জোড়া মাথার রাবেয়া-রোকাইয়ার চিকিৎসা শুরু কাল
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ২০:০৫ | আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ২৩:৫৭
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: জোড়া মাথার শিশু রাবেয়া ও রোকাইয়ার চিকিৎসা বাংলাদেশের চিকিৎসকদের কাছে প্রথম অভিজ্ঞতা। তাই সব ধরনের প্রতিকূলতা ও শংকার বিষয়টি মাথায় রেখেই সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাবেয়া-রোকাইয়ার অস্ত্রোপচারের প্রথম ধাপ শুরু করতে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
রাবেয়া-রোকাইয়ার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ড ও অস্ত্রোপচার সর্ম্পকে জানাতে রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সংবাদ সম্মেলন করেন বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের চিকিৎসকরা। সম্মেলনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক, মেডিকেল বোর্ড সদস্যরা ছাড়াও রাবেয়া-রোকাইয়ার অস্ত্রোপচারের জন্য হাঙ্গেরি থেকে আসা দুই চিকিৎসক উপস্থিত ছিলেন। হাঙ্গেরি থেকে আসা এই দুই চিকিৎসকের বাংলাদেশে আসা-যাওয়া এবং তাদের পুরো বিষয়টি সমন্বয় করছে জার্মানির ফর বাংলাদেশ এবং হাঙ্গেরির অ্যাকশন ফর ডিফেন্সলেস পিপল ফাউন্ডেশন নামের চিকিৎসকদের দুটি সংগঠন।
রাবেয়া ও রোকাইয়ার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের ১৮ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে নিয়ে গঠিত হয়েছে মেডিকেল বোর্ড। এই মেডিকেল বোর্ডে রয়েছেন— বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের বর্তমান পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম, বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন, অধ্যাপক ডা. মো. সাজ্জাদ খোন্দকার, অধ্যাপক ডা. রায়হানা আউয়াল, অধ্যাপক ডা. মুহম্মদ নওয়াজেস খান, সহযোগী অধ্যাপক ডা. লুৎফর কাদের লেনিন, ঢামেক হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এজেডএম মোস্তাক হোসেন তুহিন, ঢামেক হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. শামসুজ্জামান নিউরো মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মনসুর হাবিব, শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সাঈদা আনোয়ার, ঢামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. টিটো মিয়া, নিউরো সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. অসিত চন্দ্র সরকার, অধ্যাপক ডা. রাজিউল হক ও সহকারী অধ্যাপক ডা. শফিকুল ইসলাম, হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আশরাফুল হক কাজল, অধ্যাপক ডা. আব্দুল হানিফ টাবলু, অ্যানেসথেসিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মোজাফফর হোসেন, ঢামেক হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. অব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরী।
এই ১৮ জন ছাড়াও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ ও হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসিরউদ্দিনকেও বোর্ডের পরামর্শক হিসেবে রাখা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমি এই দুই শিশুর বিষয়ে জানিয়েছি। তারও আগে পাবনার একজন সংসদ সদস্য রাবেয়া রোকাইয়ার ছবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়ে তাদেরকে বিদেশে পাঠানোর জন্য আবেদন করেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তাকে বিদেশ না পাঠিয়ে বার্নে ভর্তি করানোর পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, ‘ওনারা চেষ্টা করুক আগে’।”
কয়েকমাস আগে রাবেয়া রোকাইয়া হাসপাতালে ভর্তি হলেও কয়েকদিন পর তারা আবার পাবনাতে চলে যায়। গত ২১ তারিখে তারা আবার আসে।
ডা. সেন বলেন, ‘গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাই এবং তাকে জানায়। প্রধানমন্ত্রী আমাকে এই দুই শিশুর বিষয়ে যা কিছু করা সম্ভব সব কিছু করতে বলেছেন এবং এই দুই শিশুর চিকিৎসার দায়িত্বও নিয়েছেন তিনি।’
ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘আমরা আজ সকালে পুরো বিষয়টি নিয়ে রাবেয়া রোকাইয়ার বাবা-মায়ের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তাদেরকে অস্ত্রোপচার চলাকালীন যেকোনো বিষয়ে সর্ম্পকে জানিয়েছি। তারা আমাদেরকে অস্ত্রোপচার করার অনুমতি দিয়েছেন। সে অনুযায়ী আগামীকাল রাবেয়া রোকাইয়ার অস্ত্রোপচারের প্রথম ধাপ আমরা সম্পন্ন করতে যাচ্ছি। যদিও একে আমরা অস্ত্রোপচার বলছি না, ওদের মাথার ভেতরের কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করব আমরা। বাকি সিদ্ধান্ত কালকের পরীক্ষার ওপর নির্ভর করছে।’
জোড়া মাথার এই দুই শিশুকে গত ২০ নভেম্বর বার্ন ইউনিটে ভর্তি করেন বাবা রফিকুল ইসলাম ও তাসলিমা খাতুন।
সারাবাংলা/জেএ/জেডএফ/আইজেকে