২৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে ইলিশের অভয়াশ্রম রক্ষায় উদ্যোগ
৮ মার্চ ২০২০ ০৯:৪৪
ঢাকা: বিদ্যমান ৬টি ইলিশ অভয়াশ্রম রক্ষায় বিশেষ উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এর অংশ হিসেবে ‘ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এতে খরচ ধরা হয়েছে ২৩১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পের আওতায় জাটকা আহরণকারী ৩০ হাজার জেলে পরিবারের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। এটি বাস্তবায়িত হলে মাঝারি ইলিশ এবং পরিপক্ক মা ইলিশ সংরক্ষণ করে ইলিশের উৎপাদনও বৃদ্ধি করা যাবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ইলিশ নবায়ণযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদ। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রফতানি আয় ও আমিষ সরবরাহে ইলিশের গুরুত্ব অপরিসীম। দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনে ইলিশের অবদান সর্বোচ্চ এবং জিডিপিতে অবদান ১ শতাংশ। প্রায় ৫ লাখ লোক ইলিশ আহরণে সরাসরি নিয়োজিত এবং ২০ থেকে ২৫ লাখ লোক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। সারাবিশ্বের মোট উৎপাদিত ইলিশের প্রায় ৬০ শতাংশ আহরিত হয় দেশের নদ-নদী থেকেই।
আশির দশকের আগে মোট মৎস্য উৎপাদনের ২০ শতাংশ ছিল ইলিশের অবদান। ২০০২ থেকে ২০০৩ সালে ইলিশের অবদান দাঁড়ায় জাতীয় উৎপাদনের মাত্র ৮ শতাংশ। ইলিশ উৎপাদনের গতিধারায় লক্ষ্য করা যায় ২০০০-২০০১ সালে ইলিশের উৎপাদন ২.২৯ শতাংশ মেট্রিক টন থাকলেও ২০০১-২০০২ ও ২০০২-০৩ সালে ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেয়ে যথাক্রমে ২.২০ মেট্রিক টন এবং ১.৯৯ মেট্রিক টনে পৌঁছে। প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট উভয় কারণেই ইলিশের উৎপাদন হ্রাস পেয়েছিল। এর অন্যতম কারণ ছিলো অভ্যন্তরীণ জলাশয়ের পরিবেশগত পরিবর্তনের ফলে বিশেষ করে বিভিন্ন নদ-নদীর নাব্যতা হ্রাস এবং জলজ পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়া। ফলে ইলিশ মাছের পরিভ্রমণ পথ, প্রজনন ক্ষেত্র, বিচরণ ও চারণক্ষেত্র দিন দিন পরিবর্তিত ও বিনষ্ট হচ্ছে এবং অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে ইলিশ মাছের উৎপাদন কমে যাচ্ছে।
দেশের ইলিশ সম্পদ ধ্বংসের এবং উৎপাদন কমে যাওয়ার পেছনে যে কারণগুলো রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম কারণটি হচ্ছে নির্বিচারে ক্ষতিকর জাল ও সরঞ্জাম দিয়ে জাটকা ও মা ইলিশ আহরণ। ইলিশের জন্য খ্যাত এক সময়ের পদ্মা, ধলেশ্বরী, গড়াই, চিত্রা, মধুমতি ইত্যাদি নদীতে বর্তমানে শুস্ক মৌসুমে ইলিশ মাছ প্রায় পাওয়া যায় না বলা যেতে পারে। তাই প্রস্তাবিত প্রকল্পের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা হয়েছে জাটকা ও মা ইলিশ সংরক্ষণের মাধ্যমে ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি করা। এই উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ নদী, মাছ বাজার, মাছঘাট, হাট, আড়ৎ ইত্যাদিতে অভিযান পরিচালনা করা অপরিহার্য।
প্রস্তাবিত প্রকল্পে জাটকা ধরা নিষিদ্ধ সময়ে এবং জেলেদের অবৈধ মাছ ধরা বন্ধে বিভিন্ন ধরনের কম্বিং অপারেশন, ক্রাশ প্রোগ্রাম এবং অভিযান পরিচালনার সংস্থান রাখা হয়েছে। ধ্বংসাত্বক অপতৎপরতা বন্ধে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিবকে সভাপতি করে উপকূলীয় জেলাগুলোর জেলা প্রশাসন এবং পুলিশ, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, নৌ পুলিশ, র্যাব এবং মৎস্য অধিদফতরের সমন্বয়ে মৎস্য সম্পদ ধ্বংসকারী অবৈধ জাল নির্মূল সংক্রান্তে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
এর আওতায় অবৈধ জাল নিমূল করণে প্রথম পর্যায়ে ২০১৬ সালের ৪ হতে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ১৫ দিন ভোলা, বরগুনা, ও পটুয়াখালী জেলায় কমিটির অন্তর্ভুক্ত সংস্থার সমন্বয়ে সম্মিলিত বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ অভিযানের ফলে তিন জেলায় মোট ২২৫টি মোবাইল কোর্ট ও ৪৩৩টি অভিযান পরিচালনা করে ১ হাজার ৩২৬টি বেহুন্দি জাল এবং ১ হাজার ৭১টি অন্যান্য জাল যেমন, বেড় জাল, চর ঘড়া জাল, মশারি জাল, পাইজাল ইত্যাদি আটক করা হয়।
প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত উপকূলীয় এলাকার ৩০ হাজার জেলে পরিবার স্বাবলম্বী হবে এবং জীবিকা নির্বাহের জন্য বিকল্প আয়ের পথ খুঁজে পাবে যা তাদের দারিদ্রতা কমাতে সাহায্যে করবে। সেই সঙ্গে সরাসরি মাছ ধরে না এমন প্রায় ৪ লাখ সুফলভোগী ইলিশ ও জাটকা রক্ষা কার্যক্রমের সুফল সম্পর্কে সচেতন হবে। এই প্রকল্প হতে দরিদ্র জেলেরা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ উভয় দিক থেকে উপকৃত হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের যুগ্ম প্রধান ড. শাহজাহান আলী খন্দকার সারাবাংলাকে জানান, ইলিশ রক্ষায় প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। রোববার (৮ মার্চ) প্রস্তাবিত প্রকল্পটি নিয়ে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই সভায় বিভিন্ন বিষয় আলোচনার পর কিছু সুপারিশ দেওয়া হতে পারে। সেসব সুপারিশ প্রতিপালন করা হলে প্রকল্পটি একনেকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হবে বলেও জানান তিনি।