Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৭ মার্চের আগে একসঙ্গে এত মানুষ আমরা দেখিনি: মির্জা আব্বাস


৭ মার্চ ২০২০ ১২:০৭

ঢাকা: সাত মার্চের মহাকাব্যিক ভাষণ শুনতে সেদিন যারা রেসকোর্স ময়দানে গিয়েছিলেন, যাদের স্থান হয়েছিল মূল মঞ্চে, অথবা যারা মঞ্চের খুব কাছে বসে শুনেছিলেন বাংলার রাখাল রাজা, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই অমরকবিতাখানি, তাদের অনেকেই পরবর্তী সময় বাংলাদেশের রাজনীতিতে কিংবদন্তি হয়ে ওঠেন এমপিমন্ত্রী তো বটেই, দেশের বড় বড় রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা, নীতিনির্ধারক, দলীয় প্রধান তথা জাতীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হন এদের কেউ আওয়ামী লীগ, কেউ বিএনপি, কেউ গণফোরাম, কেউ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), কেউ জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব দিয়েছেন, দিচ্ছেন অথবা বড় পদে আছেন

বিজ্ঞাপন

তাদেরই একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা মির্জা আব্বাস সেদিনের সেই ২০ বছর বয়সী টগবগে তরুণ এখন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য দায়িত্ব পালন করেছেন ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে মন্ত্রীও হয়েছেন একবার ঢাকা আসনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যও ছিলেন তিনি

আজকের বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস ১৯৭১ সালের ৭ মর্চের ঐতিহাসিক ভাষণের দিন কোথায় ছিলেন? প্রশ্নটি করতেই মোবাইল ফোনের ওপ্রান্ত থেকে স্মৃতির ঝাঁপি খুলে দেন একাত্তরের এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্মৃতি হাতড়ে বলতে থাকেন, ‘সে তো অনেক কথা। সাত মার্চের ভাষণ তো একদিনে আসেনি। এর আগে ৬৬ ছয় দফা আছে, ঊনসত্তরের ১১ দফা আছে। বলতে পারো, পাকিস্তানবিরোধী সব আন্দোলন সংগ্রামের সঙ্গেই ছিলাম। কোনো রাজনৈতিক দল বা ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে না থেকেও বাংলাদেশ ইস্যুতে যত আন্দোলন সংগ্রাম, তার সব ক’টাতেই অংশ নিয়েছি।’

‘সেদিনও, অর্থাৎ ৭ মার্চের ভাষণের দিনও মঞ্চের সামনে প্রথম যে বাঁশের ব্যারিকেড বা নিরাপত্তা বেষ্টনী দেওয়া হয়েছিলে সেখানে অবস্থান নিতে পেরেছিলাম। ফলে মঞ্চের খুব কাছাকাছি বসেই ভাষণ শুনেছি। বয়স কম ছিল। আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে স্লোগান দিয়েছি— তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা, বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো,’— বলছিলেন মির্জা আব্বাস।

সেদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (ওই সময় রেসকোর্স ময়দান) আপনার ডানে-বামে, সামনে-পেছনে যারা ছিলেন, তাদের মধ্যে আপনার মতো আর কেউ কি আছেন যারা পরবর্তী সময় একেকজন ‘মির্জা আব্বাস’ হয়ে উঠেছেন?— প্রশ্নটা শুনে কিছুটা বিব্রত হলেন। বিনয়ের সঙ্গে বললেন, ‘না। আমি আর কী হয়েছি! সেদিনের আ স ম আবদুর রব, শাহজাহান সিরাজ, মাখন, নূরে আলম সিদ্দিকী, তোফায়েল আহমেদ তখনই অনেক বড় নেতা। এরা বোধহয় মঞ্চের আশপাশেই ছিলেন। আর মঞ্চে শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে যারা ছিলেন, তারা তো আরও বড়! তাজউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, কামরুজ্জামানের মতো নেতারা। আরও অনেকেই ছিলেন।’

বিজ্ঞাপন

বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠে স্বাধীনতার ডাক, জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে সে ডাক শোনার অনুভূতিটা কেমন?— প্রশ্নের পর কিছু সময়ের জন্য মোবাইল ফোনের ওপ্রান্তে কিছুটা নীরবতা। তারপর বলতে শুরু করলেন মির্জা আব্বাস, ‘আমার সারাটা জীবন গেছে আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। তখন এত কিছু হিসাব করে রাজনীতি করিনি। মার্চ মাসের আগে থেকেই বুঝতে পারছিলাম, পাকিস্তানের সঙ্গে আর থাকা হবে না। আমাদেরকে এখন যুদ্ধ করতে হবে। ৭ মার্চের ভাষণের পর বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয়ে গেল। অর্থাৎ যুদ্ধই একমাত্র মুক্তির পথ। সুতরাং বুঝতেই পারছ, ৭ মার্চের ভাষণ এবং সেদিনের সেই জনসভায় আমরা যারা উপস্থিত ছিলাম, তাদের অনুভূতিটা কেমন হতে পারে।’

‘যাই হোক, তখন সারাদেশে মানুষের সংখ্যা ছিল ৭ কোটি। এদের মধ্যে ঢাকা শহরে বাস করত ২০ বা ২৫ লাখ মানুষ। সেদিক থেকে বিচার করলে ৭ মার্চের ভাষণ শুনতে ঢাকার প্রায় সব মানুষই চলে এসেছিল। ৭ মার্চের আগে একসঙ্গে এত মানুষ আমরা দেখিনি। মানুষের এমন স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের কারণেই স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব হয়েছিল। নির্দিষ্ট কোনো দলের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ নয়, বরং দেশকে স্বাধীন করার জন্য সবাই একিত্রত হয়েছিল,’— বলেন মির্জা আব্বাস।

যুদ্ধে গেলেন কবে? সহযোদ্ধা হিসেবে কাকে কাকে পেয়েছিলেন? ফোনের ও প্রান্ত থেকে উত্তর, ‘জুলাইয়ে। সহযোদ্ধা হিসেবে যারা ছিলেন তাদের মধ্যে আমার বন্ধু সদ্যপ্রয়াত সাদেক হোসেন খোকা অন্যতম। আমি যুদ্ধ করেছি ক্র্যাক প্লাটুনে। আমার সরাসরি কমান্ডার ছিলেন গোলাম দস্তগীর গাজী, আজকে যিনি পাটমন্ত্রী।’

‘ঢাকার অদূরে ত্রিমোহনী-তে একটা সম্মুখযুদ্ধ হয়। সেই যুদ্ধে গোলাম দস্তগীর গাজী আমাদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সেটি ছিল ভয়াবহ যুদ্ধ। সেই ত্রিমোহনী বোধ হয় এখন গাজী সাহেবের নির্বাচনি এলাকা। যুদ্ধের আরও অনেক স্মৃতি আছে। একদিন বাসায় এসো, যুদ্ধের গল্প শোনাব। সেই সঙ্গে ৭ মার্চের ভাষণ নিয়েও কথা বলা যাবে। কোনো রকম প্রিপারেশন ছাড়া এত দিনকার পুরোনো কথা হুবহু বলা মুশকিল। ভালো থেকো।’

৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ মঞ্চের সামনে বসে শোনা এবং পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা মির্জা আব্বাসকে ধন্যবাদ জানিয়ে কেটে দিই ফোন কল। তখনো তার শেষ কথাগুলো কানে বাজছে, ‘বাসায় এসো, যুদ্ধের গল্প শোনাব।’

গোলাম দস্তগীর গাজী বঙ্গবন্ধু মির্জা আব্বাস সাত মার্চ

বিজ্ঞাপন

মাদকের টাকার জন্য মা'কে খুন
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:৫৭

আরো

সম্পর্কিত খবর