ডেঙ্গু রোধে এখনই সতর্ক হতে বললেন হাইকোর্ট
১১ মার্চ ২০২০ ১৫:৫৫
ঢাকা: ডেঙ্গু প্রতিরোধে এখনই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে সতর্ক হতে বলেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেন, ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। এই ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকা শহরে যদি কোনোভাবে করোনার সাথে ডেঙ্গুর প্রার্দুভাব শুরু হয়। তখন মানুষের শেষ জায়গাটিও থাকবে না। সুতরাং আপনারা সতর্ক হোন, মশা নিধনে মনোযোগী হন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে যা যা দরকার তাই করেন।
এ সংক্রান্ত মামলার শুনানি নিয়ে বুধবার (১১ মার্চ) বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ সব কথা বলেন।
আবেদনের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। দক্ষিন সিটি করপোরেশনের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা ও উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার তৌফিক ইনাম টিপু, বিএসটিআই এর পক্ষে ছিলেন সরকার এম আর হাসান মামুন।
পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার বলেন, ঢাকায় বায়ু দুষণ মামলায় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন আলাদাভাবে তাদের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করে। আদালত সেটি পর্যালোচনা করে সিটি করপোরেশনের পানি ছিটানো পদ্ধতিতে সন্তুষ্ট হয়নি। গত বছর মৌসুম আসার আগেই দুই সিটির সিও’কে ডেকে সতর্ক করা হয়েছিল যাতে মশা নিধন সঠিকভাবে হয়। ডেঙ্গুর প্রার্দুভাব থেকে মানুষ রক্ষা পাওয়া যায়। কিন্তু সেটি হয়নি। গত বছর ডেঙ্গু নিয়ে অস্থির অবস্থা জাতি দেখেছে। সেটিই আজকে দুই সিটিকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন আদালত।
আদালত দুই সিটি করপোরেশনের আইনজীবীদের বলেন, এরইমধ্যেই বাংলাদেশ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। এই ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকা শহরে যদি কোনোভাবে করোনার সাথে ডেঙ্গুর প্রার্দুভাব শুরু হয়। তখন কিন্তু মানুষের শেষ জায়গাটিও থাকবে না। সুতরাং আপনারা সতর্ক হোন, মশা নিধনে মনোযোগী হোন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে যা যা করার দরকার তাই করেন। এ কারণে জরুরী ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে বলেন আদালত।
তিনি বলেন, এর আগে আদালত বায়ু দুষণ মুক্ত করতে ৯ দফা নির্দেশনা দিয়েছিলেন। ওই নির্দেশনার পর পরিবেশ অধিদফতর ঢাকার চারপাশে পাঁচটি জেলায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে অবৈধ ইট ভাটা বন্ধ করে। এছাড়া, টায়ার জালিয়ে তেল উৎপাদনের যে কাজ শুরু হয়েছে, মোবাইলকোর্টের মাধ্যমে তার অধিকাংশই বন্ধ করা হয়েছে বলেও আদালতকে জানানো হয়।
এর আগে গত ২৬ নভেম্বর রাজধানী ঢাকাকে ধুলামুক্ত করতে সকল রাস্তা, ফুটপাত ও ফ্লাইওভারে জমে থাকা ধুলাবালি, ময়লা অপসারণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ধুলা দূর করতে দিনে কমপক্ষে দুইবার পানি ছিটাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
এছাড়াও ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুর ও মানিকগঞ্জ জেলায় পরিবেশ আইন ভঙ্গ করে গড়ে ওঠা ইটভাটা ১৫ দিনের মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উচ্চ পর্যায়ের কমিটিতে পরিবেশ সচিব, দুই সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ওয়াসা, ডেসকোসহ সকল পরিসেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠানের একজন করে প্রতিনিধি, প্রয়োজন হলে একজন বিশেষজ্ঞ রাখতে বলা হয়েছে। এই কমিটিকে ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়।
মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) করা এক আবেদনের ভিত্তিতে এ আদেশ দেন।
ঢাকার বায়ু দুষণ নিয়ে গত বছরের ২১ জানুয়ারি পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে হাইকোর্টে আবেদন করে এইচআরপিবি। এই রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় বায়ুদূষণ রোধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, ঢাকার যেসব এলাকায় উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ চলছে সেসব এলাকা (কাজের স্থান) ঘেরাও করে কাজ করা এবং উন্নয়ন ও সংস্কার কাজের কারণে ধুলাবালি প্রবণ এলাকায় দিনে দুইবার পানি ছিটাতে ঢাকার দুই সিটি মেয়র ও নির্বাহীদের নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে রুল জারি করেন। এই রুল এখন বিচারাধীন।
এরই ধারাবাহিকতায় বায়ু দূষণ রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে গত ২৪ নভেম্বর সম্পূরক আবেদন করা হয়।