তারুণ্যের জোয়ারে অভিভূত প্রধানমন্ত্রী
৭ মার্চ ২০২০ ২৩:০২
ঢাকা: ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক সেই ভাষণের স্মৃতি এখনো তাজা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার। তখন তিনি নিজেই তরুণ। দেশকে স্বাধীন করার উন্মাদনা তখন তার এবং তার মতো আরও লাখো তরুণের মনে-মগজে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও দেশের বিবিধ উত্থান-পতনে তরুণদের ভেতর এমন জোয়ার তিনি দেখেছেন। শেষ জোয়ারটি তিনি দেখলেন ‘জয় বাংলা’ কনসার্টে।
ছয় বছর ধরে ঐতিহাসিক ৭ মার্চে ‘জয় বাংলা’ কনসার্ট আয়োজিত হয়ে আসলেও এবারই প্রথম সেখানে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পশ্চিম পাশের গ্যালারিতে বোন শেখ রেহানা ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে পাশে বসিয়ে তিনি মন দিয়ে শুনেছেন একাত্তরের উত্তাল সময়ে পথ দেখানো সেসব গান। আর গানের তালে উন্মাতাল হওয়া তরুণদের দেখে হয়েছেন মুগ্ধ। কয়েকবার হাততালি উৎসাহিতও করেছেন তাদের। কোনো কোনো গানে উৎসবের উৎসাহে মিলিয়ে দিয়েছেন নিজের কণ্ঠস্বর।
সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) ইয়াং বাংলার তত্ত্বাবধানে রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে শুরু হয় ‘জয় বাংলা’ কনসার্ট।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে এবার কনসার্টে যুক্ত হয়েছিল ভিন্ন মাত্রা। কনসার্ট চলার মধ্যেই সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে স্টেডিয়ামে আসেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা যেখানে বসেন, সেই পশ্চিম পাশের গ্যালারিটি সাজানো হয় বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতা ও উদ্ধৃতি দিয়ে। এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে ছিল কয়েকটি রেপ্লিকাও। সেখানে শেখ হাসিনার পাশেই বসেছিলেন ছোট বোন শেখ রেহানা। হাসিনাকন্যা সায়মা ওয়াজেদ ছাড়াও মুজিব দৌহিত্র ও সিআরআইয়ের ট্রাস্টি রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববিও ছিলেন গ্যালারিতে।
শনিবার দুপুরে ‘জয় বাংলা’ কনসার্টের শুরু হয় ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের মাধ্যমে। এরপর গাওয়া হয় জাতীয় সংগীত। এসময় আর্মি স্টেডিয়ামে উপস্থিত হাজারো তরুণ-তরুণী বুকে হাত রেখে গেয়ে ওঠেন ‘আমার সোনার বাংলা’। এরপর বাজানো হয় আওয়ামী লীগের প্রচার সংগীত ‘জয় বাংলা বলে আগে বাড়ো’ গানটি। গানটির মাধ্যমে শোনানো হয় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের একাংশ— ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
এরপর মারিয়া নূরের সঞ্চালনায় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের বেশ কয়েকটি ব্যান্ড পারফর্ম করে। বিকেল ৩টার পর কনসার্টের মূল পর্ব শুরু হয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্য কয়েকজন তরুণীর ব্যান্ড ‘এফ মাইনরে’র পরিবেশনা দিয়ে। এরপর একে একে মঞ্চে ওঠেন মিনার রহমান, অ্যাভোয়েড রাফা, শূন্য ও ভাইকিংস। এদের সবাই নিজেদের পরিবেশনা শুরু করেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ঐতিহাসিক গানগুলো গেয়ে। এরপর শ্রোতাদের শোনান নিজেদের গান।
সন্ধ্যার আগে মঞ্চে ওঠে ব্যান্ড লালন ও আরবোভাইরাস। এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণের পুরো ক্লিপটি শোনানো হয়। এসময় কয়েক মুহূর্তের জন্য আর্মি স্টেডিয়ামের ভেতর ও বাইরে উপস্থিত হাজার হাজার দর্শক-শ্রোতা যেন ফিরে যান ১৯৭১ সালের সেই রেসকোর্স ময়দানের (এখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) আবহে। গোটা স্টেডিয়াম নিস্তব্ধ হয়ে শ্রদ্ধা জানায় জাতির পিতাকে।
এরপর পর মঞ্চ মাতাতে আসে ক্রিপটিক ফেইট, নেমেসিস, ফুয়াদ অ্যান্ড ফ্রেন্ড ও চিরকুট। দেশসেরা এসব ব্যান্ডের প্রতিটি পরিবেশনা মুগ্ধ হয়ে শোনেন শ্রোতারা। পশ্চিম পাশের গ্যালারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও মন দিয়ে শোনেন তাদের গান। এরপর ১০টার দিকে কনসার্ট থেকে বিদায় নেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
এবারের আয়োজনের আরেকটি বড় চমক ছিল বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে হলোগ্রাফিক রিপ্রেজেন্টেশন। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ২৩টি বাক্য বাছাই করে নির্মিত হয় এই প্রজেকশন।
সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) ট্রাস্টি নসরুল হামিদ বিপু বলেন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব ও তাৎপর্য যেন তরুণরা বুঝতে পারে, এজন্যই এ আয়োজন। সে দিনটি কেমন ছিল, সেটি হয়তো পুরোপুরি অনুধাবন করা সম্ভব নয়, তবে এমন লোক সমাগমের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে আমরা সেই অনুভূতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই। বঙ্গবন্ধুকে জানতে না পারলে বাংলাদেশকে জানা সম্ভব নয়। তাই মহান নেতাকে নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচয় করিয়ে দিতে এমন আয়োজন নিয়মিত উপহার দেওয়া হবে।
তিনি জানান, এই কনসার্ট টেলিভিশন ও অনলাইনে ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ উপভোগ করেছেন। আর স্টেডিয়ামে উপস্থিত থেকে কনসার্ট উপভোগ করেছেন পঞ্চাশ হাজার মানুষ।
৭ মার্চের ভাষণ জয় বাংলা কনসার্ট জয় বাংলা কনসার্টে প্রধানমন্ত্রী তারুণ্যের জোয়ার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা