Wednesday 11 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তেলের মূল্যযুদ্ধে অর্থনৈতিক মন্দার ঝুঁকি


১১ মার্চ ২০২০ ২২:০০

তিন দিনের মাথায় জ্বালানি তেলের দাম ফের একবার কমলো। বুধবার (১১ মার্চ) বিশ্ববাজারে ব্রেন্ট ক্রুড ওয়েল বিক্রি হচ্ছে প্রতি ব্যারেল ৩৬ দশমিক ১৩ ডলারে। এছাড়া ডব্লুটিআই ক্রুড বিক্রি হচ্ছে ৩৩ দশমিক ৩ ডলারে।

এর আগে সোমবার সৌদি আর রাশিয়ার তেল যুদ্ধের জেরে চলতি বছরের শুরুর তুলনায় ৩১ শতাংশেরও বেশি পতন হয় এ পণ্যের দাম। এর দুই দিন পর ফের একবার অন্তত ৩ শতাংশ কমলো।

বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমার ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন, এয়ারলাইন্সের মত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যয় সাশ্রয় হলেও সামগ্রিক বিশ্ব অর্থনীতি ঝুঁকির মুখে রয়েছে বলে ধারণা করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

সৌদি-রাশিয়া মূল্যযুদ্ধ

সৌদি আরব ও রাশিয়া বিশ্বে সবচেয়ে বেশি তেল রফতানিকারক দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। এ দুটি দেশ দৈনিক আড়াই কোটি ব্যারেলেরও বেশি তেল উৎপাদন করে থাকে। বিশ্ববাজারে তেলের দাম যখনই হ্রাস পায় তখন দেশ দুটি উৎপাদন কমিয়ে পতন ঠেকায়। বেশ কয়েক বছর থেকেই সৌদির সঙ্গে তেলের বাজারে মিত্র হিসেবে পরিচিত রাশিয়া। তবে এবার এর ব্যতিক্রম ঘটলো।

শুক্রবার অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর সংগঠন (ওপেক)-এর সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে রাশিয়া। করোনাভাইরাসের কারণে ক্রমশ নিম্নমুখী বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে তেল উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় ওপেক। সৌদি আরব তেল উৎপাদক দেশগুলোকে দৈনিক অন্তত ১৫ লাখ ব্যারেল উৎপাদন কমানোর পরামর্শ দেয়। তবে এতে সম্মত হয়নি রাশিয়া। ওই দিন রাশিয়ার এমন সিদ্ধান্তের কারণে তেলের দাম এক দফা পড়ে যায়।

পরে রাশিয়া তেল উৎপাদন না কমিয়ে বরং বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। রাশিয়ার এ সিদ্ধান্তের পর দেশটিকে চাপে রেখে উৎপাদন কমাতে বাধ্য করতে সৌদি আরবও উৎপাদন বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি আরামকো’কে তেল উৎপাদন বাড়ানোর নির্দেশ দেন দেশটির জ্বালানি মন্ত্রী। আগামী ১ এপ্রিল থেকে আরামকো দৈনিক ১ কোটি ৩০ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন করবে বলে জানায়। যা এ প্রতিষ্ঠানটির জন্য উৎপাদনের নতুন রেকর্ড হতে যাচ্ছে। একই সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতও উৎপাদন বৃদ্ধি করার ঘোষণা দেয়। ফলে সোমবার একদিনেই বিশ্ববাজারে ২০ শতাংশ পড়ে যায় তেলের দাম।

উল্লেখ্য, সৌদি আরব বিশ্বের তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংগঠন- ওপেক এর নেতৃত্ব দিয়ে থাকে। তবে রাশিয়া এ সংগঠনটির সদস্য নয়। ওপেকের মিত্র জোট ওপেক প্লাসের নেতৃত্ব রাশিয়ার হাতে।

মূল্যযুদ্ধে মন্দার আশঙ্কা

দুই দেশের মূল্যযুদ্ধের প্রভাবে তেলের দামের এ পতনের ফলে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। যদিও তেলের দাম কমলে ভোক্তা দেশগুলো লাভবান হয় কিন্তু ক্ষতির মুখে পড়ে বিক্রেতা দেশগুলো। বিশ্বের প্রধান অর্থনীতির কয়েকটি দেশ তেলের প্রধান বিক্রেতা হওয়ার ফলে সেই দেশগুলোর অর্থনৈতিক মন্দাভাবের প্রভাব শেষ পর্যন্ত গোটা বিশ্বেই পড়ে।  জ্বালানি তেলের দামের এমন পতনের ফলে আফ্রিকা ও এশিয়ার বেশ কয়েকটি তেল নির্ভর দেশের অর্থনীতি বড়সড় ধাক্কা খেতে পারে।

এবারে মূল্যযুদ্ধের ফলে বেশি বিপাকে পড়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া রাশিয়া ও সৌদি আরব নিজেও ক্ষতির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এসব দেশের নিম্নমুখী অর্থনীতির দায় বইতে হবে পুরো বিশ্বকে।

মার্কিন বিনিয়োগ ব্যাংক মরগান স্ট্যানলি এক প্রতিবেদনে জানায়, যদি তেলের দাম এভাবেই নিম্নমুখী থাকে তবে যুক্তরাষ্ট্রে মোট দেশজ উৎপাদন এ বছরের প্রথম প্রান্তিকে ০.১৫ থেকে ০ .৩৫ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে। মরগান স্ট্যানলি জানায়, জ্বালানির দাম কম হওয়ায় ভোক্তারা কম খরচ করবেন। এতে অর্থনীতি চাপে পড়বে। করোনাভাইরাসের প্রভাবে ভোগ কমে যাওয়ার পর তেলের দাম কমার প্রবণতায় বড় অর্থনীতিগুলো যে ধাক্কা খাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে এর জেরে সারা বিশ্বেই মন্দার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

টপ নিউজ সৌদি-রাশিয়া মূল্যযুদ্ধ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর