ডিএসসিসির ‘অনস্ট্রিট পার্কিং’ চলছে ইজারাদারদের নিয়মে
১০ মার্চ ২০২০ ১০:১৪
ঢাকা: নির্ধারিত পার্কিংয়ের জায়গায় কোনো ব্যবসা না করা, অতিরিক্ত ফি না নেওয়া, পার্কিং ফি বোর্ডে টানিয়ে দেওয়াসহ ১৫টি শর্ত। ৬টি স্থানে অনস্ট্রিট পার্কিং ইজারা দেওয়ার সময় এসব শর্তই দিয়েছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। কথা ছিল, সড়কে যানজট নিয়ন্ত্রণ এবং যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং রোধ। শর্ত সাপেক্ষে দুই বছর আগের এই ব্যবস্থা মানছে না কোনো ইজারাদার। প্রতিরোধে কোনো উদ্যোগও নেই ডিএসসিসির।
ডিএসসিসির অনস্ট্রিট পার্কিংয়ের শর্তানুযায়ী, নির্ধারিত পার্কিংয়ের স্থানে কোনো ব্যবসা করা যাবে না, অতিরিক্ত ফি নেওয়া যাবে না এবং প্রতি ঘণ্টা ১০ টাকা নির্ধারণ করা ও পার্কিংয়ের নির্ধারিত স্থানের দুইদিকে দৃশ্যমান বোর্ডে পার্কিং ফি টানিয়ে দিতে হবে। এমন ১৫টি শর্ত দেওয়া হয় ইজারাদারদের জন্য।
কিন্তু সরেজমিনে দেখা গেছে, শর্তে প্রতি ঘণ্টায় ১০ টাকা নির্ধারণ করলেও ইজারাদাররা ২০ টাকার নিচে কোনো ফি নিচ্ছে না। অর্থাৎ টিকিট বানানো হয়েছে ২০ টাকার। আবার পার্কিংয়ের স্থানে অন্য কোনো ব্যবসা করার শর্ত না থাকলেও অধিকাংশ স্থানে বিভিন্ন হকার ও অস্থায়ী দোকান চলছে টাকার বিনিময়ে। শর্তানুযায়ী এসব নিয়মের ব্যতিক্রম হলে ইজারাদারের ইজারা বাতিল ঘোষণা করার কথা থাকলেও এ নিয়ে ডিএসসিসির কোনো উদ্যোগের কথা কেউ বলতে পারেনি।
চলতি বছরে অনস্ট্রিট পার্কিংয়ের জন্য ডিএসসিসি ৬টি স্থান ইজারা দেয়। মতিঝিলের ২৪ তলা বিল্ডিং থেকে এ্যালিকো বিল্ডিং পর্যন্ত ৯৫টি পার্কিংয়ের স্থান ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকায় ইজারা পেয়েছেন রিফাত ইন্টারপ্রাইজের মালিক মো. নুরুল ইসলাম চৌধুরী, বায়তুল মোকাররমের স্বর্ণের মার্কেটের পাশের সড়কের একপাশে পার্কিংয়ের ৪৮ টি স্থান ৫ লাখ ৩২ হাজার টাকায় ইজারা পেয়েছেন ডিএ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. দিদার, পলওয়েল মার্কেটের সামনের সড়কে পার্কিংয়ের ১৮টি স্থান ১ লাখ ১৭ হাজার ৮০০ টাকায় ইজারা পেয়েছেন দি ফিউচার এসেস্টের মালিক মো. আরজু, হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল থেকে নেভী কলোনি পর্যন্ত রাস্তার এক পাশে পার্কিংয়ের ৬২ টি স্থান ৪ লাখ ২৯ হাজার টাকায় ইজারা পেয়েছেন পার্কিং কইইনক লি. মালিক মো. রাফাত রহমান, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের সামনের সড়কে ৮৩ স্থান ৬ লাখ ১ হাজার টাকায় ইজারা পেয়েছেন এইচ এন্ড এন এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. মাহবুবুল হক এবং বাটা সিগন্যাল থেকে গাউছিয়া পর্যন্ত সড়কে পার্কিংয়ের ৪৮টি স্থান ২ লাখ ৬৫ হাজার টাকায় ইজারা পেয়েছেন টাইমস ইন্টারন্যাশনালের মালিক মো. নসিরুল ইসলাম সবুজ।
সরেজমিনে এসব অনস্ট্রিট পার্কিংয়ের স্থানগুলোতে দেখা যায়, বাটা সিগন্যাল থেকে গাউছিয়া পর্যন্ত নির্ধারিত পার্কিংয়ের বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমান সবজি, জুতা এবং পোশাক বিক্রেতারা টাকার বিনিময়ে ব্যবসা করছেন। এজন্য তারা দৈনিক ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত দেন ইজারাদারের লাইনম্যানদের। আবার ঘণ্টায় ১০ টাকা ডিএসসিসির নির্ধারিত ফি থাকলেও তারা নিচ্ছেন ২০ টাকা। আবার নির্ধারিত ফি উল্লেখ করে বোর্ড টানানোর কথা থাকলেও তাও নেই।
ডিএসসিসি মার্কেটে পার্কিং স্পেসে দোকান, খালি নেই কোনো জায়গা
ফি বেশি নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে গাউছিয়ার লাইনম্যান রিফাত সারাবাংলাকে বলেন, আমরা কিছু জানি না। আমাদের যত টাকার টিকিট দিয়েছে আমরা ততো টাকার টিকিট দিচ্ছি গাড়িওয়ালাদের। আমরা তো এসব করি নি। যারা এগুলো ইজারা নিয়েছেন তারা বলতে পারবেন। আমরা তো শুধু মাস শেষে বেতন নেই।
একই কথা বলেন মতিঝিলের লাইন ম্যান রিংকু মিয়া। তিনি বলেন, ডিএসসিসি ঘণ্টা প্রতি ১০ টাকা নিতে বলেছে। আমরাও তো প্রতি ঘণ্টা ১০ টাকা নিচ্ছি। টিকিটে ২০ টাকা লেখা দেখিয়ে সে বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ২০ টাকা হচ্ছে প্রথম দুইঘণ্টার জন্য। পরের প্রতি ঘণ্টা ১০ টাকা করে।
অর্থাৎ লাইনম্যান রিংকু বোঝাতে চেয়েছেন তারাও প্রতি ঘণ্টা ১০ টাকাই নেন, তবে তা প্রথম দুইঘন্টা পর। কিন্তু যখন প্রথম ঘণ্টা থেকেই ১০ টাকা করে নেওয়ার নিয়ম সেটি কেনো মানা হচ্ছে না এমন প্রশ্নে তিনি রেগে গিয়ে এ প্রতিবেদককে বলেন, সেটা সিটি করপোরেশন বুঝবে। আপনার এতো দরকার কি?
একই অবস্থা পলওয়েল মার্কেট, বায়তুল মোকাররম স্বর্ণ মার্কেট, মতিঝিল আইডিয়াল ও হলি ফ্যামিলিতেও। কোথাও ২০ টাকার নিচে পার্কিং ফি নিচ্ছে না তারা। যদিও তাদের যুক্তি ডিএসসিসি প্রতি ঘণ্টা ১০ টাকা নির্ধারণ করলেও তারা প্রতি দুই ঘণ্টার জন্য ২০ টাকা নিচ্ছে। সুতরাং এতে নিয়ম ভাঙা হচ্ছে না, দাবি তাদের। তবে এসব বিষয়ে ইজারাদারদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তারা কেউ কথা বলতে রাজি হননি। উল্টো এসব বিষয়ে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তারা।
এসব অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসসিসির সম্পত্তি বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন সারাবাংলাকে বলেন, যদি এ ধরণের অনিয়মের লিখিত অভিযোগ পাই এবং প্রমাণ মেলে তবে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর যেহেতু আপনি এমন তথ্য জানিয়েছেন বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবো।
আগামীকাল পড়ুন – যানজট কমানোর নামে রাস্তায় গাড়ির রাজত্ব, পকেট ভরাচ্ছে ডিএসসিসি
আরও পড়ুন – ডিএসসিসি মার্কেটে পার্কিং স্পেসে দোকান, খালি নেই কোনো জায়গা