ক্ষুর-কাঁচি আর চিরুনির সঙ্গে শেফালীর একযুগ
৮ মার্চ ২০২০ ০৮:০৯
ঝালকাঠি: ক্ষুর, কাঁচি ও চিরুনি নিয়ে একযুগ ধরে দোগনা বাজারের একমাত্র নরসুন্দর হিসেবে চুল কেটে যাচ্ছেন শেফালী রাণী। তিনি ঝালকাঠি জেলার কাঁঠালিয়া উপজেলার শৌলজালিয়া ইউনিয়নের বলতলা গ্রামের বাসিন্দা যাদব শীলের স্ত্রী।
মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী ছিলেন স্বামী যাদব শীল। তাই সেই ২০০৮ সাল থেকেই জীবন চালাতে হাতে তুলে নেন ক্ষুর, কাঁচি ও চিরুনি। এরপর ২০১২ সালে স্বামী নিরুদ্দেশ হয়ে গেলে একটি খুপড়ি ঘরে ৪ মেয়ে ও ১ ছেলে নিয়ে নাপিতের কাজ করেই জীবন চালাতে থাকেন শেফালী। নরসুন্দরের কাজ করেই এখনও চালাচ্ছেন সন্তানদের লেখাপড়া ও সংসার।
গত বছর তাকে নিয়ে সংবাদ প্রচারের আগে মানবেতর জীবনই ছিলো তার। কিন্তু দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে তাকে নিয়ে প্রচারিত সংবাদ চোখে পড়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। এরপর ২০১৯ সালের ২ জুলাই সকালে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ৪ শতাংশ জমি ও ঘর বরাদ্দের কাগজপত্র নিয়ে শেফালীর বাড়িতে ছুটে যান তৎকালীন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান।
এরপর আস্তে আস্তে তিনটি কক্ষের পাকা ঘর, বাথরুম ও রান্নাঘরের কাজ শুরু হয়। সম্প্রতি ঘর তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। এখন ৫ ছেলে-মেয়েকে নিয়ে সেখানে সুখে বসবাস করছেন নরসুন্দর শেফালী রাণী শীল।
শেফালী বলেন, ‘আমি অনেক কষ্ট করে সংসার চালিয়েছি। এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার মা। তিনি আমাকে ঘর ও জমি দিয়েছেন, আমার আর কষ্ট নেই। জীবনেও ভাবতে পারিনি এমন পাকা ঘরে থাকতে পারব। আমি প্রধানমন্ত্রীর জন্য অনেক দোয়া করি। তিনি যেন সারা জীবন মানুষের সেবা করে যেতে পারেন।’
শেফালী রাণীর মেয়ে সাগরিকা রাণী দশম শ্রেণিতে পড়ে। সে বলে, ‘এ ঘর আমাদের কাছে অবাস্তব স্বপ্নের মত ছিলো, কিন্তু তাও যে বাস্তবে পরিণত হত পারে তা আগে ভাবিনি। আমার মা আমাদের ৫ ভাই-বোনকে অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করাচ্ছেন। আমরা মানুষ হতে পারলেই মায়ের পরিশ্রম সার্থক হবে।’
ঘর হলেও এখনও দোগনা বাজারে নরসুন্দরের কাজ করেই সংসার চালান শেফালী রাণী। প্রতিদিন এলাকার মানুষ তার কাছে দাঁড়ি, চুল কাটেন। সংগ্রামী এই নারীর ১ ছেলে ও ৪ মেয়ের সবাই-ই পড়াশোনা করছে। ‘তারা লেখাপড়া শেষ করে চাকরি পেলেই জীবনে আর কোনো চাওয়া থাকবে না’, বলেন নরসুন্দর শেফালী রাণী শীল।