জাবি’র প্রশাসনে সংকট, ভোগান্তির চরমে নবীন শিক্ষার্থীরা
১০ মার্চ ২০২০ ১২:১৮
১৯৭৩ সালের আইন অনুসারে সম্পূর্ণ আবাসিক চরিত্রের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের (৪৯ তম ব্যাচ) স্নাতক (সম্মান) প্রথমবর্ষের কার্যক্রম শুরু হয়েছে মঙ্গলবার (১০ মার্চ)। কিন্তু, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নানামুখী সংকটের মুখে সংযুক্ত আবাসিক হলগুলোতে উঠতে না পেরে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন নবীনতম শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে, নারী শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা উদ্বেগ উৎকণ্ঠা নিয়ে দিন পার করছেন।
এদিকে, মঙ্গলবারের প্রথম ক্লাসকে সামনে রেখে সোমবারেই (৯ মার্চ) দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা এসে পূর্বেই ঘোষিত সংযুক্ত হলগুলোর সামনে অবস্থান নেন। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে তাদের অনেকের সঙ্গেই অভিভাবকরা এসেও জড়ো হন।
কিন্তু, আবাসিক হলগুলোতে সিট ফাঁকা না থাকার কথা উল্লেখ করে নবীন শিক্ষার্থীদের সংযুক্ত হলগুলোতে ওঠার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে নোটিশ টানিয়ে দেয় স্ব স্ব হল প্রশাসন। এবং আপাততঃ শিক্ষার্থীদের অন্যত্র আবাসনের ব্যবস্থা করে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
সোমবার (৯ মার্চ) শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের বিক্ষোভের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কমিটি জরুরি বৈঠক করে সন্ধ্যায় পরিত্যক্ত আল বেরুণী (সম্প্রসারিত) হল (বর্তমান চারুকলা অনুষদ), শিক্ষকদের কোয়ার্টারে ২০০ নারী শিক্ষার্থীর সাময়িক আবাসনের ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু, বাদবাকি শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকটের সুরাহা করতে পারেনি প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথমদিনেই এমন অনভিপ্রেত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা। তাদের মধ্যে কয়েকজন সারাবংলাকে জানিয়েছেন, প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেছেন, ক্লাস শুর হয়ে গেছে, হলে থাকা যাচ্ছে না, আবার বাইরে নিজেদের আবাসনের ব্যবস্থা করে নেওয়ার মতো আর্থিক সঙ্গতিও নেই তাদের। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে তাদের উচ্চ শিক্ষাগ্রহণ হুমকির মুখে পড়েছে।
তবে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দাবি করেছে বিশ্বদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে হল সংযুক্তির নোটিশের ভেতরে এবং ফরম পূরণের সময় দেওয়া মোবাইল নম্বরে এসএমএসের মাধ্যমে সংযুক্ত আবাসিক হলগুলোতে এখনই সিট থাকার বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশে বর্ণিত প্রক্রিয়া যথাযথভাবে মেনে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কী না – তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকার আন্দোলনের কর্মী ও প্রগতিশীল শিক্ষার্থীরা।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাবি শাখার সভাপতি মিখা পিরেগু সারাবাংলাকে জনান, প্রশাসনের এরকম সিদ্ধান্তে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সম্পূর্ণ আবাসিক’ প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
সারাবাংলার পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি অধ্যাপক বশির আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘আবাসিক চরিত্র’ প্রশ্নের মুখে পড়ার সম্ভাবনা বাতিল করে দিয়ে বলেন, দীর্ঘদিনের সিট সংকট কাটাতে নতুন আবাসিক হলগুলো নির্মাণাধীন থাকা, মেয়াদোত্তীর্ণ পলিটিক্যাল শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের ক্যাম্পাস প্রতিনিধিদের অবৈধভাবে হলে অবস্থান এবং স্নাতকোত্তর শ্রেণীতে গবেষণা জটিলতা ও সিনিয়রমোস্ট শিক্ষার্থীদের র্যাগের অনুষ্ঠান আয়োজনে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে। সংকটকালীন ব্যবস্থা হিসেবে আপাততঃ পুরুষ শিক্ষার্থীদের স্ব স্ব হলের ডাইনিং, কমনরুম, টিভিরুম, হল সংসদ কক্ষে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এবং ২০০ নারী শিক্ষার্থীকে শিক্ষক কোয়ার্টার ও পরিত্যক্ত আল বেরুণী (সম্প্রসারিত) হলে রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সবগুলোর আবাসিক হলের প্রভোস্টদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকের মাধ্যমে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। দ্রুতই এ সমস্যার সাময়িক সমাধান এবং আগামী শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার আগেই স্থায়ী সমাধান করা সম্ভব হবে।
২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রভোস্ট কমিটি সিট সংকট