি আদালতে।
এই মামলায় ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি, ওই বছরের ৭ জুন, ২০১৬ সালের ২ অক্টোবর ও সর্বশেষ ২০১৭ বছরের ২১ মার্চ তদন্তে অগ্রগতি হচ্ছে বলে আদালতের কাছে সময় চান তদন্ত কর্মকর্তা। যদিও এসব অগ্রগতি সংক্রান্ত প্রতিটি প্রতিবেদনে প্রায় একই ধরনের তথ্য ছিল।
আরও পড়ুন- সাগর-রুনি হত্যা মামলা কি চাঞ্চল্যকর থেকে যাবে, প্রশ্ন হাইকোর্টের
এ মামলায় রুনির বন্ধু তানভীর রহমানসহ মোট আসামি আটজন। অন্য আসামিরা হলেন- বাড়ির নিরাপত্তারক্ষী এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবির, রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান অরুণ, পলাশ রুদ্র পাল ও আবু সাঈদ। আসামিদের প্রত্যেককেই একাধিকবার রিমান্ডে নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে তাদের কেউই আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেননি। এ পর্যন্ত এ মামলার তদন্তে ১৫৮ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে র্যাব।