দেশের রফতানি আয়ে বড় ধস
৬ মার্চ ২০২০ ০০:২০
ঢাকা: চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে রফতানি আয়ে বড় রকমের হোঁচট খেয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ২ হাজার ৬২৪ কোটি ১৮ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪.৭৯ শতাংশ কম। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কমেছে ১২.৭২ শতাংশ। বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা দেখা গেছে, অর্থবছরের শুরু হয়েছিল রফতানি প্রবৃদ্ধি দিয়ে। প্রথম মাস জুলাইয়ে পণ্য রফতানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে পূর্বের অর্থবছরের চেয়ে রফতানি আয়ও বেশি হয়েছিল। তবে প্রথম মাসে ভালো প্রবৃদ্ধির পর দ্বিতীয় মাসেই হোঁচট খায় রফতানি আয়। আর সেই হোঁচটের ধারা থেকে ৮ মাসেও ঘুরে দাড়াতে পারেনি দেশের রফতানি আয়। সেই সঙ্গে সম্প্রতি নতুন করে যোগ হয়েছে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের প্রভাব। দেশের রফতানি আয়েও তার প্রভাব দেখা যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
রফতানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক সংশ্লিষ্টরা গত কয়েক মাস ধরেই বলে আসছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগী সৃষ্টি হওয়ার কারণে আয় কমছে। আয় কমার পেছনে কম মূল্যে অর্ডার নেওয়াও ভূমিকা রাখছে। তবে সম্প্রতি তারা করোনাভাইরাসের কারণেও শঙ্কা দেখছেন। উপকরণ প্রাপ্তি, ঠিক সময়ে পণ্য ডেলিভারি ও অর্ডার প্রাপ্তি নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়ে আসছিলেন পোশাক সংশ্লিষ্টরা।
ইপিবির তথ্য বলছে, ফেব্রুয়ারি মাসে প্রবৃদ্ধি ও লক্ষ্যমাত্রা কোনটাই স্পর্শ করতে পারেনি দেশের তৈরি পোশাক খাত।
চলতি অর্থবছরের ৮ মাসে ২ হাজার ১৮৪ কোটি ৭৫ লাখ ডলারের পোশাক রফতানি হয়েছে। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৫.৫৩ শতাংশ কম। একই সঙ্গে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আয় কমেছে ১৩.৪৫ শতাংশ। এদিকে একক মাস হিসেবে ফেব্রুয়ারিতে রফতানি আয় অর্জিত হয়েছে ৩৩২ কোটি ২৩ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৭২ কোটি ২০ লাখ ডলার।
ইপিবি’র প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে সব ধরনের পণ্য রফতানিতে বৈদেশিক মুদ্রার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৫৫০ কোটি মার্কিন ডলার। আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের রফতানি আয় ৪ হাজার ৫৩ কোটি ৫০ লাখ ৪ হাজার ডলার। চলতি অর্থবছর প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) রফতানির আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এই আট মাসে রফতানি আয় এসেছে ২ হাজার ৬২৪ কোটি ১৮ লাখ মার্কিন ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১২.৭২ শতাংশ কম।
২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে রফতানি আয় অর্জিত হয়েছিল ২ হাজার ৭৫৬ কোটি ২৭ লাখ ডলার। সে হিসেবে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি কমেছে ৪.৭৯ শতাংশ। এদিকে একক মাস হিসেবে ফেব্রুয়ারিতে রফতানি আয় ও লক্ষ্যমাত্রা কোনটাই পূরণ হয়নি।
ফেব্রুয়ারিতে মোট রফতানি আয় অর্জিত হয়েছে ৩৩২ কোটি ২৩ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৭২ কোটি ২০ লাখ ডলার। সে হিসেবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কমেছে ১০.৭৪ শতাংশ। একই সঙ্গে ১.৮০ শতাংশ কম প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ফেব্রুয়ারি মাসে।
জানা যায়, দেশের রফতানি আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। এই খাত থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রফতানি আয় এসেছিল ৩ হাজার ৪১৩ কোটি ৩২ লাখ ডলার। ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে তৈরি পোশাক খাতে পণ্য রফতানি থেকে আয় অর্জিত হয়েছে ২ হাজার ১৮৪ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে আয় এসেছিল ২ হাজার ৩১২ কোটি ৬৩ লাখ ডলার। সে হিসেবে এ খাতে প্রবৃদ্ধি কমেছে ৫.৫৩ শতাংশ। প্রবৃদ্ধি কমার পাশাপাশি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি তৈরি পোশাক খাত। লক্ষ্যমাত্রা কমেছে ১৩.৪৫ শতাংশ।
ইপিবির তথ্য বলছে, গত আট মাসে নিট পোশাক রফতানি থেকে আয় এসেছে ১ হাজার ৮৯ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫.১৭ শতাংশ কম। একই সঙ্গে লক্ষ্যমাত্রা কমেছে ১২.৫০ শতাংশ। অন্যদিকে ওভেন পোশাক রফতানি করে আয় হয়েছে ১ হাজার ৯৪ কোটি ৮৮ লাখ ডলার। যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৫.৮৮ শতাংশ কম। পাশাপাশি ১৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা কমেছে ওভেনে।
তবে মন্দাভাবের এই সময়ে সুখবর দিচ্ছে পাটপণ্যের রফতানি আয়। ইপিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি ২৪.৪৫ শতাংশ ও লক্ষ্যমাত্রা থেকে আয় বেড়েছে ২৮.১২ শতাংশ। এ সময়ে এ খাত থেকে আয় এসেছে ৬৯ কোটি ৭৬ লাখ ডলার।
এদিকে, চামড়া রফতানিতেও নেতিবাচক প্রবণতা রয়েছে। অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে ৯.৪ শতাংশ কম প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে চামড়াজাত পণ্য রফতানিতে। এ খাত থেকে আয় এসেছে ৬৩ কোটি ১৮ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রফতানি আয় কমেছে ১২ দশমিক ৫১ শতাংশ। গত অর্থবছর জুড়েও চামড়াজাত পণ্য রফতানিতে আয় ও লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।
এছাড়া গত আট মাসে প্লাস্টিক পণ্যে প্রবৃদ্ধি কমেছে ১.৮ শতাংশ। এ সময়ে আয় হয়েছে ৭ কোটি ৫৪ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ২৩.৯১ শতাংশ কম। গত ৭ মাসে হোম টেক্সটাইল খাতে প্রবৃদ্ধি ও লক্ষ্যমাত্রা দুটিই কমেছে। এ সময় আয় এসেছে ৫২ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই ফেব্রুয়ারি মাস শেষে কৃষি পণ্য রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি বাড়লেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। এ খাত থেকে আয় এসেছে ৬৬ কোটি ৭৩ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রফতানি আয় কমেছে ৯.৮৩ শতাংশ। অন্যদিকে আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ৩.৮৩ শতাংশ।