চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে থার্মাল স্ক্যানার স্থাপন
১০ মার্চ ২০২০ ১৮:৩৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো: করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বিদেশফেরত যাত্রীদের জ্বর শনাক্ত করতে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি নতুন থার্মাল স্ক্যানার বসানো হয়েছে। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরেও একটি থার্মাল স্ক্যানার স্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
মঙ্গলবার (১০ মার্চ) সকালে থার্মাল স্ক্যানারটি বিমানবন্দরে এসে পৌঁছে। স্থাপনের পর দুপুর ২টা থেকে সেটি পুরোদমে কাজ শুরু করেছে বলে সারাবাংলাকে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন পদমর্যাদার বন্দর স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোতাহার হোসেন।
মোতাহার সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ২টি থার্মাল স্ক্যানারের চাহিদা জানিয়েছিলাম। একটি বিমানবন্দরের জন্য এবং আরেকটি সমুদ্রবন্দরের জন্য। বিমানবন্দরেরটি জরুরি ভিত্তিতে পাঠানো হয়েছে। সেটি দুপুর থেকে কাজ করছে। সমুদ্রবন্দরেরটা সপ্তাহ দু’য়েকের মধ্যে আসবে বলে আমাদের জানানো হয়েছে।’
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গত ৩১ জানুয়ারি থেকেই বিদেশফেরত যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা শুরু হয়। তবে প্রথমদিকে শুধু চীন থেকে আসা যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছিল। এখন সবাইকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর ভাইরাসমুক্ত সনদ নিয়ে তারপর বিমানবন্দর ত্যাগের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষিত ৬টি দেশ থেকে আসা যাত্রীদের ওপর বাড়তি নজর দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা। দেশগুলো হচ্ছে- চীন, ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ইরান।
আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুট মিলিয়ে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রতিদিন সাড়ে ৪ হাজারের মতো যাত্রী আসা-যাওয়া করে। এর মধ্যে দেড় হাজার আন্তর্জাতিক রুটের যাত্রী। যে ৬টি দেশের বিষয়ে বাড়তি সতর্কতা আছে সেগুলোর সঙ্গে সরাসরি কোনো ফ্লাইট যোগাযোগ চট্টগ্রামের নেই। চট্টগ্রাম থেকে আন্তর্জাতিক সব ফ্লাইটই মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন রুটের। তবে কানেক্টিং ফ্লাইটে এসে ওইসব দেশের যাত্রীরাও চট্টগ্রাম বিমানবন্দর পার হন।
বন্দর স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেবে, ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত বিমানবন্দরে প্রায় ৪১ হাজার যাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে সেখানে কারও মধ্যে করোনা ভাইরাসের উপসর্গ পাওয়া যায়নি।
মোতাহার হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এতদিন আমরা ইনফ্রায়েড থার্মোমিটারে প্রত্যেক যাত্রীকে ধরে একজন একজন করে জ্বর পরীক্ষা করতাম। এতে অনেক সময় লাগত। এখন স্ক্যানার বসানোর পর কাজটা অনেক দ্রুত হবে। স্ক্যানার নিয়ে অনেক যাত্রী একসঙ্গে বের হবে। কারও জ্বর থাকলে সেটা সংকেতের মাধ্যমে শনাক্ত হবে। ইনফ্রায়েড থার্মোমিটার এবং থার্মাল স্ক্যানার- দুটোর কাজ একই। শুধু একটা একজন একজনকে ধরে করতে হত। আর স্ক্যানারে অটোমেটিক হবে।’
মঙ্গলবার বিকেলে বন্দর স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন এবং চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি বিমানবন্দরে গিয়ে থার্মাল স্ক্যানার পরিদর্শন করেন।
এদিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রামের সরকারি হাসপাতালের পরিচালকদের নিয়ে এক জরুরি সভা হয়েছে। এতে করোনা মোকাবিলায় চট্টগ্রামের সরকারি হাসপাতালগুলোর আইসোলেশান ইউনিটের ক্ষমতা বাড়ানো, আউটডোর রোগীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বী। এরপর কোয়ারেন্টাইনের জন্য প্রস্তুতির অংশ হিসেবে হালিশহর পিএইচ আমিন একাডেমি স্কুল ও সিডিএ পাবলিক স্কুল পরিদর্শন করা হয় বলে তিনি জানান।
চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট কোভিড-১৯ রোগে সোমবার (৯ মার্চ) পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ দশ হাজার ৪১ জন। ইতোমধ্যেই করোনাভাইরাস আক্রান্ত ৬১ হাজার ৯৭৯ জন সেরে উঠে নিয়মিত জীবনে ফিরে গেছেন। এদিকে এরই মধ্যে ৮ মার্চ ইতালি থেকে আসা দুজনের শরীরে এবং তাদের সংস্পর্শে আসা একজনের শরীরে এই রোগের উপস্থিতি শনাক্তের পর বাংলাদেশ ১০৪তম দেশ হিসেবে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।
চট্টগ্রাম চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর থার্মাল স্ক্যানার স্থাপন