অবশেষে গ্রামবাসীর মামলা নিল মাটিরাঙ্গা পুলিশ
৭ মার্চ ২০২০ ১২:১৭
খাগড়াছড়ি: পাল্টাপাল্টি অভিযোগের পর একই পরিবারের তিনজনসহ চার গ্রামবাসীকে হত্যার অভিযোগে বিজিবির বিরুদ্ধে মামলা নিয়েছে মাটিরাঙ্গা থানা পুলিশ।
শুরুতে বিজিবির পক্ষ থেকে মামলা নেওয়া হলেও গ্রামবাসীর মামলা নেওয়া নিয়ে সময়ক্ষেপন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে। এমন পরিস্থিতিতে শুক্রবার (৬ মার্চ) সন্ধ্যা ৭টার দিকে হত্যার অভিযোগে ৪০ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের (বিজিবি) হাবিলদার মো. ইসহাক আলীসহ ৬ জনের নামে মামলা করা হয়।
বিজিবির গুলিতে নিহত মফিজ মিয়ার ছেলে মানিক মিয়া বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
মাটিরাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শামসুদ্দিন ভূইয়া বলেন, মৃত মফিজ মিয়ার ছেলে মো. মানিক মিয়ার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়ে একটি নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। তদন্ত করে এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মামলার এজাহারে ঘটনার দিন গত মঙ্গলবার দুপুরের দিকে মো. মফিজ মিয়াসহ অপরাপর ব্যাক্তিদের মারধর, জখম ও সামনে থেকে গুলি করে হত্যার অভিযোগ আনা হয় বিজিবির হাবিলদার মো. ইসহাক আলীসহ অন্য অভিযুক্ত বিজিবি সদস্যদের বিরুদ্ধে। সাধারণ মানুষকে গুলি করার সময় বাধা দেওয়ায় বিজিবি সদস্য শাওন খানকে গুলি করে হত্যারও অভিযোগ আনা হয় ইসহাক আলীর বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে মানিক মিয়া বাদী হয়ে ৪০ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন (বিজিবি) সদস্যর বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলেও মামলা নিতে চায়নি মাটিরাঙ্গা থানা পুলিশ। এক ঘটনায় দুটি মামলা হবেনা মর্মে জানিয়ে দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শাহনুর আলম। পুলিশ মামলা গ্রহণ না করায় বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে এলাকাবাসী।
পরে শুক্রবার সন্ধ্যায় মামলা নেয় পুলিশ।
মাটিরাঙ্গা পৌরসভার মেয়র মো. শামছুল হক পুলিশকে মামলায় রেকর্ড করায় ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আইনের সেবা পাবার অধিকার সবার আছে। কোনো বাহিনীর সদস্যরা আইনের বাইরে নয়। এখন প্রকৃত তদন্ত, আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’
মঙ্গলবার (৩ মার্চ) সাদের আলীর বাগানের চার টুকরা কাঁঠাল গাছ পরিবহন করার সময় মাটিরাঙ্গার গাজীনগরে বিজিবি সদস্যরা বাধা দেন। এক পর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। এসময় এক বিজিবি সদস্য এলোপাতাড়ি গুলি করেন। ঘটনাস্থলেই মারা যান সাহাব মিয়া ও তার ছেলে মো. আকবর আলী। এ সময় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বিজিবি সদস্য শাওন খান, স্থানীয় আহাম্মদ আলী, মো. মফিজ মিয়া এবং মো. হানিফ মিয়াকে মাটিরাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানেই মারা যান সাহাব মিয়ার আরেক ছেলে আহাম্মদ আলী ও বিজিবি সদস্য শাওন খান। এদিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান আহাম্মদ আলীর শ্বশুর মো. মফিজ মিয়া। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ মো. মফিজ মিয়ার ছেলে মো. হানিফ মিয়া চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
একই ঘটনায় পুলিশ গত বৃহস্পতিবার বিজিবি সদস্য ইসহাক আলীর দায়ের করা মামলা রেকর্ড করেন। ওই মামলায় চার মৃত ব্যক্তিসহ ১৯ জন জ্ঞাত এবং ৭০জন অজ্ঞাতনামা এলাকাবাসীর বিরূদ্ধে হত্যা, অস্ত্র লুঠসহ একাধিক অভিযোগ আনা হয়।