মোবাইল কোর্টে শিশুদের সাজা অবৈধ: হাইকোর্ট
১১ মার্চ ২০২০ ১৭:২৮
ঢাকা: ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শিশুদের সাজা দেওয়া অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ১২১ শিশুকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের দেওয়া সাজা অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেছেন আদালত।
বুধবার (১১ মার্চ) বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদারের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী আবদুল হালিম ও ইশরাত হাসান। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
এর আগে, গত ৩১ অক্টোবর ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দণ্ডিত হয়ে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে থাকা ১২ বছরের কম বয়সীদের মুক্তির নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে শিশু আদালত ব্যতিত অন্যান্য আদালতে অধীনে সাজাপ্রাপ্ত ১২ বছর বয়সী থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত বয়সী শিশুদের ছয় মাসের জামিন দেন হাইকোর্ট।
‘আইনে মানা, তবু ১২১ শিশুর দণ্ড’ শিরোনামে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ এ আদেশ দেন।
হাইকোর্ট তার আদেশে, ভ্রাম্যমাণ আদালত কর্তৃক শিশুদের দণ্ডপ্রদানকে অসাংবিধানিক, অবৈধ এবং বাতিল বলে ঘোষণা করেন। এছাড়াও শিশুদের মধ্যে যাদেরকে ভ্রাম্যমাণ আদালত দণ্ড দিয়েছে তাদেরকে দ্রুত শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র বা হাজত থেকে ছেড়ে দিতে নির্দেশ দেন।
এ ছাড়াও ৭ কার্যদিবসের মধ্যে ওই ১২১ শিশুকে দণ্ডপ্রদানকারী সংশ্লিষ্ট র্যাব কর্মকর্তাদের যারা অবৈধভাবে দণ্ড দিয়েছেন তাদেরকে এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এই দণ্ডপ্রাপ্ত শিশুদের মামলার যাবতীয় নথি আলাদা করে দাখিল করতে বলেন আদালত।
ভ্রাম্যমাণ আদালত কর্তৃক পরিচালিত শিশুদের দণ্ডপ্রদানের বিষয়ে শিশু আইন এবং দণ্ডবিধির বিধি বহির্ভূত হওয়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের দণ্ড কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়েও আদালত রুল জারি করেন। সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের এ সব রুলের জবাব দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের পক্ষে প্রতিবেদনটি আদালতের নজরে আনেন ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম। ওই প্রতিবেদনে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত কর্তৃক ১২১জন শিশুকে সাজা দিয়ে তাদের শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর তথ্য উল্লেখ করা হয়।
রায়ের পর ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম বলেন, ১২১ শিশুকে দণ্ড দেওয়া নিয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট সে রুলের শুনানি শেষে রায় হয়েছে। এই ১২১ শিশুর দণ্ড সম্পূর্ণরুপে অবৈধ বলে রায় দিয়েছেন। আদালত আরও বলেছেন-কোনো শিশুদেরকে মোবাইল কোর্ট কোনো দণ্ড দিতে পারবে না। কারণ মোবাইল কোর্ট কোনো শিশুকে দণ্ড দিলে সেই দণ্ড সংবিধানের ৩০ এবং ৩৫ অনুচ্ছেদে মৌলিক ও মানবাধিকার লঙ্ঘিত হবে। ১২১ শিশুকে দণ্ড দেওয়ায় মৌলিক ও মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘ভ্রাম্যমাণ আদালতের কোনো শিশুকে দণ্ড দেওয়ার ক্ষমতা কোনো আইনে নেই। একমাত্র শিশু আইনে শিশু আদালত শিশুদের দণ্ড দিতে পারবে। অন্য কোনো আদালত কোনো অবস্থাতেই তাদের দণ্ড দিতে পারবে না।’
ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম আরও বলেন, আদালত বলেছেন, এই মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে দেশে দুই ধরনের বিচার ব্যবস্থা চালু হয়েছে। স্বাভাবিক বিচার ব্যবস্থা এবং মোবাইল কোর্ট বিচার ব্যবস্থা। এই মোবাইল কোর্ট বিচার ব্যবস্থা স্বাভাবিক বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে একটি সমান্তরাল বিচার ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করছে। যা শুধু অসাংবিধানিকই নয় ,মৌলিক অধিকারের পরিপন্থীই নয়, গণতান্ত্রিক ন্যায়নীতির পরীপন্থী, মানবাধিকারের পরিপন্থী।’