Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনাভাইরাস: মাস্কের চাহিদা আকাশচুম্বী, প্রয়োজন কতটুকু?


৯ মার্চ ২০২০ ০৮:৩৩

ঢাকা: করোনাভাইরাসে বাংলাদেশের তিনজন আক্রান্ত হওয়ার খবর প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে মাস্কের চাহিদা। ভাইরাসটির সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে মানুষ বাজারে ছুটছে মাস্ক কিনতে। তবে বর্তমানে বাজারে মাস্ক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। এই সুযোগে প্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম বাড়িয়ে অবৈধভাবে মুনাফা তুলে নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এই মুর্হূতে মাস্ক তেমন প্রয়োজন নেই। মাস্ক নিয়ে হুলস্থুল না করে জনগণেরর উচিত হবে, যত্রতত্র থুথু না ফেলা, গণপরিবহন, বাজার ও সভা-সমাবেশ এড়িয়ে চলা।

রোববার (৮ মার্চ) বিকেলে আইইডিসিআরে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ইতালি থেকে দেশে আসা দুই বাংলাদেশির শরীরে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পাওয়া গেছে। এছাড়া তাদের সংস্পর্শে আসা আরও একজন এই ভাইরাসের সংক্রমণের শিকার হয়েছেন। রক্তের নমুনা সংগ্রহের পর পরীক্ষা করে তাদের শরীরে এই ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এ সংবাদ প্রকাশের পরেই বাজারে গিয়ে দেখা যায়, মাস্ক নিয়ে হুলস্থুল কাণ্ড। সুযোগে বুঝে মাস্কের দামও বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। রোববার বিকেলে তোপখানা রোডের বিএমএ ভবনে সার্জিক্যাল উপাদান বিক্রির মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, মাস্কের জন্য ভিড় করছে ক্রেতারা। অধিকাংশ দোকানদার বলছেন, তাদের দোকানে মাস্ক নাই। দুয়েকটি দোকানে থাকলেও তা নিয়ে কাড়াকাড়ি চরমে। তিন টাকার মাস্ক এখন ৩০ টাকায়ও পাওয়া যাচ্ছে না। দোকানদারের বলছেন, মাস্ক সংকট আগে থেকেই। তার ওপর বাংলাদেশে করোনা আক্রান্তের খবর প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে মাস্কের চাহিদা কয়েকগুণ বেড়েছে। এতে খুব কম সময়ের মধ্যে চাহিদা অনুযায়ী পণ্যটির যোগান দেওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।

এ সময় কথা হয় মাস্ক ক্রেতা রাসেলের সঙ্গে। তিনি কলাবাগান, ফার্মগেট, শাহবাগ ঘুরে এই মার্কেটে এসেছেন মাস্ক নিতে। এখানে এসেও তিনি হতাশ। কোন দোকানেই তিনি মাস্ক পাচ্ছেন না। রাসেল জানান, তার পরিবারের জন্য ১০টা মাস্ক কিনতে হবে। কিন্তু কোনো দোকানেই পাওয়া যাচ্ছে না।

একই অভিযোগ ব্যবসায়ী নুরুজ্জামানের। তিনি জানান, তার পরিবারের জন্য তিনটি মাস্ক কিনতে এসেছেন, কিন্তু দোকানদার বলছেন মাস্ক নেই। দাম বেশি দিয়েও মাস্ক পাওয়া যাচ্ছে না।

মাস্কের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএমএ ভবন দোকান মালিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. রিয়াজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা দাম বাড়াইনি। বরং মাস্ক সংকট। এটা তো আজকের বিষয় না। বরং আমরা গত দুই মাস ধরে বাজারে মাস্ক সংকটের কথা বলে আসছি।’

রিয়াজুল বলেন, ‘আমাদের দেশে অধিকাংশ মাস্কই আসে চীন থেকে। সেখানে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে মাস্ক আমদানি প্রায় বন্ধ। দেশের মধ্যে মাত্র তিনটি কোম্পানি মাস্ক তৈরি করে। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী তারা যোগান দিতে পারছে না। ফলে দাম তো কিছুটা বেড়েছে। তবে আমি বলব, মাস্ক শুধু সংকটই নয়, মহাসংকটেরও বড় কিছু।’

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে মাস্ক কতটা জরুরি জানতে চাইলে প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের দেশে মাত্র তিনজন রোগী শনাক্ত হয়েছে। যার মধ্যে দুজন ইতালি থেকে এসেছে। এই মুর্হূতে সব মানুষের মাস্ক পরার দরকার নেই। এটা নিয়ে হুজুগ তোলা উচিত না। মাস্ক নিয়ে হুলস্থুল না করে যত্র তত্র থু থু ফেলা থেকে সতর্ক থাকা উচিত। হাত-পা পরিস্কার রাখা। মানুষের সামনে হাঁচি কাশি না দেওয়া। বিদেশ থেকে আসা আত্মীয়-স্বজনের হাঁচি-কাশি থাকলে তাদের আইসোলোশনে রাখা।’

এই মুর্হূতে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গণপরিবহন, বাজার-ঘাট, সভা-সমাবেশ এড়িয়ে চলা উচিত বলে সুপারিশ করেন এই চিকিৎসক।

দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেলেও এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে মনে করছেন অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। তিনি সবাইকে সচেতন হওয়ার জন্য এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেককে এখনই মাস্ক পরে ঘুরতে হবে, এমন পরিস্থিতি হয়নি। তবে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’

ডা. ফ্লোরা বলেন, ‘এই ভাইরাস যেন অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে না পড়ে, আমরা সে ব্যবস্থা নিতে পারব বলে আশাবাদী। এ বিষয়ে আমরা গণমাধ্যমের সহযোগিতা কামনা করছি। আমরা মনে করছি না, এই ভাইরাস সারাদেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে।’

সরকারের প্রস্তুতির কথা জানিয়ে আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, আমরা হাসপাতালগুলোতে আইসোলেটেড ইউনিটের ব্যবস্থা করেছি। এছাড়া আইসোলোটেড হাসপাতাল করা যায় কীভাবে, আমরা তা দেখছি। শুধু হাসপাতাল নয়, স্কুল-কলেজ বা অন্য কোথাও হাসপাতাল স্থাপন করা যায় কী-না, সে বিষয়ে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে।’

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, কোভিড-১৯-এর লক্ষণ (বিশেষ করে কাশি) দেখা দিলেই কেবল মাস্ক পরুন। এছাড়া কোভিড-১৯ থাকতে পারে— এমন কারও সংস্পর্শে থাকলেও মাস্ক পরুন। ডিসপোজাল ফেস মাস্কগুলো একবারের বেশি ব্যবহার করা যাবে না। অসুস্থ না হলে বা অসুস্থ কারও দেখাশোনার দায়িত্বে না থাকলে মাস্কের ব্যবহার অপ্রয়োজনীয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাপীই মাস্কের সংকট রয়েছে। তাই উপযুক্ত কারণ না থাকলে মাস্ক ব্যবহার না করাই ভালো।

করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ চরম বাজারে মাস্ক সংকট


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ধানমন্ডি থেকে গ্রেফতার শাজাহান খান
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০২:৪৫

সম্পর্কিত খবর