নিজের যোগ্যতায় নারীদের ক্ষমতা অর্জনের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
৮ মার্চ ২০২০ ১৮:২৭
ঢাকা: নারীদের নিজের যোগ্যতায় নিজেদের ক্ষমতা অর্জন করে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘ক্ষমতা জোর করে হয় না, ক্ষমতা নিজের যোগ্যতায় অর্জন করে নিতে হয়। কেউ হাতে তুলে ক্ষমতা দেয় না।’
রোববার (৮ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ৮ মার্চ নারী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ‘প্রজন্ম হোক সমতার, সকল নারীর অধিকার’ শীর্ষক প্রতিপাদ্য নিয়ে পালিত হচ্ছে বিশ্ব নারী দিবস।
সরকারি চাকরি থেকে শুরু করে বিভিন্ন চাকরিতে নারীদের প্রবেশের দ্বার উন্মোচনে জাতির পিতার বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন এবং নারীদের সর্বক্ষেত্রে একটা সুযোগ করে দিয়েছিলেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। এসময় তিনি তার সরকারের প্রথম মেয়াদে নারীদের জন্য নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘১৯৯৬ সালে যখন সরকারে আসি আমি দেখেছিলাম আমাদের অনেকে ক্ষেত্রে নারীদের কোন স্থানেই নাই। খেলাধুলায় মেয়েরা যাতে অংশগ্রহণ করতে পারে, তার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছিলাম। প্রথমবার সরকারে এসে যথেষ্ট বাধার সৃষ্টি হয়েছিল, প্রথমবার যখন আমরা প্রমীলা ফুটবল নাম দিয়েছিলাম, এই প্রমীলা ফুটবলের কম্পিটিশিন করতে যেয়ে প্রচণ্ড বাধার সম্মুখীন হই। কোন কোন জেলায় তো সেই খেলা অনুষ্ঠিতই হতে পারেনি, এমন বাধা এসেছিল। দ্বিতীয় বার সরকারে এসে প্রাইমারি লেভেল থেকে আমি খেলার কম্পিটিশন শুরু করি। আজ আপানারা দেখেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এবং আঞ্চলিকভাবে আমাদের মেয়েরা খেলাধুলায় তাদের পারদর্শিতা দেখাতে সক্ষম হচ্ছে।’
প্রতিটি ক্ষেত্রেই মেয়েদের সুযোগ করে দিচ্ছি এবং আমাদের মেয়েরা যেখানেই যাচ্ছে, তাদের পারদর্শিতা দেখাচ্ছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শান্তিরক্ষা মিশনে আমাদের পুলিশ বাহিনীর একটি কন্টিনজেন্ট আছে কঙ্গোতে, ওখানে তারা খুব ভাল কাজ করছে। মেয়েদের ডিমান্ডটা কিন্তু এখন খুব বেড়ে গেছে। শান্তিরক্ষা মিশনে,একটা গোপন কথা বলে দিচ্ছি, প্রকাশ্যে বললাম। সবাই এখন অফিসার চায়। সেটা আমাদের সশস্ত্র বাহিনী, সেনাবাহিনী বা পুলিশ বাহিনী মেয়েদের বেশি চাচ্ছে তারা। কারণ মেয়েরা অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিতে সক্ষম হচ্ছে। ছেলেরাও করছে, আমি এটা বলবো না, ছেলেরা করে না। কিন্তু মেয়েরা ভাল করছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।’
করোনা নিয়ে ঘাবড়ানোর কিছু নেই, সচেতন থাকুন: প্রধানমন্ত্রী
তিনি আরও বলেন, ‘জেন্ডার গ্যাপ নিয়ে একটা প্রশ্ন আছে সারা বিশ্বব্যাপী। আমাদের সমস্যাটা কিন্তু উল্টে গেছে। কারণ আমাদের এখন ছাত্রীর সংখ্যা বেশি হয়ে গেছে, ছাত্রের সংখ্যা কম। কাজেই আমরা যদি ছাত্রছাত্রীর তুলনা করি, আমি দেখি সেখানে আমাদের ছাত্রীর সংখ্যাই বেশি এবং পাসও করে তারা ভাল। ছেলেরা কেন পিছিয়ে আছে, আমাদের এখন জেন্ডার গ্যাপ পূরণ করার জন্য সে দিকটায় নজর দিতে হবে। ’ এব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রীকে বিশেষভাবে নজর দেওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
নারীদের জন্য সবদিকেই দৃষ্টি দিয়ে কাজ করে যাচ্ছি দাবি করে টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার প্রধান শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চাই, আমাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। পার্লামেন্টে আমরা আছি। এবার আমাদের বিরোধী দলের নেতা বক্তব্য দিচ্ছিলেন যে, নারীদের ক্ষমতা…। আমি ওনাকে দেখালাম, আমরা বসে আছি- স্পিকার নারী, সংসদ নেতা নারী, উপনেতা নারী, বিরোধী দলের নেতা নারী; কাজেই সেখানে দাঁড়িয়ে বিরোধী দলের নেতা কি করে বলেন যে মেয়েদের ক্ষমতা নাই!’
‘কবি নজরুল বলে গেছেন, বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণ কর, অর্ধেক তার আনিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর। এতো বাস্তব কথাটা তিনি বলে গেছেন। কাজেই একথাটা মাথায় রেখেই আমাদের বোনদের নিজেদেরকে তৈরি করতে হবে। আর এখন তো শিক্ষায়, দীক্ষায়, সবক্ষেত্রেই আমাদের মেয়েরা যথেষ্ট অগ্রগামী ভূমিকা নিচ্ছে। এভাবেই আমরা এগিয়ে যাব, সেটাই আমরা চাই’, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
এসময় নারী দিবসে দেশে বিদেশের সকল নারীর প্রতি অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে নারী উন্নয়ন ও বঙ্গবন্ধু শিরোনামে একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
এতে সভাপতিত্ব করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন- মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী রওশন আক্তার। এবার ৫ জন নারীকে জয়িতা পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। এরা হলেন- আনোয়ারা বেগম, সুপর্ণা দে সিম্পু, সফল জননী মমতাজ বেগম, অরনিশা মেহেরিন ঋতু এবং ভেলরি অ্যান টেলর।