Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চসিক নির্বাচন: বিদ্রোহীদের দায় নেবেন না নওফেল


৭ মার্চ ২০২০ ১৮:২৭

ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম ব্যুরো: আওয়ামী লীগের দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে কেউ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী তার দায় নেবেন না বলে অনুসারীদের সাফ জানিয়ে দিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। বিদ্রোহীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে দলের মনোনীত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করার কথা বলেছেন তিনি। এছাড়া তৃণমূলের নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব মিটিয়ে এক হয়ে কাজ করারও তাগিদ দিয়েছেন নওফেল।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (৭ মার্চ) দুপুরে নগরীর চশমাহিলের বাসভবনে কমপক্ষে ৩০টি ওয়ার্ডের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়ক এবং দলের সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ও বেশ কয়েকজন বিদ্রোহী প্রার্থী যারা প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন নওফেল।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বৈঠকে মেয়র প্রার্থীর পক্ষে করণীয়, বিদ্রোহীদের মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার এবং ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে নগরীর জামালখানে বিদ্রোহী প্রার্থী ফরহাদুল আনোয়ার চৌধুরী রিন্টু, পাথরঘাটার আশফাক আহমেদ চৌধুরীসহ কয়েকজনকে সরাসরি প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া হয়।

জানতে চাইলে নগরীর কোতোয়ালি-বাকলিয়া আসনের সংসদ সদস্য শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি কোনো গ্রুপিংয়ের রাজনীতিতে নেই। এরপরও যারা আমার নাম বলে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন, তাদের বলেছি- দলের মনোনীতদের বাইরে আমি কাউকে সমর্থন দিতে পারব না। কে আমার গ্রুপ, কে আমার গ্রুপ নয়, সেটা আমি দেখব না। আমার কাছে দলের শৃঙ্খলাই বড়। দলের শৃঙ্খলা যারা ভঙ্গ করবে তাদের দায় আমি নেব না। পরে যদি কোনো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়েন, তখন যেন আমার কাছে কেউ না আসেন, সেটাও বলেছি। আমি অমুক ভাই, তমুক ভাইয়ের রাজনীতি করি না। আমি শুধু আওয়ামী লীগের সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার রাজনীতি করি।’

বৈঠকে উপস্থিত থাকা এনায়েত বাজার ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক সলিমউল্লাহ বাচ্চু সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের নেতা মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সরাসরি বলেছেন, দলের মনোনীতদের বাইরে কেউ প্রার্থী থাকতে পারবেন না। যারা যারা বিদ্রোহী হয়েছেন, তাদের মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে দলের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে বলেছেন। ভবিষ্যতে তাদের মূল্যায়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন। আর সাধারণ মানুষের কাছে বিনয়ের সাথে ভোট চাওয়ার কথা বলেছেন। মানুষকে ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে আসার জন্য অনুরোধ করতে বলেছেন।’

বিজ্ঞাপন

বৈঠকে উপস্থিত নগরীর পাথরঘাটা ওয়ার্ডের যুগ্ম আহ্বায়ক আশফাকুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘উপমন্ত্রী মহোদয়ের সংসদীয় আসনের ওয়ার্ডের যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে আমি বৈঠকে গিয়েছিলাম। আমি কোনো মনোনয়নপত্র নিইনি। সুতরাং আমাকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের কথা বলা হয়নি। পাথরঘাটা থেকে আশফাক আহমেদ নামে আর কেউ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেননি। আমরা শুধু নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে কথা বলেছি।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, বৈঠকে নগরীর বকশিরহাট ওয়ার্ডের সভাপতি নুরুল আমিন শান্তি ও সাধারণ সম্পাদক ফয়েজউল্লাহ বাহাদুরের মধ্যে দ্বন্দ্ব নিরসন করা হয়। তারা নওফেলের সামনে পরস্পর কোলাকুলি করেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে দলের মনোনীত মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী ও বকশিরহাট ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী হাজী নুরুল হকের জন্য কাজ করার অঙ্গীকার করেন।

হাজী নুরুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার সঙ্গে কারও কোনো দ্বন্দ্ব নেই। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। সেটা নওফেল সাহেব মিটিয়ে দিয়েছেন। উনাদের মধ্যে এখন কোনো দ্বন্দ্ব নেই।’

সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, বৈঠকে ওয়ার্ডের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক অথবা আহ্বায়ক-যুগ্ম আহ্বায়কদের নিজ নিজ ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে আজকের (শনিবার) মধ্যে কথা বলে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করার অনুরোধ করেন নওফেল।

এসময় নগরীর আলকরণ ওয়ার্ডের একজন নেতা প্রশ্ন করেন, তাদের ওয়ার্ডে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়া তারেক সোলায়মান সেলিম মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ও নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজনের গ্রুপে রাজনীতি করেন। আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডের একজন নেতা জানান, তাদের ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থী জাবেদুল আলম সুমন মেয়র নাছিরের অনুসারী। এ ব্যাপারে নওফেল সংশ্লিষ্ট জ্যেষ্ঠ্য নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করার কথা বলেন।

বৈঠকে তিনজন নারী কাউন্সিলর প্রার্থী বিদ্রোহীদের অসাংগঠনিক আচরণের কারণে স্বাভাবিকভাবে নির্বাচনের কাজ করতে পারছেন না বলে নওফেলের কাছে অভিযোগ করেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

চট্টগ্রাম নগরীর ৪১ সাধারণ ওয়ার্ড ও ১৪টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে এবার প্রথমবারের মতো কাউন্সিলর পদে ৫৫ জনকে সমর্থন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জিতে আসা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত ১৯ জন এবার সমর্থন পাননি। তাদের মধ্যে ১৮ জনই এবার বিদ্রোহী হিসেবে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন। এছাড়া পাঁচটি ওয়ার্ড ছাড়া প্রত্যেক ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত অথবা পদ-পদবিতে থাকা ৩-৪ জন করে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন।

আগামীকাল রোববার (৮ মার্চ) মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের শেষদিন। বিদ্রোহীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারে রাজি করাতে কয়েক দফা চেষ্টা করেও কোনো ফল আসেনি। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন সমন্বয়ক ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসে তোপের মুখে পড়েন। সেই বৈঠকে একজনকেও প্রার্থিতা প্রত্যাহারে রাজি করানো যায়নি, বরং বিদ্রোহীদের অনেকেই প্রবীণ নেতা মোশাররফ হোসেনের সামনেই স্লোগান দিয়ে, হট্টগোল করে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করেন।

এরপর থেকে নগর আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রক শীর্ষ নেতারা বিদ্রোহীদের ইন্ধন দিচ্ছেন বলে আলোচনা চলছে। বিদ্রোহীদের মধ্যে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী বেশি। এছাড়া প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, সাংসদ আফছারুল আমিন ও এম এ লতিফ, সিডিএর সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম এবং সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির অনুসারীরাও বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন।

রোববার সার্বিক বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের চট্টগ্রামে আসার কথা রয়েছে।

কাউন্সিলর চসিক নির্বাচন মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর