‘করোনা নিয়ে সরকারের উদাসীনতা ক্ষমা করবে না জনগণ’
১০ মার্চ ২০২০ ১১:৩৮
ঢাকা: করোনাভাইরাস প্রতিরোধের ব্যাপারে সরকার যথাযথ প্রস্তুতি, উদ্যোগ, প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘করোনা নিয়ে সরকারের উদাসীনতা জনগণ ক্ষমা করবে না।’
মঙ্গলবার (১০ মার্চ) সকালে নয়াপল্টনে করোনাভাইরাস নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির পূর্বঘোষিত সব কর্মসূচিও স্থগিত করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশ আজ করোনা ভাইরাসের শিকার। সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী অন্তত তিন জন নাগরিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে সনাক্ত হয়েছেন। গতকালও বিদেশ প্রত্যাগত আরও তিনজন বাংলাদেশিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত অবস্থায় হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বিএনপি, দেশের অনেক বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান গত বেশ কিছু দিন ধরে এই সমস্যার সম্ভাবনার কথা বার বার বলার পরও সরকার শুধু জনগণকে আশ্বস্তই করেছে।’
করোনা নিয়ে সরকার কাজের কাজ কিছু করেনি অভিযোগ করে তিনি বলেন, ইতালি থেকে ঢাকা প্রত্যাগত ২ ভাইয়ের রোগ বিমান বন্দরে শনাক্ত হয়নি। দেশে ফেরার ৪ দিন পর অবস্থার অবনতি হওয়া তারা যখন চিকিৎসায় উদ্যোগী হয়েছেন তখন সরকার তাদের হাসপাতালে স্থানান্তর করেছে। কিন্তু ইতোমধ্যে তাদের একজনের স্ত্রী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।’
ফখরুল বলেন, ‘আক্রান্তদের সংস্পর্শে যারা এসেছিল, তাদের তৎক্ষনাৎ কোয়ারেন্টাইনে না নেওয়া সরকারের আরেকটি ব্যর্থতা। তিন দিন পর মাত্র গতকাল এমন ৪০ জনকে কোয়ারেন্টাইনে নেওয়ার কথা জানা গেল। যে ফ্লাইটে তারা ঢাকা এসেছেন সেই ফ্লাইটের অন্যান্য যাত্রীরা, বিশেষ করে যারা কাছাকাছি বসেছিলেন, দীর্ঘ ভ্রমণের সময় তাদেরও আক্রান্ত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের ব্যাপারে জনসচেতনতা নিশ্চিত করার জন্য মিডিয়াসহ সরকারি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহকে যেমন তরিৎ ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন ছিল, তাও নেওয়া হয়নি। মুজিববর্ষ পালনের ডামাডোলে জনস্বার্থ অবহেলা করে সরকার দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে।’
ফখরুল বলেন, ‘করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য যে ধরনের প্রাক প্রস্তুতি প্রয়োজন ছিল, তাও নিতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। এমন পরিস্থিতিতে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের প্রয়োজন বাড়বে জানা সত্ত্বেও তা যথেষ্ট পরিমাণে আমদানি কিম্বা উৎপাদনের ব্যবস্থা না নেওয়ায় গত পরশু সন্ধ্যার মধ্যেই বাজারে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের দাম কয়েকগুন বেড়ে গেছে। ৪/৫টাকার মাস্ক ৫০/৬০ টাকায় বিক্র হয়েছে এবং সন্ধ্যার পর বাজারে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার পাওয়া যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যে কটি হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার কথা বলা হচ্ছে, সে গুলোর মান এবং আক্রান্তদের সুচিকিৎসা দেওয়ার সামর্থ নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন আছে। অন্যদিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা থেকে ঔষধ, যন্ত্রপাতি, ডাক্তার ও নার্সদের প্রশিক্ষণ এবং তাদের নিরাপতত্তা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নেওয়ার জরুরি দায়িত্ব সরকার পালন করতে পারেনি। ফলে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়লে দেশবাসী গণহারে অকাল মৃত্যুর শিকার হতে পারেন।’
যত দ্রুত সম্ভব আক্রান্ত রোগী এবং সম্ভব্য আক্রান্ত রোগীদের সুচিকিৎসা এবং ভাইরাসের প্রকোপ যাতে না বাড়ে তার জন্য সতর্কতা ও প্রতিরোধমূলক যাবতীয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে ফখরুল বলেন, ‘এ ব্যাপারে সরকারের ব্যর্থতা জনগণ কখনও ক্ষমা করবে না। কারণ, জনগণ ৭৪ এর মত আরেকবার গণমৃত্যুর শিকার হতে চায় না।’
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা উচিত
চলমান পরিস্থিতি অবিলম্বে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা উচিত বলে মত দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বরেন, করোনাভাইরাস সারা পৃথিবীতে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে, তাতে অবিলম্বে বাংলাদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা উচিত। পথম ধাপে অন্তত দুই সপ্তাহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠাত বন্ধ রাখা যেতে পারে।
অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, কেন্দ্রীয় নেতা নাজিম উদ্দিন আলম, আবদুস সালাম আজাদসহ অন্যরা।