নারী-পুরুষ সমতা মিথ, সাম্য অর্জন করতে পারি: অ্যারোমা দত্ত
৬ মার্চ ২০২০ ০০:২৫
ঢাকা: নারী ও পুরুষের মধ্যে সমতা অর্জনকে ‘মিথ’ বলে অভিহিত করেছেন সংসদ সদস্য অ্যারোমা দত্ত। তিনি বলেন, নারী ও পুরুষের সমঅধিকারের ক্ষেত্রে নানা অর্জন থাকলেও সমতা (ইকুয়ালিটি) অর্জন পুরোপুরি সম্ভব নয়। এটি একটি মিথ। বরং আমরা এক্ষেত্রে সাম্য (ইক্যুইটি) অর্জন করতে পারি।
বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে নারী দিবসের এক আয়োজনে তিনি এ কথা বলেন।
অ্যারোমা দত্ত বলেন, বাংলাদেশে মেয়েরা যেভাবে এগিয়ে এসেছে, তা সারাবিশ্বের কাছে রোল মডেল হিসেবে দাঁড়িয়েছে। তবে ইক্যুইটি অর্জনের জন্য আমাদের সমাজের মানসিকতা (মাইন্ডসেট) বদলাতে হবে। আর সমাজের গভীর থেকে পরিবর্তনের জন্য আমাদের পাঠ্যসূচি ও পাঠ্যবইতে বদল আনতে হবে। পাঠ্যসূচিতে নারী ও পুরুষের পেশা নির্দিষ্ট করে না দেখিয়ে মেয়েরা যে সব পারে, সেটিও তুলে ধরার তাগিদ দেন তিনি।
এই সংসদ সদস্য বলেন, রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন একশ বছর আগে বলেছিলেন, এ দেশে নারীরা ভাইসরয়, ব্যারিস্টার, ম্যাজিস্ট্রেট হবে। আজ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে প্রশাসন, রাজনীতি, সামরিক-বেসমারিক সব জায়গায় নারীরা পৌঁছে গিয়েছেন। আরও বেশি অগ্রগতির জন্য সময় প্রয়োজন।
রাজনীতিতে নারীর অবস্থান বিষয়ে অ্যারোমা দত্ত বলেন, নারীরা অনেক এগিয়ে এসেছে। তবে রাতারাতি কিছু হয় না। রাজনীতিতে ১০ বছর আগের তুলনায় নারীর উপস্থিতি বেড়েছে। সামনের দিনগুলোতে আরও নারী রাজনীতিতে আসবে।
বর্তমান সময়ে মা-বাবা দু’জনেই চাকরি করলেও সন্তানের জন্য অধিকাংশ সময়ে মাকেই চাকরি ছাড়তে হয়। এ প্রসঙ্গে সন্তানের লালন-পালনে রাষ্ট্রকে আরও বেশি এগিয়ে আসার পক্ষে মত দেন অ্যারোমা দত্ত। তিনি বলেন, আরও বেশি দিবাযত্ন কেন্দ্র (ডে-কেয়ার সেন্টার) থাকলে নারীদের জন্য এগিয়ে যাওয়া সহজ হবে।
অনুষ্ঠানের সূচনা বক্তব্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক সুদীপ্ত মুখার্জী বলেন, নারী দিবসের প্রাক্কালে আমাদের তিনটি বিষয়ে নজর দিতে হবে। প্রথমত, নারীদের দেখার দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। ভাঙতে হবে প্রচলিত ধ্যানধারণা। মেয়েরা কী করবে, কী পরবে বা কীভাবে চলবে— সেই সিদ্ধান্ত তাকেই নিতে দিতে হবে, সমাজ নির্ধারণ করে দিতে পারবে না। আর দৃষ্টিভঙ্গি শুধু পুরুষদেরই নয়, নারীদেরও বদলাতে হবে। দ্বিতীয়ত, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা রোধে আমাদের আরও বেশি সাহস ও সততা দেখাতে হবে। পরোক্ষ নিষ্ক্রিয়তা বর্জন করার এখনই সময়। তৃতীয়ত, বেতনবিহীন কাজ অর্থাৎ রান্নাবান্না, সন্তানের দেখাশোনা, বাসন মাজা ইত্যাদিকে নারীর ওপর চাপিয়ে না দিয়ে সমানভাবে পুরুষকেও করতে হবে।
জাতিসংঘের নারী বিষয়ক সংস্থা ইউএন উইমেনের এ দেশীয় প্রতিনিধি শোকো ইশিকাওয়া বলেন, নারী ও পুরুষের মধ্যে সাম্য আনতে গেলে সবাইকেই একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আর তা এখনই করতে হবে। এ বিষয়ে সম্মতি, যৌনতা, লিঙ্গ, তথাকথিত পৌরুষ ইত্যাদি দিয়ে খোলামেলা কথা বলতে হবে। পরিবর্তনের জন্য ‘মি টু’র মতো গণআন্দোলন ভূমিকা রেখেছে এবং এরকম আরও গণআন্দোলন প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন প্রজন্মের নারীদের মধ্যে একটি সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন উদ্যোক্তা তাসলিমা মিজি, সরাবন তহুরা, সাবেক ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় কামরুন্নাহার ডানা, ক্রিকেটার ও ক্রিকেট ধারাভাষ্যকর সাথিয়া জাকির জেসি ও জাতীয় ফুটবল দলের একজন সদস্য। তারা ব্যবসা ও খেলাধুলার জগতে এগিয়ে আসার ক্ষেত্রে মেয়েদের নানা প্রতিবন্ধকতার কথা তুলে ধরেন। এসব বাধা পেরিয়ে উত্তরণের পথ নিয়েও আলোচনা করেন।
সবশেষে ট্রানসজেন্ডার বা রূপান্তরকামী নারী ও পুরুষদের একটি পরিবেশনা দিয়ে শেষ হয় এই আয়োজন।
অ্যারোমা দত্ত নারী দিবস নারী পুরুষ নারী-পুরুষ সমতা নারী-পুরুষ সাম্য সংসদ সদস্য অ্যারোমা দত্ত