Saturday 19 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আ.লীগের বিদ্রোহীদের পেছনে ‘নিয়ন্ত্রক’ নেতাদের ইন্ধন


৭ মার্চ ২০২০ ১৫:৫৮ | আপডেট: ৭ মার্চ ২০২০ ১৬:১০
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে আওয়ামী লীগে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারে অনড় বিদ্রোহীদের কর্মকাণ্ডে দলের মনোনীত মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরীও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন, এমন আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে নগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে। বিদ্রোহীদের এই অনড় ভূমিকার পেছনে তাদের নিয়ন্ত্রক চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার ইন্ধন আছে বলে আলোচনা চলছে।

চট্টগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বিদ্রোহ দমনে ব্যর্থ হওয়ার পর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে এনে তাদের নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরিস্থিতি এখন এমন পর্যায়ে গেছে, ওবায়দুল কাদেরও বিদ্রোহীদের সঙ্গে কথা বলতে আগ্রহী নন। এমনকি কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকেও তাদের দমনে কোনো উদ্যোগ না নেওয়ার চিন্তাভাবনা আছে দলটির।

বিজ্ঞাপন

জানতে চাইলে চসিক নির্বাচনে সমন্বয়ের দায়িত্ব পাওয়া আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘কাদের ভাই আগামীকাল (রোববার) আসবেন। তবে তিনি বিদ্রোহীদের সঙ্গে কোনো কথা বলবেন না। নেতাদের সঙ্গে ঘরোয়াভাবে বসবেন। বিদ্রোহীরা বিদ্রোহীই। উনারা দলের মনোনীত কেউ নন। তাছাড়া উনারা সবাই মনোনয়ন ফরম নেওয়ার সময়ই পদত্যাগপত্রও জমা দিয়েছেন।’

বিদ্রোহীদের অনড় ভূমিকার বিষয়ে জানতে চাইলে মোশাররফ বলেন, ‘নেতাদের মধ্যে কেউ কেউ তাদের নিয়ন্ত্রণ করেন, এটা তো সত্য। আমি তো আর নিয়ন্ত্রণ করি না। এখন যারা নিয়ন্ত্রণ করেন, তারা যদি সত্যিই দলকে ভালোবাসেন, তারা তাদের লোকজনের দায়িত্ব নেবে। যদি তারা সেটা করতে ব্যর্থ হন, তাহলে দ্যা হ্যাভ নো কন্ট্রোল, পরিস্কার। তবে দ্যা স্যূড কন্ট্রোল ইট, দলের স্বার্থে এবং আমাদের মেয়র প্রার্থীকে জিতিয়ে আনার স্বার্থে। যদি না করেন, সেটার জবাব দলের কাছে তারাই দেবেন।’

চট্টগ্রাম নগরীর ৪১ সাধারণ ওয়ার্ড ও ১৪টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে এবার প্রথমবারের মতো কাউন্সিলর পদে ৫৫ জনকে সমর্থন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জিতে আসা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত ১৯ জন এবার সমর্থন পাননি। তাদের মধ্যে ১৮ জনই এবার বিদ্রোহী হিসেবে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন। এছাড়া পাঁচটি ওয়ার্ড ছাড়া প্রত্যেক ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত অথবা পদ-পদবিতে থাকা ৩-৪ জন করে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন।

রোববার (৮ মার্চ) মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিন। বিদ্রোহীদের প্রার্থীতা প্রত্যাহারে রাজি করাতে কয়েক দফা চেষ্টা করেও কোনো ফল আসেনি। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন সমন্বয়ক ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসে তোপের মুখে পড়েন। সেই বৈঠকে একজনকেও প্রার্থীতা প্রত্যাহারে রাজি করানো যায়নি। বরং বিদ্রোহীদের অনেকেই প্রবীণ নেতা মোশাররফ হোসেনের সামনেই স্লোগান দিয়ে, হট্টগোল করে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করেন। এরপরই মূলত নিয়ন্ত্রক নেতাদের ইন্ধনের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে।

নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিদ্রোহীদের অনড় থাকার পেছনে দুটি বিষয় আছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে- যারা তাদের নিয়ন্ত্রণ করেন হয়ত তাদের ইন্ধন আছে। অথবা প্রথমবার দলের মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টি তারা বুঝতে পারছেন না। তারা এটা বুঝতে পারছেন না যে, এবার নির্বাচন হবে দলের সঙ্গে দলের। অতীতের মতো ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির হবে না।’

বিদ্রোহীদের মধ্যে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী বেশি। এছাড়া প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, সাংসদ আফছারুল আমিন ও এম এ লতিফ, সিডিএর সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম এবং সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির অনুসারীরাও বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন।

নগর আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কাউন্সিলর পদে সমর্থন দেওয়ার ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ‘নিয়ন্ত্রক’ নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করা হয়নি। তাদের এড়িয়ে সমর্থন দেওয়াটাকে ভালোভাবে নেননি নেতারা, যা ইতোমধ্যে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের বক্তব্যে প্রকাশ পেয়েছে। এছাড়া উত্তর চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের রাজনীতির নিয়ন্ত্রক ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের কর্তৃত্বকেও নগর আওয়ামী লীগের নেতারা ভালো চোখে দেখছেন না। সব মিলিয়ে একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি জিইয়ে থাকুক, সেটাও চান অনেকেই।

নেতাদের মতে, দলের সমর্থন যারা পেয়েছেন, তাদের মধ্যে ৯০ ভাগেরই পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি আছে। যেসব কাউন্সিলর বাদ পড়েছেন তাদের মধ্যে বিতর্কিত কয়েকজন আছেন। কিছু ওয়ার্ডে বিদ্রোহী থাকতে পারে। কিন্তু গণহারে প্রতিটি ওয়ার্ডে একাধিক বিদ্রোহীর মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়া এবং দলের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে অনড় থাকার পেছনে নেতাদের ইন্ধন আছে। নিয়ন্ত্রক নেতারা প্রকাশ্যে সভায় বিদ্রোহীদের প্রত্যাহারের আহ্বান জানালেও ঘরোয়া বৈঠকে তাদের অনড় থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন, এমনটাই আলোচনা আছে নিয়ন্ত্রকদের বাইরের নেতাদের মধ্যে।

এ অবস্থায় দলীয় মনোনয়ন ফরমের সঙ্গে জমা দেওয়া পদত্যাগপত্রকে ‘শেষ অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহারের চিন্তা আছে দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে। সেই পদত্যাগপত্রগুলো নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘পদত্যাগপত্র ইসিতে জমা দেওয়ার বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন সমন্বয়ের জন্য আমাদের প্রেসিডিয়াম সদস্য শ্রদ্ধেয় ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে দায়িত্ব দিয়েছেন। তিনি যেভাবে সিদ্ধান্ত দেবেন, সেভাবেই হবে।’

চসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা নির্বাচনি বিধিতে যেভাবে উল্লেখ আছে সেভাবে কাজ করব। প্রত্যাহারের জন্য প্রার্থীকে সরাসরি আসতে হবে। অথবা তার মনোনীত প্রতিনিধিকে দিয়েও পাঠাতে পারবে। সেক্ষেত্রে তার স্বাক্ষর, প্রত্যয়ন থাকতে হবে, মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার রসিদ থাকতে হবে। স্বাক্ষর আমরা মিলিয়ে দেখব, প্রয়োজনে টেলিফোনে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব।’

তবে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীরা মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার না করলে নগরীর কমপক্ষে ১০টি ওয়ার্ডে সংঘাতের আশঙ্কা দেখছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা। ইতোমধ্যে নগরীর সরাইপাড়া ওয়ার্ডে দল সমর্থিত ও বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে সংঘাত হয়েছে।

আর চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাই মনে করেন, বিদ্রোহীদের দমন করতে না পারলে ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে বিভক্তি-সংঘাতের প্রভাব পড়বে মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরীর ওপর। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা দল সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে ভাগ হয়ে যাবে। শেষ পর্যন্ত মেয়র প্রার্থীর জন্য তৃণমূলে কাজ করার কর্মীই মিলবে না।

মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিমের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল সারাবাংলাকে বলেন, ‘ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে ডিভিশন তৈরি হবে, এটা ঠিক। এটা আমাদের জন্য সংকট তৈরি করবে। ওয়ার্ডে দলের একক কাউন্সিলর প্রার্থী এবং মেয়রের পক্ষে সবার অভিন্ন অবস্থান থাকা প্রয়োজন। তাহলে আমরা মেয়র প্রার্থীকে সহজে জিতিয়ে আনতে পারব।’

আওয়ামী লীগ চট্টগ্রাম চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন চসিক সিটি নির্বাচন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর