পাট মরেনি, আবার জেগেছে: বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী
৬ মার্চ ২০২০ ১২:৪৩
ঢাকা: বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক বলেছেন, সবাই ভেবেছিল পাট মরে গেছে। কিন্তু পাট মরেনি, আবারও জেগে উঠেছে। যার বড় প্রমাণ চলতি অর্থ বছরে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন।
শুক্রবার (৬ মার্চ) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর অফিসার্স ক্লাবে পাট দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এ সব কথা বলেন।
বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, ‘প্রতিবছর ৬ মার্চকে জাতীয় পাট দিবস ঘোষণা দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অনেক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে পাট পণ্যের বিস্তার ঘটেছে। অনেকে আগে বলত পাট মরে গেছে, কিন্তু এখন থেকে মনে করতে হবে পাঠ জেগে উঠেছে। কারণ চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্যে ৬শ ১৬ দশমিক ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের রফতানি আয় করেছি আমরা। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২০ দশমিক ৮২ শতাংশ বেশি।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘প্লাস্টিকজাত পণ্যের অতি ব্যবহারের ফলে পরিবেশের ক্ষতি বেড়েছে। পরিবেশ রক্ষায় পাটের তৈরি বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদন করছে বাংলাদেশ। আমরা ইতোমধ্যে ২৮২টি বহুমুখী পণ্য উৎপাদন করছি। যা অনেকেই জানেন না। তাদের কাছে অনুরোধ আপনারা পাট মেলায় যাবেন এবং পাট সম্পর্কে জানবেন। সেখানে গেলে কোনো না কোনো পণ্য আপনাদের পছন্দ হবেই, এ বিশ্বাস আমাদের আছে।’
এ সময় পাটখাতে অংশীজন সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন মন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী বলেন, ‘একটা সময় আমরা পাট দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতাম। কিন্তু আমরা সে অবস্থান ধরে রাখতে পারিনি। এখন আমরা আবারও ঘুরে দাঁড়িয়েছি। আমাদের পাটের সোনালি আঁশের স্বপ্ন শুরু হয়েছে। এটি আমরা নিশ্চিত করব। আর বেশিদিন নেই যেখানে বিশ্ব বাজারে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হবে।’
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের অনেকের ধারণা ছিল পাট দিয়ে বস্তা-ছালা এ সব হয়। কিন্তু এখন ধারণা পাল্টেছে। এখন পাট দিয়ে বিভিন্ন রকমের গিফট আইটেম তৈরি হয়। আমাদের দেশে যখন বিদেশি কোনো কুটনীতিক আসে তখন আমরা তাদেরকে পাটের তৈরি বিভিন্ন গিফট আইটেম দিয়ে থাকি। তারা সেগুলো সে দেশে নিয়ে যায় এব বিশ্বময় এগুলো তুলে ধরেন। এটিও আমাদের একটা অর্জন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জানি, অনেক কষ্টে চাষিরা এ পাটের শিল্পকে টিকিয়ে রেখেছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে অনেক সচেষ্ট। তাই পাটের উৎপাদন যেন আরও বাড়ানো যায় সে জন্য পাট মন্ত্রণালয়কে যথেষ্ট দিক-নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। আমার বিশ্বাস খুব শিগগিরই আমরা পাটের সোনালি দিন ফিরিয়ে আনতে পারব। আজকে জাতীয় পাট দিবসে সোনালি আঁশ যেন আমাদের মনে আশা জাগায় সে প্রত্যাশা আমাদের।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, ‘এ দেশে এক সময় সোনালী আঁশ ছিল পাট। কিন্তু ৭৫ পরবর্তী সময়ে পাট শিল্প অবহেলিত খাতে পরিণত হয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সরকার গঠনের পর পাটকে নিয়ে নতুন ভাবনা শুরু হয় এবং পাটের সোনালি ভবিষ্যৎ কীভাবে কাজে লাগানো যায় সেটি নিয়ে কাজ শুরু হয়। বিশ্বসেরা ফুটবলার রোনালদোর পায়ের সু বাংলাদেশের পাট দিয়ে বাংলাদেশে তৈরি হয়। যেটি আর কোথাও বিক্রি হয় না। সরাসরি তাদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয় উৎপাদনের পর ‘
‘তাই সবার কাছে অনুরোধ আমরা যখন প্রিয়জনকে উপহার দিই এবং বিদেশিদেরকে গিফট আইটেম পাঠায় সে সময় যেন পাটের পণ্য দেওয়া হয়। এতে পাটের বিস্তার ঘটবে’ বলেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব।
এ সময় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মির্জা আজম, পাট অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) সওদাগর মোস্তাফিজুর রহমানসহ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠান শেষে চারদিনব্যাপী পাট মেলার উদ্বোধন ঘোষণা করেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক। এ সময় তিনি মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখেন।
এর আগে বস্ত্র ও পাট খাতে বিশেষ অবদানের জন্য ১১টি ক্যাটাগরিতে ১১ জনকে পুরস্কৃত করা হয়।