এসএমই হটলাইন চালুর দাবি উদ্যোক্তাদের
১১ মার্চ ২০২০ ০৬:২৪
ঢাকা: এসএমই খাতের তথ্যপ্রাপ্তি ও বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের এসএমই হটলাইন চালুর দাবি জানিয়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তারা। একই সঙ্গে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সহজে ঋণ প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণের দাবিও জানিয়েছেন তারা। আধুনিক বাজার ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তাদের এগিয়ে নিতে পারলে সহজে এসডিজি বাস্তবায়ন করাও সম্ভব বলে মত দিয়েছে উদ্যোক্তারা।
মঙ্গলবার (১০ মার্চ) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জান্তিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জনে এসএমই খাতের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের আলোচনায় এসব কথা উঠে আসে। নয়দিনের চলমান ৮ম জাতীয় এসএমই পণ্য মেলা উপলক্ষ্যে এই সেমিনারের আয়োজন করে শিল্প মন্ত্রণালয় ও এসএমই ফাউন্ডেশন।
৪ মার্চ শুরু হওয়া এই মেলা ১২ মার্চ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে ৭ মার্চ মেলা বন্ধ থাকায় তা চলবে ১৩ মার্চ পর্যন্ত।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মূখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি বাস্তবায়ন) জুয়েনা আজিজ বলেন, এসডিজি ও এসএমই সমার্থক। এসএমই খাতের উন্নয়ন হলে সহজেই এসডিজি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। দেশের বিভিন্ন খাতকে এগিয়ে নিতে সরকার খাত ভিত্তিক ঋণ দিচ্ছে। তবে এসব ঋণ অনেক সময় কাজে লাগছে না। সরকার এখন সমন্বিত ঋণ নীতিমালা করেছে, উদ্যোক্তাদের জন্য এর আওতায় ঋণ প্রাপ্তি সহজ হবে। এসএমই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে উদ্যোক্তাদের এ নীতিমাল সম্পর্কে জানাতে হবে। এসএমই উদ্যোক্তাদের পণ্য বিক্রির জন্য পূর্বাচলে স্থায়ী নির্মাণ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ রয়েছে। সবাই দাবি করলে তা বাস্তবায়ন হবে।
উদ্যোক্তাদের এক দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এসএমই ফাউন্ডেশনের পক্ষ খেকেই হটলাইন করে দেওয়া হবে। সেজন্য এসডিজি বাস্তবায়ন পর্যন্ত অপক্ষো করতে হবে না।’
এসএমই ফাউন্ডেশনের বোর্ড সদস্য ইসমত জেরিন খান বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের সবচেয়ে বড় বাধা তথ্য প্রাপ্তি। তারা তথ্য প্রাপ্তির অভাবে নিজ উৎপাদিত পণ্য ঠিকভাবে সরবরাহ করতে পারেনা। সঠিক যায়গায় মার্কেটিং করতে পারেনা। অথচ তাদের পণ্য কিনে নিয়ে অন্যরা বিদেশে রফতানি করে। নারী উদ্যোক্তাদের মার্কেটিং চ্যানেলে নিয়ে আসতে হবে। বর্তমানে সমুদ্রের পাড় ঘেষে কুয়াকাটা অঞ্চলে নারী উদ্যোক্তারা নানা ধরনের ব্যবসা শুরু করেছেন। তারা ঝিনুক ও সামুদ্রিক প্রাণী নিয়ে ব্যবসা করছে। সেখানে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের জন্য এসএমই হটলাইন করতে হবে, যেখানে তারা তাদের বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে জানাতে পারবে এবং তথ্য প্রাপ্তির মাধ্যমে নানা ধরনের সেবা পাবেন। যে কোন সমস্যায় যেন তারা সেখানে কল করতে পারেন। অর্থায়নের আরও সুযোগ দেওয়া হলে নারীরা পিছিয়ে থাকবে না, একইসঙ্গে সহজে বাস্তবায়িত হবে এসডিজিও।
আলোচকরা বলেন, দেশের মোট কর্মসংস্থানের ৭০-৮০ ভাগ এসএমই খাতে। তাই কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচনের মত লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়নে জোর দিতে এসএমই খাতের উন্নয়নের দিকে।
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এসএমই ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক মো. সিরাজুল হায়দার। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সহযোগী ড. আমজাদ হোসেন। এসএমই ফাইন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য রাখেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সালাহউদ্দিন মাহমুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের যুগ্মসচিব মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা এতে বক্তব্য রাখেন।
এদিকে, সকালে মেলায় অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের মাধ্যমে এসএমই পণ্যের বিক্রয় প্রসার বিষয়ে এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের পণ্যের মানোন্নয়নে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান গোলাম মোঃ হাসিবুল আলম। সেমিনারে মূল প্রবন্ধে বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির বলেন, দেশে বর্তমানে ৭৮ লাখ ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে ই-কমার্স সাইট আছে মাত্র ৭০০টি এবং এবং ই-কর্মাস পেজ আছে প্রায় ৫ হাজার।
অনুষ্ঠানে আলোচকরা বলেন, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের যথাযথ ব্যবহার করে নিজেদের পণ্যের প্রচার, প্রসার ও বাজারজাতকরণে এগিয়ে যেতে পারেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা। এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে ওই সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. রাশেদুল ইসলাম এবং এসএমই ফাউন্ডেশনের পরিচালক পর্ষদের সদস্য আবুল কালাম ভূঁইয়া।