Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তিন প্রিন্সের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ, কী ঘটতে পারে তাদের ভাগ্যে?


৭ মার্চ ২০২০ ২০:০৪

সৌদি আরবে রাজদ্রোহের অভিযোগে রাজপরিবারের তিন প্রভাবশালী সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শুক্রবার (৬ মার্চ) সকালে নিজ বাসভবন থেকে সৌদির রাজকীয় পুলিশ বাহিনী তাদের গ্রেফতার করে। এদের মধ্যে অন্তত দুজন সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ও দেশটিতে অত্যন্ত প্রভাবশালী।

গ্রেফতার হওয়া তিন যুবরাজের নাম-পরিচয় প্রকাশ করেছে রয়টার্স, নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়ালস্ট্রিট জার্নালসহ বেশ কয়েকটি মার্কিন সংবাদ মাধ্যম। সূত্রের বরাত দিয়ে এসব সংবাদ মাধ্যম জানায়, সৌদি বাদশাহর ছোট ভাই আহমেদ বিন আব্দুল আজিজ, আরেক ভাইয়ের ছেলে সাবেক যুবরাজ মোহাম্মদ বিন নায়েফ ও রাজ পরিবারের আরেক সদস্য প্রিন্স নাওয়াফ বিন নায়েফকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসব প্রিন্সদের বিরুদ্ধে সৌদির বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ ও তার ছেলে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে সিংহাসনচ্যুতের পরিকল্পনা করছিলেন বলে অভিযোগ আনা হয়েছে রাজকীয় আদালতে ।

বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য, সৌদি রাজ পরিবারে ৫ বছর ধরে চলা ক্ষমতার দ্বন্দ্বের ফলেই এবারের এই গ্রেফতারের ঘটনা ঘটলো। এর আগে, ২০১৫ সালে সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ সিংহাসনে আরোহণ করার পরপরই রাজ পরিবারের ক্ষমতার দ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। সিংহাসনে আরোহণ করার পর তৎকালীন যুবরাজ মুকরিন বিন আবদুল আজিজের বদলে মুহাম্মদ বিন নায়েফকে যুবরাজ মনোনীত করেন তিনি। এর কিছুদিন পরই নায়েফকে সরিয়ে নিজের বড় ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমানকে এ পদে বসান বাদশাহ সালমান।

দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর পদটিতে বসেই ক্ষমতা আরও পাকাপোক্ত করতে একের পর এক বাধা দূর করার কাজে লেগে পড়েন মোহাম্মদ বিন সালমান। সম্ভাব্য বিদ্রোহীদের দমন করতে তাদের গ্রেফতার ও আর্থিকভাবে দুর্বল করে দেওয়ার পরিকল্পনা নেন তিনি। এর অংশ হিসেবে ২০১৭ সালে রাজ পরিবারের কয়েকজন প্রভাবশালী সদস্যকে রিয়াদের বিলাসবহুল হোটেল রিটজ কার্লটনে ৩ মাস বন্দী রাখেন মোহাম্মদ বিন সালমান।

বিজ্ঞাপন

রাজ পরিবারের বিভিন্ন কর্মকান্ডের সমালোচকদেরও শায়েস্তা করার নীতি গ্রহণ করেন যুবরাজ। ২০১৮ সালে তুরস্কের ইস্তানবুলে সৌদি দূতাবাসে ওয়াশিংটন পোস্ট-এর কলামিস্ট জামাল খাশোগিকে হত্যার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে।

এবার তিন প্রিন্স গ্রেফতার হওয়ার কারণ 

শুক্রবার বাদশাহর ভাইসহ তিন প্রিন্স গ্রেফতার হওয়া প্রসঙ্গে এখনও সৌদি রাজ পরিবারের পক্ষ থেকে কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তারা আদৌ গ্রেফতার হয়েছেন কী না বা হলেও কী কারণে তাদের এ পরিণতি-সে সম্পর্কে দেশটির গণমাধ্যমও কোনো খবর প্রকাশ করেনি। তবে সূত্রের বরাত দিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম দাবি করছে, মূলত বাদশাহকে সিংহাসনচ্যুত করার অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

তবে মোহাম্মদ বিন সালমানের ভবিষ্যৎ বাদশাহ হওয়ার রাস্তা পরিষ্কার করতেই এ গ্রেফতার বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। কেননা, সৌদিতে ৮৪ বছর বয়েসি বাদশাহ সালমানের পরই সিংহাসনে বসার দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছেন তারে ছেলে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান, সাবেক যুবরাজ আহমেদ বিন নায়েফ ও সৌদি রাজ পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা বাদশাহর আরেক ছেলে প্রিন্স আহমেদ বিন আব্দুল আজিজ।

আহমেদ বিন আব্দুল আজিজ বাদশাহ’র একমাত্র জীবিত ভাই। সৌদি রাজপরিবারে ভাইয়ের পর ভাই সিংহাসনে আরোহনের রেওয়াজ থাকায় পরবর্তী বাদশাহ হওয়ার দৌড়ে তিনিই সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। এছাড়া রাজ পরিবারের প্রতিষ্ঠাতার ছেলে হিসেবেও তিনি পরবর্তী বাদশাহ হওয়ার দৌড়ে বেশ এগিয়ে।

এদিকে পরবর্তী প্রজন্মের বাদশাহ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে মোহাম্মদ বিন নায়েফের নাম সৌদিতে আলোচিত হয়ে আসছে। ৬০ বছর বয়েসি রাজ পরিবারের প্রভাবশালী এ সদস্য এর আগে সৌদির যুবরাজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি প্রথম ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন দেশটিতে। সৌদির সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের কুটনৈতিক সম্পর্ক দীর্ঘদিন দেখভাল করেছেন তিনি।

এমন অবস্থায় ৩১ বছর বয়েসি বর্তমান যুবরাজ সিংহাসন আরোহণের পথ পরিষ্কার করতেই এ দুই প্রভাবশালী আত্মীয়কে গ্রেফতার করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কী ঘটতে পারে তাদের ভাগ্যে ?

রাজদ্রোহের অভিযোগ বিশেষত বাদশাহকে সিংহাসনচ্যুত করার অভিযোগকে মারাত্মক হিসেবেই বিবেচনা করা হয় সৌদি আরবে। এক্ষেত্রে গ্রেফতার হওয়া প্রিন্সদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তাতে হয়ত কঠিন পরিণতি অপেক্ষা করছে তাদের জন্য। সেক্ষেত্রে এসব প্রিন্স যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত এমনকি মৃত্যুদণ্ডের মত চরম শাস্তির সম্মুখীনও হতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে গ্রেফতার হওয়া প্রিন্সরা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ডের মত কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে পারেন। তবে গ্রেফতার হওয়া রাজ পরিবারের এসব সদস্য সৌদিতে দীর্ঘদিন গুরুত্বপূর্ণ রাজকীয় দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া প্রতিষ্ঠাতা বাদশাহর ছেলে ও নাতি হওয়ায় তাদের পক্ষে রাজপরিবারসহ গোটা দেশে বিপুল সমর্থন রয়েছে।

মোহাম্মদ বিন সালমান সৌদি রাজ পরিবার

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর