করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে ব্যবসায়ীরা, আশা বাণিজ্যমন্ত্রীর
৮ মার্চ ২০২০ ১৫:৩৮
ঢাকা: দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে করোনাভাইরাসের প্রভাব দ্রুত সময়ে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি জানান, সরকারের পক্ষ থেকে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরাও আশাবাদী এ অবস্থার উত্তরণ ঘটবে।
রোববার (৮ মার্চ) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি) আয়োজিত ‘ইনকোটার্মস ২০২০ রুলস’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।
কাঁকড়া ও কুচিয়া শিল্পে প্রভাব পড়ায় চাষিদের কোনো প্রণোদনা দেওয়া হবে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এটা তো সাময়িক ব্যাপার। করোনাভাইরাস নিয়ে সারা পৃথিবীতেই তোলপাড় হয়ে গেছে। এখন শুধু আমাদের দেশ থেকেই না, বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকেও এ ধরনের পণ্যের অনেকখানি রফতানি বন্ধ হয়ে গেছে। এটা থেকে বেরিয়ে আসার সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। আমরা যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি, সামনের দিনে আরও কী পরিমাণ ক্ষতি হবে সেটা এখনও বলার সময় হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে আপাতত চেষ্টা করা যাচ্ছে বাংলাদেশে যেন করোনাভাইরাস ছড়িয়ে না পড়ে।’
তিনি বলেন, ‘ব্যবসাক্ষেত্রে আমরা সবচেয়ে বেশি আমদানি করি চীন থেকে। তৈরি পোশাক খাতের ৬০ শতাংশ প্রাথমিক উপকরণ আসে সেদেশ থেকে। সেটার ব্যাপারে আমাদের খুব লক্ষ্য রয়েছে, স্লাইডলি যেটা ইয়ে (প্রভাব) হয়েছে, সুখের বিষয় সেখানে ফ্যাক্টরিগুলোতে শ্রমিকরা যাওয়া শুরু করেছে। হোপফুলি ওরাও (চীন) ওই অবস্থাও কাটিয়ে উঠেছে। চীনে কিন্তু মৃত্যু হারও কমে গেছে। আর বিস্তারের হারও কমে গেছে। বাইরে অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। আজকের রিপোর্ট বলছে এই সংক্রমণটা কমে আসছে। আসলে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেটা নিরূপণ করার সময় এখনও আসেনি। আমরা এটা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।’
চীনের বিকল্প দেশগুলোতে বাজার খোঁজার ক্ষেত্রে দূতাবাস কোনো কাজ করছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দূতাবাসগুলো যেটুকু পারে তারা সেই কাজ করছে। হঠাৎ করে তাদের জনশক্তি বা ক্যাপাসিটি বেড়ে যাবে তা নয়। রেগুলার যে কাজ তারা সেগুলো করছে। ব্যবসায়ীরাও সতর্ক। আমাদের ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের যথেষ্ট জ্ঞান রাখেন। ফলো আপ ভালো আছে। সবাই কিন্তু সচেতন, কী ঘটতে যাচ্ছে, কী ঘটছে। যদি বড় রকমের বিস্তার হয়ে যায়, যারা রিটেইল কিনবে তারা যদি স্লো হয়ে যায় তাহলে আমাদের বিক্রিও কমে যাবে। সবদিক মিলিয়ে চূড়ান্তভাবে বলার এখনও সময় হয়নি। তবে সবাই খুব আশাবাদী অবস্থার উত্তরণ ঘটবে।’
দেশের পোশাক খাতে করোনার প্রভাব পড়ায় ব্যবসায়ীদের কোন প্রণোদনা বা থোক বরাদ্দ দেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে টিপু মুনশি বলেন, ‘সেটা আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। ক্ষতিটা কতদূর গভীর হয়, এখনই যদি কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় পরে দেখা গেল, সমস্যা তার চেয়ে অনেক গভীর, তাহলে সেটা আলাদা ব্যাপার। সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
আমদানি-রফতানির আড়ালে অর্থপাচারের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এটা দেখার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক আছে। এই সিস্টেমগুলো তাদের করতে হবে। বেশিরভাগ সময় যেটা বলা হচ্ছে ওভারপ্রাইসিং করা হচ্ছে। ওভার ইনভয়েস করে টাকা পঁয়সা নিয়ে যাচ্ছে। এটা একটা বড় কথা বলা হচ্ছে। এই ক্ষেত্রে তো একটা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড আছে। জিনিসটার দাম এক টাকা, সেটা যদি দেড় টাকা করে নিয়ে যায় সেখানে তো আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এটা একটা আলোচিত বিষয়।
এ ব্যাপারে বাণিজ্যমন্ত্রণালয় শক্ত অবস্থানে রয়েছে জানিয়ে টিপু মুনশি আরও বলেন, আমাদের দেশ থেকে টাকা যেন পাচার না হয়ে যায়, আমরা সতর্ক আছি। যেকোনো মূল্যেই হোক আমাদের টাকা পাচার বন্ধ করতে হবে।
অনুষ্ঠান স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাহবুবুর রহমান। প্রসঙ্গত, ইনকোটার্মস হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পণ্য আমদানি-রফতানির জন্য ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি) কর্তৃক নির্ধারিত নীতিমালাসমূহ। ১৯৩৬ সালে প্রথম আইসিসি ইনকোটার্মস সূচনা করে এবং এ বছর জানুয়ারি থেকে নতুন সংস্করণে প্রকাশিত ইনকোটার্মস ২০২০ কার্যকর হবে। অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যনীতির বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়।