২৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে হচ্ছে ফুল গবেষণা কেন্দ্র
৭ মার্চ ২০২০ ০৮:০০
ঢাকা: পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি মানুষ ফুল ভালোবাসে। আগে আমাদের দেশে ফুলের তেমন কদর ছিল না। বর্তমানে এর চাহিদা অনেক বেশি। এখন যেকোনো অনুষ্ঠানে ফুলের ব্যবহার আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। সেজন্য সরকার ফুল চাষের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে চায়। ফুল চাষে এর আগে নানা উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছে। তবে এবার বড় পরিসরে চিন্তা করছে সরকার। আর এজন্য গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ‘যশোর জেলার ঝিকরগাছায় ফুল গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন’ নামের একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এটি বাস্তবায়নে প্রাথমিক খরচ ধরা হয়েছে ২৩০ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
ফুল গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে ২০২৪ সালের মধ্যে দেশে ফুল ও শোভাবর্ধনকারী উদ্ভিদের উৎপাদন ২০ শতাংশ বৃদ্ধি এবং ফুল জাতীয় পণ্য সংগ্রহের পর ১৫ শতাংশ ক্ষতি কমিয়ে আনা যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে- যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলায় ২০ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ, একটি পূর্ণাঙ্গ ও যুগোপযোগী ফুল গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের জন্য অফিস ভবন, আবাসিক ভবন, সেচ অবকাঠামো, বিদ্যুৎ অবকাঠামো, অভ্যন্তরীণ রাস্তা ও ফার্মের অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ, গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করার জন্য টিস্যু কালচার ল্যাব, পোস্টহার্ভেস্ট ল্যাব ও এনালাইটিক্যাল স্থাপন, প্রয়োজনীয় যানবাহন, ফার্ণিচার, ল্যাব ও মাঠ যন্ত্রপাতি সংগ্রহ, বিভিন্ন ফুল ও শোভাবর্ধনকারী উদ্ভিদের ৫০০টি জার্মপ্লাজম সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং মূল্যায়ন, ফুলের ১০টি উন্নত জাত এবং ২০টি প্রযুক্তি উদ্ভাবন।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, প্রকল্পটির অনুমোদন প্রক্রিয়া চলছে। এরই মধ্যেই প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরবর্তী প্রক্রিয়া এগিয়ে চলছে।
এদিকে কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশের আবহাওয়া ও মাটি ফুল চাষের জন্য অত্যন্ত সহায়ক। বর্তমানে দেশে প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হচ্ছে। ৫০ হাজার কৃষক ফুল চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত। প্রায় ১০ লাখ লোকের জীবন-জীবিকা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ফুল বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল। বাণিজ্যিক ফুল চাষে গ্রামীণ মহিলা ও বেকার যুবকদের কর্মস্থানও হচ্ছে। ঝিকরগাছা উপজেলাসহ যশোর জেলার বির্স্তীর্ণ এলাকায় চাষ হচ্ছে নানা জাতের ফুল। এই ফুল দেশের চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশ যোগান দিচ্ছে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা মিটিয়ে বাংলাদেশের ফুল এখন আন্তর্জাতিক বাজারেও পরিচিত লাভ করেছে। স্বল্প পরিসরে হলেও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে পান পাতাসহ ফুল রফতানির পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ৭১ মিলিয়ন ডলার। ভবিষ্যতে এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপেও ফুল রফতানির যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এদেশে ফুল চাষকে একটি লাভজনক শিল্প হিসেবে গড়ে তোলার ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। শুধুমাত্র আবহাওয়াই নয়, তলনামূলক কম পুঁজি বিনিয়োগ ও পণ্যের উচ্চমূল্যও অন্যতম কারণ। লাভজনক এ ফসলটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে চাষীদের নিজস্ব উদ্যোগে চাষ হয়ে আসছে। এতে চাষীরা বিভিন্ন ধরনের প্রতিকূলতার সম্মুখীন হচ্ছেন। ফুলের উন্নত জাত, ভালো বীজ চারা, আধুনিক প্রযুক্তি, মানসম্মত উপকরণ, কার্যকর সংগ্রহ ব্যবস্থাপনা, প্রযুক্তির অভাব এবং আধুনিক মানের অবকাঠামোর সুযোগ-সুবিধার ঘাটতি এ শিল্পের প্রসারে সবচেয়ে বড় বাধা। এ সব বাধা দূর করে ফুল শিল্পকে সমৃদ্ধ করা প্রয়োজন, যাতে দেশের চাহিদা মিটিয়ে ফুল রফতানিযোগ্য পণ্য হিসেবে আর্ন্তজাতিক বাজারে প্রবেশ করতে পারে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও ১০টি ফুলের ১৯টি জাত উদ্ভাবন করেছে এবং ফুল ও শোভাবর্ধনকারী উদ্ভিদের চাষ পদ্ধতি, ফুল সংগ্রহ প্রযুক্তি, প্যাকেজিং ইত্যাদি সম্পর্কিত ২০টি কলাকৌশল উদ্ভাবন করেছে। ফুল গবেষণা কার্যক্রমকে আরও বেগবান করার জন্য যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলায় ফুল গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনে প্রকল্পটির প্রস্তাব করা হয়েছে।
কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম বলেন, ‘বাংলাদেশে ফুল চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া দেশে এখন ফুলের ব্যবহার অনেক বেড়েছে। পাশাপাশি বিদেশে রফতানিরও সুযোগ রয়েছে। ফুলে বাণিজ্য বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর চাষও ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী।’