Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘করোনা নিয়ে সরকার চরম উদাসীনতা ও খামখেয়ালিপনা প্রদর্শন করছে’


১১ মার্চ ২০২০ ১৪:৪৩

ঢাকা: করোনাভাইরাস নিয়ে সরকার চরম উদাসীনতা ও খামখেয়ালিপনা প্রদর্শন করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। একইসঙ্গে আদালতের রায় দিয়ে স্লোগান হয় না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বুধবার (১১ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, ‘করোনাভাইরাস নিয়ে দেশজুড়ে আতংকজনক পরিস্থিতি তৈরি হলেও সরকার এ নিয়ে রীতিমত চরম উদাসীনতা ও খামখেয়ালীপনা প্রদর্শন করছে। তাদের সমস্ত মনোযোগ ও ব্যস্ততা মুজিববর্ষ পালন নিয়ে। দেশের সীমান্ত ও স্থল বন্দর অরক্ষিত, বিমান বন্দরগুলোতে স্ক্যানার মেশিন নেই, যা দুএকটি ছিল তাও আবার গতকাল নষ্ট হয়ে গেছে। মেগা প্রকল্পের নামে দেশে হরিলুট চললেও মানুষের জীবন বাঁচাতে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সরকার।

তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস মোকাবিলায় কোনো কার্যকর প্রস্তুতিই নেই। ১৩টি হটলাইন আর কয়েকটি হাসপাতালে জোড়াতালির প্রস্তুতি চলছে। দেশের অধিকাংশ সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ বেড নেই। ভেন্টিলেটর মেশিনও নেই। চিকিৎসক ও নার্সদের নিরাপত্তা বা সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় মেডিক্যাল মাস্ক ও ইউনিফর্ম নেই। ভাইরাস প্রতিরোধী পোশাক (পিপিই) নেই। মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার যথেষ্ট পরিমাণে আমদানি বা উৎপাদনের কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় সেগুলো কয়েক গুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তিনটি থার্মাল স্ক্যানার মেশিন বসানো হলেও তা নষ্ট হয়ে গেছে।’

করোনাভাইরাস নিয়ে কেউ দেশে প্রবেশ করলে শনাক্তের কোনো যথাযথ ব্যবস্থা নেই উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘বিমান বন্দরে টাকার বিনিময়ে করোনাভাইরাস মুক্ত সার্টিফিকেট বিক্রি করছে এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা। যে কারণে বিমানবন্দরে ইতালি থেকে করোনাভাইরাস নিয়ে যারা দেশে এসেছেন তাদের রোগ শনাক্ত হয়নি। দেশে ফেরার চার দিন পর অবস্থার অবনতি হওয়ায় তারা নিজেরাই চিকিৎসকের কাছে গেলে সরকার তাদের হাসপাতালে স্থানান্তর করেছে। কিন্তু ইতোমধ্যে তাদের একজনের স্ত্রী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘নভেল করোনাভাইরাস সংক্রান্ত তথ্য ও সেবা পেতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ১৩টি হটলাইন ফোন নম্বর চালু করেছে। তবে এই নম্বরগুলোতে ফোন করে কাউকে পাওয়া য়ায় না। রিং হতে থাকলেও কেউ রিসিভ করে না। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সন্দেহ, লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দিলে সরাসরি জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে সরকার। বরং বাড়িতে থেকে হটলাইন নম্বরে ফোন করলে তারাই বাড়িতে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করবে বলে জানানো হয়েছে। বাস্তবে এটা ভাঁওতাবাজীতে পরিণত হয়েছে। বিনা ভোটের মিডনাইট সরকারের এই ভয়ংকর উদাসীনতার ফলে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়লে দেশে এক মহাবিপর্যয় দেখা দিবে- তা হবে করুণতম ও মর্মস্পর্শী। এ ব্যাপারে সরকারের ব্যর্থতাকে জনগণ কখনো ক্ষমা করবে না।’

করোনাভাইরাস নিয়ে বিএনপি রাজনীতি করছে ক্ষমতাসীনদের এমন বক্তব্যের জবাবে রিজভী বলেন, ‘করোনাভাইরাস নিয়ে আওয়ামী লীগ রাজনীতি করছে। আমাদের কোনো অথরিটি নেই হাসপাতালে নির্দেশ দেওয়া সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া। আমরা জনগণকে সচেতন করার চেষ্টা করছি। করণীয় কী কী সম্পর্কে আমরা লিফলেট করছি। ব্যাপকভাবে আমরা সারাদেশে বিতরণ করব। সচেতন করার জন্য যে ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া দরকার সেগুলো আমরা করছি।’

এছাড়া জয় বাংলা স্লোগান নিয়ে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছেন তার প্রেক্ষিতে রিজভী বলেন, ‘জয় বাংলা, মানে বাংলার জয়। যখন বাংলা পরাধীন ছিল তখন জয়ের প্রশ্ন আসছে। ১৯৭১ সালে মানুষ জয় বাংলা শ্লোগান দিয়েছে। এরপর তো স্বাধীন হয়ে গেছে দেশ। এখন হচ্ছে টিকে থাকার ব্যাপার। চারিদিকে যারা বাংলাদেশকে ছোট করে রাখতে চায় খাটো করে রাখতে চায় তাদের আধিপত্য বজায় রাখতে চায়, এই সমস্ত জায়গা থেকে এখন বাংলাদেশকে টিকে থাকা। এই টিকে থাকার জন্য স্লোগান অপরিহার্য।’

তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানিরা গণতান্ত্রিক অধিকার দেয়নি বলেই তো সেটা যুদ্ধের দিকে টার্ন নিলো। সুতরাং আমি কোন স্লোগান দেবো আদালত কেন পরামর্শ দিতে যাবে। যখন স্বায়ত্তশাসন বা স্বাধীনতা সংগ্রামের আন্দোলন চলছে তখন পাকিস্তানীরা যদি মনে করত যে না স্বাধীনতা সংগ্রাম ঠিক না তারা কি তখন আদালতের রায় দিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রাম ঠেকাতে পারত? আদালতের রায় দিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধ ঠেকাতে পারত না।’

রিজভী বলেন, ‘ইতিহাস নির্মাণ হয় জনগণের ইচ্ছা এবং পক্ষের নেতৃত্বের মাধ্যমে এখানে আদালতের রায়ের কোনো ভূমিকা নেই। কারণ মানুষ সচেতন হয়ে তার আশা-আকাঙ্ক্ষা অধিকার সম্পর্কে যখন সচেতন হয় তখন সংগ্রাম করে। আদালতের রায়ের ওপর কি ফরাসি বিপ্লব হয়েছে? কিন্তু মানুষ ফুঁসে উঠেছে কায়েমী স্বার্থবাদী যারা তখন দেশ শাসন করছেন তারা, তাদের পক্ষেই তো আদালত হয়। এর বাইরে তো যেতে পারে না।’

আদালতের রায়ের ভিত্তিতে কোনো স্বাধীনতা যুদ্ধে হয়নি মন্তব্য করে রিজভী বলেন, ‘কখনো কোনো রেভুলেশন হয়নি। সব হয়েছে জনগণের ইচ্ছায়। জনগণ যখন বঞ্চিত হয়েছে। জনগণ যখন পদদলিত হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে জনগণ। তখনই একটা পরিবর্তন হয়েছে। সেটা ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হয়েছে। সুতরাং কে কোন স্লোগান দেবে কোন রাজনৈতিক দল কিভাবে স্লোগান দেবে? কি দেবে? সেটা আদালতের রায় দিয়ে হয় না।’

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে বক্তব্য দিয়েছেন তারও সমালোচনা করেন রিজভী।

এ বিষয়ে রিজভী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবিরাম স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সম্পর্কে কুৎসা ও মিথ্যাচার করে চলছেন। জিয়াউর রহমান সম্পর্কে অবমাননাকর উক্তি করে তিনি উল্লসিত বোধ করেন।’

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, প্রচার প্রকাশনা সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

করনাভাইরাস টপ নিউজ রিজভী


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর