করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে যা কিছু করণীয়
৮ মার্চ ২০২০ ১৭:৫৫
বিশ্বের ১০৪তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) জানিয়েছে, ইতালি থেকে দেশে ফেরা দুই ব্যক্তির শরীরে এই ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এছাড়া তাদের সংস্পর্শে আসা দেশের আরও একজনের শরীরেও পাওয়া গেছে এই ভাইরাসের উপস্থিতি।
আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানিয়েছেন, এ পরিস্থিতিতে এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তবে জনসমাগম ও গণপরিবহন যতটাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। এর সঙ্গে নিয়মিত হাত ধুতে হবে ও কাশি শিষ্টাচার মেনে চলতে হবে।
আরও পড়ুন- ইতালি থেকে দেশে আসা ২ জন, দেশে আরও একজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা
করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বেশকিছু নির্দেশনা রয়েছে। আন্তর্জাতিক এই স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এই নির্দেশনা মেনে চললে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ অনেকটাই প্রতিরোধ করা সম্ভব। দেখে নিই, কী আছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনায়।
বার বার হাত ধুতে হবে
নিয়মিতভাবে দুই হাত পরিপূর্ণভাতে ধুতে হবে। পরিচ্ছন্নতার জন্য ব্যবহৃত অ্যালকোহলযুক্ত তরল জীবাণুনাশক (হ্যান্ড রাব বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার) কিংবা সাবান-পানি ব্যবহার করতে হবে হাত ধোয়ার জন্য।
এর কারণ হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, হাতে কোনো ধরনের ভাইরাস থাকলে তা সাবান-পানি বা হ্যান্ড রাব মেরে ফেলতে সক্ষম।
৩ ফুট দূরত্ব রাখতে হবে
যে কেউ হাঁচি বা কাশি দিলে তার থেকে কমপক্ষে এক মিটার বা তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। কারণ হাঁচি ও কাশির সঙ্গে নাক ও মুখ থেকে অত্যন্ত ক্ষুদ্র কণা আকারে যা কিছু নিসৃত হয়, তাতে ভাইরাসের উপস্থিতি থাকতে হবে। ফলে কাছাকাছি থাকলে সেই কণাগুলো নিঃশ্বাসের মাধ্যমে অন্য কারও শরীরে ঢুকতে পারে। কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে তার হাঁচি বা কাশি এভাবেই অন্য কাউকেও আক্রান্ত করতে পারে।
কারও চোখ, নাক বা মুখ স্পর্শ করা যাবে না। কারণ হাতের স্পর্শ থেকে এসব অঙ্গে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। তার সেই ভাইরাস তখন শরীরে প্রবেশ করবে।
হাঁচি–কাশির সময় মুখ ঢাকতে হবে
হাঁচি ও কাশি দেওয়ার শিষ্টাচার মেনে চলতে হবে। অর্থাৎ হাঁচি বা কাশি দেওয়ার সময় হাত, টিস্যু বা রুমাল দিয়ে মুখ ও নাক ঢেকে রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে টিস্যু ব্যবহার করলে তা সঙ্গে সঙ্গে উপযুক্ত স্থানে ফেলতে হবে। আর রুমাল ব্যবহার করলে তা ধুয়ে ফেলতে হবে। হাঁচি-কাশির এই শিষ্টাচার কেবল করোনাভাইরাসের সংক্রমণই নয়, বেশিরভাগ ফ্লু (সর্দি-ঠান্ডার কারণ) ছড়ানো ঠেকাতে সক্ষম।
জ্বর–কাশি–শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে
কারও শরীরে জ্বর এলে, কাশি দেখা দিলে কিংবা শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দিলে সময় নষ্ট না করে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। এসময় বাইরে বের না হয়ে ঘরে থাকতে হবে। আর ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সেভাবে চলতে হবে।
তথ্য জানুন, সচেতন থাকুন
করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ ভাইরাস নিয়ে হালনাগাদ তথ্য জেনে রাখতে হবে। স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবাদাতা এবং জাতীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের পরামর্শ অনুসরণ করতে হবে। কারণ এসব কর্তৃপক্ষের কাছেই স্থানীয় করোনাভাইরাস পরিস্থিতি সম্পর্কে সবচেয়ে হালনাগাদ তথ্য রয়েছে এবং এর সংক্রমণ প্রতিরোধে কী করতে হবে, সে বিষয়ে তারাই উপযুক্ত পরামর্শটি দিতে পারেন।
আইইডিসিআরের পরামর্শ
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে আইইডিসিআরের পক্ষ থেকেও বেশকিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনাগুলোও এর মধ্যে রয়েছে। আইইডিসিআরের পরামর্শগুলো একনজরে দেখে নিন—
- নিয়মিত সাবান ও পানি দিয়ে দুই হাত ধুয়ে নিতে হবে (অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে)
- অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করবেন না
- আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন
- কাশি শিষ্টাচার মেনে চলুন (হাঁচি-কাশির সময় হাত, টিস্যু বা কাপড় দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখুন)
- অসুস্থ পশু/পাখির সংস্পর্শ পরিহার করুন
- মাছ-মাংস-ডিম ভালোভাবে রান্না করে খাবেন
- অসুস্থ হলে ঘরে থাকুন, বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হলে নাক-মুখ ঢাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার করুন
- জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বিদেশ ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকুন এবং এ সময়ে অন্য দেশ থেকে প্রয়োজন ছাড়া বাংলাদেশ ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করুন
- অত্যাবশ্যকীয় ভ্রমণে সাবধানতা অবলম্বন করুন
- কারও সঙ্গে হাত মেলানো (হ্যান্ড শেক) ও কোলাকুলি থেকে বিরত থাকুন
- অত্যাবশ্যকীয় ভ্রমণে সাবধানতা অবলম্বন করুন
করোনাভাইরাস করোনাভাইরাস এড়াতে করণীয় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কোভিড-১৯