ধর্ষকরা সব থেকে জঘন্য, পশুর চেয়েও অধম: প্রধানমন্ত্রী
৮ মার্চ ২০২০ ১৩:৩১
ঢাকা: ধর্ষকদের বিরুদ্ধে পুরুষ সমাজকেও সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা নারীদের ওপর এ ধরনের পাশবিক অত্যাচার করে, তারা সমাজে সব থেকে জঘন্য। তাদের মানুষ বলতে ইচ্ছা করে না, বলতে ইচ্ছা করে এরা পশুর চেয়েও অধম। কাজেই তাদের বিরুদ্ধে আমাদের পুরুষ সমাজকে ব্যবস্থা নিতে হবে।
রোববার (৮ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সব কথা বলেন। প্রজন্ম হোক সমতার সকল নারীর অধিকার শীর্ষক প্রতিপাদ্য নিয়ে এবার দিবসটি পালিত হচ্ছে।
দেশে নারী সমাজের অগ্রযাত্রায় বেগম রোকেয়াসহ বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের অবদানের কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতার অর্জনের পরপরেই জাতির পিতা নারী অধিকার নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। সংবিধানে তিনি শুধু পুরুষের অধিকার না, নারীদের অধিকারের কথা সমানভাবে বলেছিলেন। এই বলিষ্ঠ পদক্ষেপ একটা সংবিধানে নেওয়া, সেই সময়কার সামাজিক পরিবেশে বা রাজনৈতিক পরিবেশে একটা কঠিন কাজ ছিল। সেই কাজটাও বঙ্গবন্ধু করে গিয়েছিলেন।’
আরও পড়ুন: করোনা নিয়ে ঘাবড়ানোর কিছু নেই, সচেতন হোন: প্রধানমন্ত্রী
‘কারণ তিনি সবসময় একটা কথা বলতেন, মেয়েদের অধিকারের কথা শুধু মুখে বললে হবে না। অর্থনৈতিক অধিকার প্রয়োজন। একটি মেয়ে যদি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে নিজে অর্থ কামাই করতে পারে। তাহলে সংসারে তার একটা অবস্থান হয়। পরিবারের কাছে তার গুরুত্ব বাড়ে। তিনি আমাদের দেশি ভাষায় এভাবে বলতেন, একটা মেয়ে যদি দিন শেষে আঁচলে দশটা টাকা বেঁধে ঘরে আসতে পারে, দশটা টাকা যদি তার আঁচলে বাধা থাকে, তাহলে তাকে আর কেউ পরিবারের অবহেলা করতে পারে না। অর্থাৎ নারীর অর্থনৈতিক স্বাধীনতার কথাই তিনি বলে গেছেন।’ কাজেই দেশ স্বাধীনের পর তিনি শুধু মুখেই বলা না, তিনি সেই অধিকারটাও দিয়ে গেছেন আমাদের দেশের মেয়েদের জন্য বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি সংগঠন। আমার মনে হয়, আমাদের দেশে একমাত্র রাজনৈতিক সংগঠন আমরা প্রথম আমাদের গঠনতন্ত্রে আমাদের নারীদের অধিকারের কথা এবং আমাদের যে ঘোষণাপত্র সেখানেও আমরা নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা সেখানে উল্লেখ করেছি। এটি আর কোনো পার্টি কিন্তু এ ধরনের লিখতে পারেনি, যেটি আমরা করেছিলাম।’
‘কাজেই একটা কথা আমরা বিশ্বাস করি, নারীরা যত শিক্ষিত হবে, নারীরা যত স্বাবলম্বী হবে এবং তখন সমাজ তত দ্রুত এগিয়ে যেতে পারবে। কারণ সমাজের অর্ধেক অংশকে একেবারে অকেজো রেখে দিয়ে একটি সমাজ সঠিকভাবে চলতে পারে না। তাহলে সেই সমাজ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলবে। তবে এটা ঠিক, নারীরা সবসময়েই নানা ধরনের যন্ত্রণার শিকার হয়। সেটা আমরা দেখেছি এবং সেটা মোকাবিলা করার জন্য আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপও নিয়েছি। সেভাবে বিভিন্ন আইনও করেছি। আইনগতভাবে সে ধরনের শাস্তির ব্যবস্থা করেছি’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তারপরও অনেক সময় নারীদের ওপর নির্যাতন হয়। কিছুক্ষণ আগে আমরা পুরস্কার দিলাম, এসিডদগ্ধ একটি বোনকে জানিয়ে এই এসিড নির্যাতনের বিরুদ্ধে তার সরকারের মেয়াদে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণের কথা তুলে ধরেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইদানিং আমরা একটু দেখি, নারী ধর্ষণের বিষয়টা শুধু বাংলাদেশ বলে না, এটা বিশ্বব্যাপী একটা সমস্যা। কাজেই আমি এটা মনে করবো এখানে আমাদের যেমন একদিকে সচেতনতা দরকার, সেই সাথে সাথে আমাদের পুরুষ শ্রেণী যারা তাদেরকেও একটু এগিয়ে আসতে হবে। কারণ এই নারী ধর্ষণকারী তো পুরুষরাই। কাজেই পুরুষ সমাজের পক্ষ থেকেও আমরা চাই, তাদেরকেও সোচ্চার হতে হবে।’
নারী নির্যাতনের পরম্পরার বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সংগ্রামে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক এদেশে নারী নির্যাতনের বিষয়টি তুলে ধরেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তাদেরকে (নির্যাতিত নারী) সমাজে প্রতিষ্ঠা করবার জন্য তিনি (জাতির পিতা) এই নারীদেরকে সম্মাননা দেন, বীরাঙ্গনা হিসেবে উপাধিতে ভূষিত করেন। তাদের মহান অবদান রয়েছে আমাদের স্বাধীনতায় সেই জন্য। কিন্তু তাদের যখন বিয়ে দিতে যায়, আসলে তখনো এখনকার যুগের মতো মানুষ তখন এতটা খোলামেলা হয়নি, একটা মেয়ে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হলে মামলা করতে পারে, নালিশ করতে পারে বা বলতে পারে! তখন এই বলাটাও ছিল একটা সামাজিক লজ্জার ব্যাপার। তাহলে তার বাবা-মাকে এক ঘরে করে ফেলা হতো। অনেক বাবা-মা তাদের পরিচয় দিতে চায়নি। মেয়েকে ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চায়নি। যখন এদের বিয়ের ব্যবস্থা করা হলো, আমার মা নিজে উপস্থিত থেকে। সেই বিয়ে দিয়েছিলেন। তখন প্রশ্ন উঠেছিল, বিয়ের কাবিননামায় বাবার পরিচয়টা কী লিখবে? জাতির পিতা বলে দিয়েছিলেন, লিখে দেবে পিতার নাম শেখ মুজিবুর রহমান, ৩২ নম্বর সড়কের ৬৭৭ নং বাড়ি, ধানমন্ডি।’
‘আসলে তখনকার সমাজব্যবস্থাটাই ছিল এমন। কোন বাবা নিলে তার অন্য মেয়েদের আর বিয়েই হবে না। তাদেরকে একটি ঘৃণার চোখে দেখা হত। অথচ এই মেয়েদের তো কোনো দোষ ছিল না। কাজেই মন-মানসিকতার পরিবর্তন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।’
আজকে অবশ্য ধীরে ধীরে সেই মানসিকতা অনেকটা পরিবর্তন হয়ে গেছে বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী।